যারা জানতে চান ইমাম হায়াত কেন ইমাম - মোকাররম হোসাইয়ন

যারা জানতে চান ইমাম হায়াত কেন ইমাম
==============================


ইমাম হায়াত কেন ইমাম সেটা বুঝার আগে সুন্নীয়ত বুঝতে হবে। সুন্নীয়ত বুঝলে ইমামত বুঝা সম্ভব। যিনি সুন্নীয়ত বুঝেন না তিনি ইমামত তো দূরের কথা আলেমও নন। সুন্নীয়ত বুঝা বলতে আকিদা, আদর্শ, হক বাতেল, আধ্যাত্মিক রাজনৈতিক দিক সবকিছুকে নিয়ে বুঝায়। যিনি হক বাতেল চিনেননা, বুঝেন না, সুন্নীয়তের পূর্ণাঙ্গতা বুঝেন না, আধ্যাত্মিক দিক রাজনৈতিক দিক বুঝেননা তিনি কি করে ইমামত বুঝবেন? আর এ কারণেই নিজের অজ্ঞতা ও মূর্খতাজনিত কারণে সত্যের ইমামতের বিরোধিতা করে থাকেন।


এবার আসা যাক ইমামত কি? ইমাম হায়াত ইমাম কিনা সেটা বুঝতে হলে তো আগে ইমাম বা ইমামত আসলে কি তাতো বুঝতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে ইমামত কি নাম দিয়ে হয়? না। ইমাম নাম লাগালে বা বললেই কেউ ইমাম হয়ে যায়? না। তাহলে মুজাদ্দিদ বা ইমাম বা ইমামত কাকে বলে? ইমামত সেটা অসীম বিষয়। সংক্ষেপে ইমাম মানে যিনি হক বাতেলের চিহ্নিত ও পার্থক্যকারী, সত্য ও মানবতার মুক্তির দিশা দানকারী। যখন হক বাতেল একাকার হয়ে যায় বা হক বাতেলের পরিচয় অস্পষ্ট হয়ে যায়, মানুষ সত্যের পরিচয় হারিয়ে ফেলে ঈমানি অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায়, বাতেলের চরম আগ্রাসন চলে তখন ইমাম এসে হক বাতেলের পরিচয় স্পষ্ট করেদেন। সত্যের পরিচয় যেমন স্পষ্ট করেন তেমনি বাতেলের স্বরুপ উন্মোচন করেন। ইমামত আবার কোন একক ব্যক্তিকে নিয়েও নয় সবাইকে নিয়েই ইমামত।



বাতেল এক এক যুগে এক এক নামে এক এক ছদ্মবেশে এক এক পদ্ধতিতে আসে সত্য মানবতাকে উৎখাতের জন্য। আর ইমামত তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে তাদের সকল চক্রান্তকে রুখে দেন এবং সত্য মানবতাকে বিজয়ী করার জন্য যা যা দরকার তার সকল দিক দিশা প্রদান করেন। এজন্য হাদীস শরীফে ঘোষণা আসছে যে প্রত্যেক শতাব্দীর শেষে অথবা শুরুতে একজন করে মুজাদ্দেদ বা ইমাম আগমন করবেন এবং এও বলা হচ্ছে তোমরা যদি শুনো কোন যুগের ইমামের আগমন হয়েছে তবে বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তার সাথে যুক্ত হও। আরেক জায়গায় বলা হচ্ছে যে যুগকে চিনল না যুগের ইমামকে চিনল না এমতাবস্থায় তার মৃত্য হলে সেটা হবে জাহেলিয়াতের বা কুফুরিয়াতের মৃত্যু। এভাবে সূরা বনি ইসরাইলের ৭১ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, হাসরের ময়দানে প্রত্যেককে তার ইমামের নামসহকারে আহবান করব। এছাড়া আরো অসংখ্য আয়াত ও হাদীস শরীফ রয়েছে।



এখন প্রশ্ন আসতে পারে আমরা কেন ইমাম হায়াতকে ইমাম বলি বা মানি। আমরা যদি বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকাই সেখানে আমরা কি দেখি। সর্বত্র সব বাতেলের আগ্রাসন, সব বাতেল ঐক্যবদ্ধ হয়ে সত্য মানবতাকে উৎখাতে চরমভাবে উঠেপড়ে লেগেছে। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান, আরাকান, ইয়েমেন, লেবাননসহ প্রায় সকল স্থানে আমাদের ভাই-বোনদের উপর চলছে চরম নির্যাতন রক্তের সাগরে ভাসছে ভাই-বোনদের জীবন, ঘর বাড়ি হারা উদ্বাস্তু, কোন রাষ্ট্র তাদের আশ্রয় দিচ্ছে না, সমুদ্রে ডুবে মরছে, স্রস্টার দেওয়া দুনিয়াকে বর্ডারের নামে খন্ড বিখন্ড করে বস্তুবাদী বিভিন্ন ভাষা, গোত্র, লিংগ, বর্ণ, ভৌগলিক সীমানা বা বর্ডারের ভিত্তিতে চেতনা তৈরি করে মানবসত্ত্বাকে বস্তুর দাসে পরিণত করে মানুষ মানুষে পরষ্পর দ্বন্দ্ব সংঘাত তৈরি করে দুনিয়াকে কারাগার কসাইখানায় পরিণত করে মানবতা ধ্বংস করা হচ্ছে, আমাদের প্রাণের কেবলাভূমি ইহুদি দাস সৌদি ওহাবী গোত্রবাদীদের কবলে, সেখানে প্রতিনিয়ত সত্যকে উৎখাত ও শানে রেসালাতে সীমাহীন বেয়াদবি করছে, আমাদের সকল নিদর্শন এমনকি সাহাবায়াকেরামের পবিত্র মাজারসমূহ পর্যন্ত ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে, খাজা বাবার দেওয়া অখন্ড উপমহাদেশ আজ বিভক্ত, ইন্ডিয়াতে রামরাজ্য কায়েম হয়েছে সেখানে গরু জবাই করলে মানুষ জবাই করছে আরো কত অত্যাচার, দানবীয় ইসরাইল কায়েম হয়েছে, মিয়ানমারে কিভাবে খুন জবাই হচ্ছে।


ইসলামের বা প্রকৃত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের প্রকৃত পরিচয় হারিয়েছে বা ভুলে গেছে ফলে বাতেলের রাষ্ট্রকে নিজেদের রাষ্ট্র বলে, ইসলামকে অরাজনৈতিক বলে অথবা ভ্রান্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থার দালালি করে, নিছক পীর তরিকতে যুক্ত থাকা ও সেখানেই গন্ডীবদ্ধ থাকাকে সুন্নীয়ত মনে করছে, সুন্নীয়তের কোন ঐক্য নেই, কারবালার শাহাদাতে ত্যাগ শিক্ষা আমানত ভুলে যাওয়া, ঈদে আজমের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কর্মসূচী ভুলে যাওয়াসহ চরম বিপর্যয়ে আজকে পুরো মুসলিম বিশ্ব ও সমগ্র মানবতা। পুরো মুসলিম জাহান ও মানবতা যখন ধ্বংসের চরম শিখরে তখন ইমাম হায়াত সেইখান থেকে আমাদের উদ্ধারের পথ দান করলেন যুগোপযোগী কর্মসূচী ও দিশা দেয়ার মাধ্যমে।

ইমাম হায়াত বর্তমান সময়ে সুন্নীয়তের সমস্যা সংকট, এর কারণ, বর্তমানে আমাদের অবস্থান কোথায়, কেন আমরা সবকিছু হারালাম, কোথাও সুন্নীয়ত কায়েম নেই কেন, সব জায়গায় বাতেল কিভাবে কায়েম হল, আমরা সুন্নী মিল্লাত কিভাবে উৎখাত হলাম, আমরা কিভাবে কেবলাভূমি আল আরব হারালাম, আল আরব কিভাবে সৌদিআরব হল, কিভাবে রামরাষ্ট্র কায়েম হল, কিভাবে ইহুদী রাষ্ট্র, বৌদ্ধ রাষ্ট্র কায়েম হল, তারা কিভাবে খুন জুলুম করছে, বস্তুবাদ কিভাবে সবার রন্ধে রন্ধে পৌঁছাল, কেন সব জায়গায় থেকে সুন্নীয়ত উৎখাত হল, আমাদের ভাইবোন কেন রক্তের সাগরে ভাসছে, আমরা কোথায় কোথায় ভুল করেছি, আবার আমরা কিভাবে উঠে দাঁড়াব, সবাইকে কিভাবে কলেমার ছায়াতলে আনব এই সবকিছুর কারণ ও এর সমাধান অংকের মত তুলে ধরেছেন যা ইমামত করে থাকেন।

ইমাম হায়াতের পূর্বে নিকট অতীতে সুন্নীয়তকে কেউ অরাজনৈতিক বলে অপূর্ণাঙ্গ করেছে, কেউ আবার ইসলামী রাষ্ট্রের নামে খারেজী ওহাবী শিয়া ধারায় অপরাজনীতি করত, আল আরবকে সৌদিআরব বলত, বস্তুবাদকে সুন্নীয়ত মনে করত আরো অনেককিছু। একমাত্র ইমাম হায়াতই আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন আল আরবকে সৌদিআরব নয় আল আরব বলতে হবে, খারেজী ধারায় অপরাজনীতি করা যাবেনা, বাতেলের কাঠামোকে কবুল করা যাবেনা, ইসলাম পূর্ণাঙ্গ এবং আধ্যাত্মিক রাজনৈতিক সবদিকে ভাই-বোন সবাইকে নিয়ে নিজেদের পূর্ণাঙ্গ পথে চলতে হবে, কোন বাতেলের সাথে আপোষ চলবেনা, সুন্নীয়তের নিজস্ব রাজনৈতিক রুপরেখা আছে সেটার নাম খেলাফতে ইনসানিয়াত তার রুপরেখা তুলে ধরেছেন কিভাবে হবে তাও বাতলে দিয়েছেন, মানবতার মুক্তির রুপরেখা দিয়েছেন যা নিকট অতীত আর কেউ দিতে পারেনি। এরকম আরো বহু কিছু যা লিখে বুঝানো সম্ভব নয় সরাসরি আলোচনা প্রয়োজন।

অতএব যিনি সমস্যা সংকট এর থেকে মুক্তির পথ দিলেন সেই ইমাম হায়াত ইমাম হবেন না যাদের দৃষ্টি নেই তারা হবেন? প্রশ্ন পাঠকদের কাছেই। যিনি উল্লিখিত বিষয়সমূহ তুলে ধরে মুক্তির পথ দিতেন পারবেন তাকেই ইমাম মেনে আমরা কাজ করব। ব্যক্তি নয় সুন্নীয়তই মূল লক্ষ্য।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাহাবী একটি বৈশিষ্ট্য, সাহাবী একটি চরিত্র, সাহাবী একটি আদর্শ, সাহাবী মানে উৎসর্গ, সাহাবী মানে সর্বোচ্চ বিশ্বস্ত! লেখক- আল্লামা ইমাম হায়াত এর দিশার আলোকে- আল্লামা মুফতি রেজাউল মোস্তফা কায়সার

প্রিয়নবীর সম্পর্কের চেয়ে জরুরী গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবান অপরিহার্য্য অন্য কোন সম্পর্কই নয় -"আল্লামা ইমাম হায়াত আলাইহি রাহমা"

(দলিল) নবী রাসূল আলাইহিস সাল্লাম গন সহ আল্লাহর ওলী গন চিরন্তন জীবিত ।