ডা. জাকির নায়েকের পরিচয় // Monoyara Tv

ডা. জাকির নায়েকের পরিচয়ঃ

ডা. জাকির নায়েক ভারতের বিখ্যাত শহর (মুম্বাই) এ ১৯৬৫ সালের ১৮ অক্টোবর জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি এ শহরে খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন। অতঃপর মুম্বাই এ হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত কৃষ্ণ চন্দ্র চলের ‘রাম কলেজ’ থেকে এইচ, এস,সি, পাশ করেন। তারপর মুম্বাই এর ‘ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ’ থেকে এম,বি,বি,এস, ডিগ্রী অর্জন করে ডাক্তার হন।

জীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত তিনি কোনো দ্বীনী মকতব/মাদরাসা বা খানকায় লেখা-পড়া করেননি। যার ফলে দ্বীনী বিষয়ে সরাসরি কুরআন হাদীস বুঝার বা তা থেকে উপকৃত হওয়ার যোগ্যতা তিনি লাভ করতে পারেননি।

ঘটনাচক্রে ১৯৯৪ সালে মুম্বাই শহরে দ্বীনের এক দাঈ ডা. আহমাদ দীদাতের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়। সে তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ডাক্তারী পেশা ছেড়ে দিয়ে দ্বীনী বই-পত্র চর্চার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। তবে তিনি তার দ্বীন চর্চা কোনো যোগ্য আলেমের বাতলানো পদ্ধতিতে করেননি। বরং নিজে যেভাবে ভালো মনে করতেন, সে ভাবে করেছেন। (সূত্রঃ হাকীকতে জাকির নায়েক, পৃ. ৩০-৩২সায়্যিদ খালিক সাজিদ বুখারী কৃত) ।

হক্কানী আলেম-উলামাদের সুহবতে গিয়ে দ্বীনের সহীহ জ্ঞান লাভ না করার ফলে দ্বীনের প্রচারের ক্ষেত্রে তার দ্বারা লাভের চেয়ে ক্ষতিই ছড়াচ্ছে বেশি।

নিম্নে দ্বীন সম্পর্কে তার কিছু ভ্রান্তি তুলে ধরা হলোঃ
আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে ভ্রান্তিঃ
==================
ডা. সাহেব বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলাকে ব্রহ্ম ও বিষ্ণু প্রভৃতি নামে ডাকা যাবে। (লেকচার সমগ্র, ১/২৬৫ পিস পাবলিকেশন্স, ঢাকা থেকে প্রকাশিত) ।

ইসলাম বলেঃ আল্লাহ তা‘আলাকে তার সত্তাগত নাম হিসেবে ‘আল্লাহ’ নামে ডাকতে হবে। আর যদি তাকে তার গুণগত নামে ডাকা হয়, তাহলে তিনি নিজের জন্য যে সকল নাম নির্ধারণ করেছেন, সে নামেই তাকে ডাকতে হবে। (যেমন রাহমান,রাহিম,গাফ্ফার,সাত্তার, রায্যাক ইত্যাদি।) (সূরা বনী ইসরাঈল-১১০, সূরা ত্বহা-৮, সূরা আ’রাফ-১৮০,সূরা হাশর-২৪,বুখারী-২৭৩৬) ।

নবী সম্পর্কে ভ্রান্তিঃ
===========
ডা. সাহেব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হায়াতুন্নবী হওয়ার আক্বীদাকে অস্বীকার করেন। (লেকচার সমগ্রক চার সমগ্র-৫/৯৫)
অথচ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং অন্যান্য নবীগণ আ. ইন্তিকালের পর কবরের মধ্যে জীবিত অবস্থায় আছেন। যদিও সেটা হুবহু দুনিয়ার মতো নয়। (মুসলিম-২/১৭৮, মুসনাদে আহমাদ-৩/১৫৬) ।

সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে ভ্রান্ত বক্তব্যঃ
=======================
ডা, সাহেব বলেনঃ ‘পরবর্তীতে যখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তিকাল করলেন, আর লোকজন তখন তার কথাগুলোর উদ্বৃতি দিতে শুরু করলো এবং কেউ কেউ এমন কথাও বলতে শুরু করলো, যা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হয়তো বলেননি। (লেকচার ৫/৭৬)
অথচ ইসলাম বলে, সাহাবারা হলেন সত্যের মাপকাঠি। (সূরা বাকারা-৮) এবং হাদীসে তাদের সকলকে ন্যায় পরায়ণ বলা হয়েছে।

কুরআন সম্পর্কে নাপাক কথাঃ
===================
ডা. সাহেব বলেনঃ কুরআন স্পর্শ করতে উযূর প্রয়োজন নেই। বিনা উযূতে কুরআন স্পর্শ করতে পারবে এবং সূরা ওয়াকিয়ার ৮৯ নং আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা দেন। (লেকচার -২/৬২৬)
অথচ বিনা উযূতে কুরআন স্পর্শ করা যাবে না। এ ব্যাপারে উল্লেখিত আয়াত ছাড়াও হাদীসে স্পষ্ট বর্ণনা আছে যে, একমাত্র পবিত্র ব্যক্তি কুরআন স্পর্শ করতে পারবে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ১/১৪৩) ছোট বা বড় নাপাক ওয়ালা ব্যক্তি কুরআন স্পর্শ করতে পারবে না।

হুর সম্পর্কে মন্তব্যঃ
============

ডা. সাহেব বলেনঃ হুর পুরুষ এবং মহিলা উভয় প্রকারের হবে। পুরুষ হুর জান্নাতী নারীদেরকে পাবে, আর মহিলা হুর জান্নাতী পুরুষদেরকে পাবে। (লেকচার সমগ্র -১/৩৫৯)

অথচ কুরআন হাদীসের আলোচনা দ্বারা বুঝা যায় যে, হুর দ্বারা নারীসঙ্গিনী উদ্দেশ্য, পুরুষ হুর বলতে কিছু নেই। (সূরা রাহমান-৭২, তাফসীরে জালালাইন-পৃ.৪৪৬, তাফসীরে কুরতুবী-১১/৬১৪, তিরমিযী-২/৮০)


ডা. জাকির নায়েক কর্তৃক প্রদত্ত কতিপয় ভুল মাসায়েলঃ
==================================

(১) ডা. সাহেব বলেনঃ একসঙ্গে তিন তালাক দিলে, তাতে এক তালাক পতিত হবে।
অথচ কুরআন শরীফ ও বুখারী শরীফসহ অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, কেউ তার স্ত্রীকে একসঙ্গে তিন তালাক দিলে (যদিও তা গুনাহের কাজ) তিন তালাক পতিত হবে। এবং হালালার পর পুনরায় বিবাহ ব্যতীত তাদের দেখা-সাক্ষাত, মেলা-মেশা সব কিছু যিনা হিসেবে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে সমস্ত ফুকাহায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে কেরাম একমত। (সূরা বাকারা-আয়াত নং, আবু দাউদ শরীফ-১/২৯৮) ।

(২) ডা. সাহেব বলেনঃ ফযরের আযান শুরু হলেও সাহরী করার ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় রয়েছে, হাতে যে খাবার রয়েছে, তা শেষ করার সুযোগ রয়েছে। হতে পারে তা এক গ্লাস পানি বা পাত্রের বাকী অল্প খাবার। (লেকচার সমগ্র ৩/৩২৪)

ডা. সাহেবের উপরোক্ত মাসায়েল কুরআন-হাদীসের সাথে একেবারেই সাংঘর্ষিক। কারণ, কুরআন ও হাদীস দ্বারা বুঝা যায় সাহরী খাওয়া সুবহে সাদিকের পূর্বেই শেষ হতে হবে।
সুবহে সাদিকের পর সামান্য কিছু খেলেও রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। (সুরা বাকারা-৮৭) ।

(৩) ডা. সাহেব বলেনঃ মহিলাদের চেহারা ঢেকে রাখা আবশ্যিক নয়। তাদের মুখে নেকাব দেওয়া ফরয নয়। (লেকচার সমগ্রঃ ১/১৪.১৭৫.৩৬৬.৪৪৮, ৫/১৬৯) ।

অথচ ইসলামের হুকুম হলো, নিকাব বা হিজাব দ্বারা তাদের চেহারা ঢেকে রাখতে হবে। (সূরা আহযাব-৫৩/৫৯)

(৪) ডা. সাহেব বলেনঃ ‘পোশাক যদি হারাম না হয়, সব শর্ত পূরণ করে, তাহলে আপনি কোর্তা, প্যান্ট, শার্ট যেটা পরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, সেটা পরতে পারেন।’ (লেক. -২/৫৫০)

ডা. সাহেবের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া। কেননা, ইসলামে বাহ্যিক লেবাস-পোশাকের গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পোশাকের ক্ষেত্রে কাফিরদের বেশ-ভূষা গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তাদের (বিধর্মীদের) সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে, সে তাদের দলভুক্ত। (মুসনাদে আহমাদ- হা.নং১১৯৯)
আর একথা সকলের নিকট স্পষ্ট যে, পোশাকের ক্ষেত্রে প্যান্ট-শার্ট বিধর্মীদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

(৫) ডা. সাহেব বলেনঃ জুম‘আর দিনে আগে ঈদের নামায আদায় করলে পরে জুম‘আর নামায আদায় করা আর না করা ঐচ্ছিক ব্যাপার। (লেকচার সমগ্র ৫/৪৭৬)
অথচ ইসলামের বিধান হল, পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও জুম‘আর নামায অপরিহার্য ফরয হুকুম। অন্য কোনো আমলের দ্বারা এগুলোর হুকুম শিথিল হবে না। তাই জুম‘আর দিন ঈদ হলে ঈদের নামায পড়লে ও জুম‘আর নামায অবশ্যই পড়তে হবে। (সুনানে দারা কুতনী পৃ. ৩৩৫, নাইলুল আওতার ৩/২২৪)

(৬) ডা. সাহেব বলেনঃ যখন তোমরা সফর করবে, তখন তোমরা দুই ওয়াক্তের নামায একসাথে পড়তে পারো। সফরের সময় কেউ এভাবে সালাত আদায় করলে, আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। (লেক. ২/৪৩)
এক্ষেত্রে তিনি পবিত্র কোরআনের অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। অথচ হানাফী মাযহাবে এ হাদীসের অর্থ, এক ওয়াক্তকে আরেক ওয়াক্তে নিয়ে পড়া নয়। কারণ, তা হারাম ও কবীরা গুনাহ। হাদীসের আসল ব্যাখ্যা হলো, যান বাহন থেকে বারবার উঠা-নামার ঝামেলা এড়াতে ওয়াক্তের শেষের দিকে একবার অবতরণ করে, সেই ওয়াক্তের নামায পড়ে নিবে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে দ্বিতীয় ওয়াক্ত এসে গেলে সেটাও পড়ে নিবে। তাহলে একই অবতরণে দুই ওয়াক্ত নামায পড়া হলেও প্রতিটি তার ওয়াক্তমত পড়া হয়।

(৭) ডা. সাহেব বলেনঃ আমাদেরকে ইসলামী শরীআহ মেনে এরকম সিনেমা বানাতে হবে, যেটা কুরআন হাদীসের বিরুদ্ধে যাবে না। শরীআহ মেনেই বানাবো। শুধু সিনেমাই নয়, আমাদের নাটক বানাতে হবে, ডকুমেন্টারিও বানাতে হবে। (লেকচার সমগ্র, ২/২৩১)
অথচ ইসলামী শরী‘আতে সিনেমা-নাটক সম্পূর্ণরূপে হারাম। কেননা, ছবি ছাড়া এগুলো তৈরী অসম্ভব। আর প্রাণীর ছবির ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, কেয়ামতের দিন ছবি অঙ্কনকারীকে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। (বুখারী শরীফ)

(৮) ডা. সাহেব বলেনঃ মাসিক চলাকালীন নারীগণ নামায, রোযা, কাবাঘর তাওয়াফ এবং ইতিকাফ ছাড়া আর সব ইবাদত করতে পারবে। ঋতুবর্তী নারী রমযানের শেষ দিন যা করতে পারবে তা হলো, ঐ সময়টি সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পারে। এ ছাড়া আর যে কাজ তারা করতে পারে তা হলো, তারা সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ্, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি পড়বে এবং তারা কুরআন তেলাওয়াত করতে পারে। (লেক, ৫/৩৮৯)

অথচ হাদীস শরীফে স্পষ্ট এসেছে, الحائض والجنب لا يقرأ القرأن অর্থাৎ হায়েযা মহিলা এবং নাপাক ব্যাক্তি যেন কুরআনের কোনো অংশ পাঠ না করে । (বুখারী, মুসলিম)
এ কারণে মাযহাব চতুষ্টয়ের মধ্যে এ ব্যাপারে ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, হায়েযা মহিলা বা যার উপর গোসল ফরয তাদের জন্য কুরআন তিলাওয়াত হারাম।

(৯) ডা. সাহেব মাযহাবের ইমামের তাকলীদের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে এ সম্পর্কে তার ভ্রান্ত মত জনগণের সামনে তুলে ধরেন। ইমামে আ’যম আবু হানীফা (রহ.) সহ অনেক ইমাম ও সালাফকে বিষাক্ত শব্দের নিশানা বানিয়েছেন। (লেকচার সমগ্র)

(১০) ডা. সাহেব প্রথমে পরষ্পর বিরোধী কিছু হাদীস এবং আছার তুলে ধরে বলেনঃ সুতরাং তারাবীহ্ যত রাকা‘আত খুশী তত রাকা‘আত আদায় করা যাবে। (লেকচার সমগ্রকচার সমগ্র৫/২৪৭)
অথচ হাদীস শরীফে স্পষ্ট এসেছে, ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, ‘নিশ্চয় নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযানে ২০ রাকা‘আত (তারাবীহ্) এবং বিতর পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২/২৮৬)

আর তারাবীহ্ ২০ রাকা‘আত এ ব্যাপারে মাযহাব চতুষ্টয়ের সকল ইমাম ঐক্যমত পোষণ করেন যে, তারাবীহ্ এর নামায ২০ রাকা‘আতের কম পড়া যাবে না। মালেকী মাযহাবে ৩৬ রাকা‘আত তারাবীহ্। তবে কোনো ইমামই ৮ রাকা‘আত তারাবীহ্ পড়াকে বৈধ বলেননি। তাহলে ডা. সাহেব এর কথা কীভাবে সহীহ হতে পারে?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাহাবী একটি বৈশিষ্ট্য, সাহাবী একটি চরিত্র, সাহাবী একটি আদর্শ, সাহাবী মানে উৎসর্গ, সাহাবী মানে সর্বোচ্চ বিশ্বস্ত! লেখক- আল্লামা ইমাম হায়াত এর দিশার আলোকে- আল্লামা মুফতি রেজাউল মোস্তফা কায়সার

প্রিয়নবীর সম্পর্কের চেয়ে জরুরী গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবান অপরিহার্য্য অন্য কোন সম্পর্কই নয় -"আল্লামা ইমাম হায়াত আলাইহি রাহমা"

(দলিল) নবী রাসূল আলাইহিস সাল্লাম গন সহ আল্লাহর ওলী গন চিরন্তন জীবিত ।