রাষ্ট্রশক্তির উপর বস্তুবাদের আধিপত্য মানবসত্তাকে বিলুপ্ত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখে ।-"মারুফ উদ্দিন"
রাষ্ট্রশক্তির উপর বস্তুবাদের আধিপত্য মানবসত্তাকে বিলুপ্ত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখে
▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄
মানবসত্তার বিপরীত জড়বাদী সত্তা তথা বস্তুবাদী সত্তা। আলোর বিপরীতে যেমনিভাবে আঁধার রয়েছে, কল্যাণের বিপরীতে অকল্যাণ, ন্যায়ের বিপরীতে অন্যায় তেমনিভাবে আত্মা ও জীবনের বিপরীত হল এই বস্তুবাদী সত্তা। মূলত এই বৈপরীত্য ইনসান তথা মানুষ আর এন্টি ইনসান তথা বস্তুবাদী সত্তার মধ্যকার দ্বন্ধকে নির্দেশ করে। এই দ্বন্ধ মানুষ আর অমানুষের পার্থক্য নিরুপণে জ্ঞানগত দিক থেকে অপরিহার্য।
আলো না থাকলে যেভাবে অন্ধকার কি তা বুঝা যাবে না সেভাবে ইনসানের সংজ্ঞা না থাকলে ইনসানি সত্তার বিপরীত বস্তুবাদী সত্তাকে বুঝা যাবে না। রুপক অর্থে, আলো কল্যাণকর এবং অন্ধকার ক্ষতিকর বিপর্যয়কর দিককে বুঝায়৷ তদরুপভাবে, মানবসত্তা জীবনের প্রাথমিক স্তরগত সত্য আর বস্তুবাদী সত্তা মিথ্যা আঁধারে হারিয়ে যাওয়া বিষাক্ত সত্তাকে বুঝায়।
নিজেকে সত্তাগতভাবে চিনতে পারা মানুষের জন্য জ্ঞানগত স্তর থেকে একটি শুভ সূচনা এবং এখান থেকেই জীবনের বিকাশ শুরু হয়। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ লিঙ্গ ভাষা বর্ণ অর্থ বিত্ত বর্ডার রাষ্ট্র সূর্য চন্দ্র ইত্যাদি দিয়ে সত্তাগত মানুষ হয় না। এসব দিয়ে আত্মসত্তাকে চিনতে যাওয়া চরম মূর্খতা এবং একইসাথে চরম অন্ধত্ব।
নিজেকে চেনার জন্য স্বীয় জীবন স্বীয় সত্তা স্বীয় আত্মাকে উপলব্ধি করতে হবে। আমার "আমি" টা কোন বস্তু নয়। আমার জীবন আছে। সেই জীবনের আলো হিসেবে আমার বিবেক আছে চিন্তাশক্তি আছে। এসবের সমন্বয়ে আমার সত্তা আছে। আমার সত্তার গঠন আমার আত্মাকে কেন্দ্র করে হয়। আর আমার আত্মা আমার স্রষ্টা ও স্রষ্টার সংযোগস্থল স্রষ্টার আলোকে কেন্দ্র করে হয়। অর্থাৎ, আত্মা ও জীবনের সত্য কোন বস্তু নয়। তাই বস্তুর নামে আমার জীবন হতে পারে না। অতএব, মানুষ বস্তুবাদী হতে পারে না।
বস্তুবাদীরও চিন্তাশক্তি বিবেক আছে তবে সেটা তাকে কেবল মিথ্যার দিকেই ধাবিত করে। অর্থাৎ, আত্মা ও জীবনের সত্য থেকে দূরে সরানোই বস্তুবাদের মূল কাজ। খোলা চোখে যা কিছু আপনি স্বাভাবিকভাবে দেখবেন তা কিন্তু রঙিন চশমা লাগিয়ে দেখার চেষ্টা করলে ভিন্ন কিছু দেখবেন। মানবাত্মার হন্তারক বস্তুবাদ যখন কাউকে আত্মিকভাবে গ্রাস করে ফেলে তখন তার চিন্তাশক্তি তাকে পাশবিকতার দিকে ধাবিত করে।
ইনসান ও বস্তুবাদী বিপরীত সত্তা। ইনসানের বিপরীতে যা কিছু আছে তার সবই বস্তুবাদী ধারন করে আছে৷ ব্যক্তি বস্তুবাদী যতটা না ক্ষতিকর তার চেয়ে হাজার লক্ষ গুণে ক্ষতিকর হল রাষ্ট্রশক্তিকে বস্তুবাদী প্রজননক্ষেত্রে পরিণত করা। রাষ্ট্রশক্তি যখন বস্তুবাদের বিষে আক্রান্ত হয়ে বস্তুবাদের গ্রাসে চলে যায় তখন সেখান থেকে মানুষরুপী বস্তুবাদীদের উদ্ভব হয়। একটা বুলেট যতটা না ক্ষতিকর তার চেয়ে পারমানবিক বোমা কিন্তু অনেক অনেক গুণ ক্ষতিকর। রাষ্ট্রশক্তি বস্তুবাদের হাতিয়ারে পরিণত হওয়ার ব্যাপারটা তেমনি ভয়াবহ ক্ষতিকর।
এক্ষেত্রে আমরা কি করতে পারি? আমরা বস্তুবাদমুক্ত তথা বস্তুবাদউদ্ভূত জাতীয়তাবাদমুক্ত সর্বজনীন গণতান্ত্রিক মানবতার রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি। বস্তুবাদ রাষ্ট্রের সর্বজনীনতাকে উৎখাত করে। অর্থাৎ, সব মানুষের জীবনের আত্মমালিকানা ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাকে উৎখাত করে। অন্যদিকে খেলাফতে ইনসানিয়াত তথা জীবনের আত্মমালিকানা নির্ভর সব মানুষের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানুষের রাষ্ট্রীয় অধ্যায়ে অংশীদারিত্ব মালিকানা নিশ্চিত হয়।
আল্লামা ইমাম হায়াত প্রবর্তিত ইনসানিয়াতের এই প্রাকৃতিক রাজনৈতিক দিশা মূলত জীবনেরই দিশা এবং তা সব মানুষের জন্য সর্বকালের জন্যই বিশ্বব্যাপী প্রয়োজন। মানবজীবনের গন্ডি নেই। যা কিছু জীবনকে গন্ডিবদ্ধ করে রাখে তা কিছু উৎখাতে ইনসানিয়াতের বিকল্প কিছু নেই।
আসুন, আমরা আল্লামা ইমাম হায়াতের দিক নির্দেশনায় সব মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব গড়ে তুলি এবং জীবন জগতকে বস্তুবাদী বিষ থেকে মুক্ত করি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks For You Comment