বাংলাদেশে ছদ্মশিয়া মতবাদের প্রবল উত্থান ঘটছে - Golam Dastagir Lisani
বাংলাদেশে ছদ্মশিয়া মতবাদের প্রবল উত্থান ঘটছেঃ-১
শিয়া নিয়ে কিছু অত্যন্ত সহজ সরল কথা বলব। স্বাভাবিকভাবেই ধারাবাহিক কয়েক পর্বতে বলব। প্রথমেই একটা কথা: কেউ শিয়া, সালাফি, কাদিয়ানি হলে বা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান হলে বা নাস্তিক হলে আমার কোনও সমস্যা নেই। একজন মানুষ শিয়া হোক বা নাস্তিক হোক, তাকে শিয়া বা নাস্তিক হওয়ার কারণে আমি ঘৃণা করি না। তাকে দুর্বল/অজ্ঞানী/খারাপ মনে করি না। এই মনে করা বা না করা আমার ইচ্ছার অধীন নয়। যার যা মতাদর্শ থাক, মানুষের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলা, মানুষের সাথে সহজ সামাজিক হৃদ্যতার সম্পর্ক বজায় রাখা এবং মানুষকে মানুষ হিসাবে মূল্যায়ন করা উচিত। অচ্ছেদ্য, অলঙ্ঘ্য সীমা। পাশাপাশি, মতবাদের দিকগুলোও স্পষ্ট করা উচিত। আমরা কাউকে মতবাদ বা ধর্ম দিয়ে বিচার করব না, তার মানে তো এই না, যে আমি আমার মতাদর্শ জানি না বা আমার মতাদর্শকে গুরুত্ব দেই না বা সব মতাদর্শকেই পিওর ও সঠিক মনে করি। কোনও ব্যক্তি যদি মতবাদের কারণে ঘৃণ্য আচরণ করে, সে ব্যক্তি অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে ঘৃণ্য হতে পারে।
শিয়া বলতে কী বুঝি? শিয়া বলতে খুব সহজ ও সরলভাবেই বুঝি এটা: ঘৃণার দৃষ্টিকোণ থেকে:
১. যারা আবু বকর-উমার-উসমান রা. কে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে ঘৃণা করে।
২. যারা উম্মাহাতুল মু’মিনীন রা. তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণকে অথবা স্ত্রীদের মধ্যে কাউকে ঘৃণা করে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে।
৩. যারা মনে করে বেশিরভাগ সাহাবী রা. পথভ্রষ্ট ছিলেন/ মাত্র তিনজন ছাড়া সব সাহাবী পথভ্রষ্ট ছিলেন/ শত শত সাহাবী পথভ্রষ্ট ছিলেন।
আক্বিদার দৃষ্টিকোণ থেকে:
১. যারা মনে করে আলী রা.’র নবী হওয়ার কথা ছিল, জিব্রাঈল আ. ভুলে রাসূল দ. কে নবী করে দিয়েছেন।
২. যারা মনে করে, আহলে বাইত রা. গণের ইমামগণ নবী। অথবা, তাঁদের কাছে কুরআনের মত করে কিতাব আসতো। অথবা, তাঁরা রাসূল।
৩. যারা সুস্থ মস্তিষ্কে মনে করে আলী রা. ইলাহ্। (আল্লাহ্ শিরক থেকে আমাদের মুক্ত রাখুন, কেননা শিরক ও ঈমান একত্রে থাকতে পারে না)
৪. যারা মনে করে কুরআন অপূর্ণ অথবা বিকৃত অথবা কাটছাটকৃত।
সাধারণত এটাই শিয়া।
আমরা কাদের ভুলভাবে শিয়া বলি:
* কেউ যদি ভালবেসে তাজিয়া মিছিলে যায় সে শিয়া হয়ে যায় না।
* ক্ষণিক উন্মাদনায় বুকপিঠ চাপড়ায় সেও শিয়া হয়ে যায় না।
* কেউ যদি পাগলের মত আহলে বাইতকে ভালবাসে সেও শিয়া হয়ে যায় না। বরং আমরা আহলে সুন্নাহ্ তো আহলে বাইত রা. কে পাগলের মতই ভালবাসাকে সঠিক মনে করি।
* কেউ যদি ভালবেসে আহলে বাইত রা. গণকে আ. লেখে সেও শিয়া হয়ে যায় না।
* কেউ যদি শিয়াদের সাথে আন্তরিকতার সাথে মেশে, সেও শিয়া হয়ে যায় না। আমি নাস্তিকদের সাথেও আন্তরিকতার সাথে মিশি, একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া কেউ আমাকে নাস্তিক বানানোর ক্ষমতা কিয়ামাতের ময়দানেও রাখে না।
* কেউ যদি আহলে বাইত রা. গণকে বিশেষ সম্মান দান করেন, তাদের বিশেষ অবস্থান বলেন/ ধারণা করেন (ইলাহ্ বলা, নবী বলা ও রাসূল বলা ব্যতীত) তাও সে শিয়া হয়ে যায় না।
* মূলধারার আহলে সুন্নাতের বাইরে কিছু সংখ্যক সাহাবী রা.’র কর্মধারা ও নীতিধারার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে, তাও সে শিয়া হয়ে যায় না। কেননা, এটাও সাহাবীগণ রা.’র সময় থেকেই সঠিকদের মধ্যেও আছে।
সত্যের ধারকদের মূল লক্ষণ হল, তারা নিরাবেগভাবে সত্যকে ধারণ করবে। যে মতাদর্শ শিয়া, সেটাকে শিয়া হিসাবে চিনতে পারা সত্যের লক্ষণ। তেমনি যে মতাদর্শ শিয়া না, শুধু দলবাজির কারণে সেটাকে শিয়া হিসাবে চিহ্নিত করা মিথ্যা-প্রীতি ও ব্যক্তিগত ঘৃণার লক্ষণ।
অনেক বেশি মানুষের সাথে খোলামেলা মেশার কারণে আল্লাহর করুণায় আমার ফার্স্ট হ্যান্ড কিছু দুর্লভ অভিজ্ঞতা আছে।সেই দুর্লভ অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, বাংলাদেশে ছদ্মশিয়া মতবাদের উত্থান গত ২০ বছর ধরে বেশ জোরেশোরে হচ্ছে। বিশেষ করে গত ১০ বছর ধরে তা শেকড় গেঁড়ে বসেছে। সালাফি মতবাদের মানুষরা একদিক দিয়ে পরিষ্কার। তারা সালাফি/জামাতি হয়ে গেলে খোলামেলা তা প্রকাশ করে। শিয়া মতবাদ ভয়ানক। মানুষ শিয়া মতবাদ ধারণ করলে নিজের কাছেও স্বীকার করতে চায় না। এটা ভয়ানক কেন? কারণ আগে তারা যেমন ছিল তেমনি থাকে। সূফিপন্থীদের জন্য ভয়ানক কেন?
কারণ, বাংলাদেশে যারা ছদ্মশিয়া হয়েছেন, তাঁদের প্রায় সবাই ছিলেন সুন্নি। যেন তেন সুন্নি না, সূফিপন্থী সুন্নি। তাঁরা মাজারে যেতেন, ওরশ করতেন, মিলাদ কিয়াম করতেন, সবই করতেন। তাঁরা শিয়া মতবাদী হয়ে যাবার পরও এসব কিছুই করেন এবং জোরেশোরেই করেন। তাঁদের চেনা যায় না, জানা যায় না, বোঝা যায় না। কেউ শিয়া মতবাদী হয়ে গেছে কিনা তা জানার উপায় মাত্র একটা, আবু বকর রা., আয়িশা রা., উমার রা., উসমান রা., আবু হুরাইরা রা, এঁদের নিয়ে কথা বলুন। আন্তরিক পরিবেশে হঠাৎ করে বেরিয়ে আসবে। বোঝা যাবে যে ভিতরে শিয়ায়িজম আছে।
শিয়ায়িজম কোমল মনের মানুষদের জন্য ফাঁদ। সালাফিজম কঠোর মনের মানুষদের জন্য ফাঁদ। ছদ্মশিয়া মতবাদ ভয়ানক, কারণ সূফিপন্থী মানুষ এম্নিতেই আহলে বাইতে আতহার রা. গণকে অসম্ভব ভালবাসে।
কেউ যখনি আহলে বাইত রা. গণের পক্ষে খুব মূল্যবান কোনও কথা বলে, মানুষ ভঙ্গুর হয়ে যায়। এভাবে আস্তে আস্তে বাংলাদেশের প্রচুর মাযার ও দরবার শরীফ শিয়া প্রভাবাণ্বিত হয়েছে। অনেক দরবার ও মাযার পুরোপুরি শিয়া হয়ে গেছে। আহলে বাইতের ভালবাসা কোনও অদ্ভুত বিষয় নয় সূফিপন্থীদের কাছে, তাই আহলে বাইতের ভালবাসার কথা বলে আমাদের শিয়া করে ফেলা সহজ, বিদআতের কথা বলে সালাফি করে ফেলার চেয়ে। রাসূল দ. বলেছেন, (ঠিক এভাবেই নয়) স্বভাবগতভাবে কিছু মানুষ কঠোর এবং কিছু মানুষ কোমল। এটা তাদের দোষ নয়।কষ্টের বিষয় হল, আন্তরিক সরল মানুষগুলোই শিয়া হয়ে যাচ্ছে। আদব সম্পণ্ণ কোমল মানসিকতার মানুষগুলোই শিয়া হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে সন্দেহপ্রবণ আদব বিমুখী মানুষগুলো হয়ে যাচ্ছে সালাফি।তাই সালাফিজম ও শিয়ায়িজম হল যথাযক্রমে কঠোর মন ও কোমল মনের মানুষের জন্য ফাঁদ।
খোদ্ কথিত ‘পীর সাহেব’দের দ্বারাও শিয়া মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়ছে । শিয়া মতাদর্শ ভয়ানক, কারণ শিয়া মতাদর্শ এখনো বাংলাদেশে মাযার ও দরবার ভিত্তিক। শিয়া মতাদর্শ নতুনভাবে ধারণ করা মানুষ এবং প্রচলিত সূফিপন্থী সুন্নিদের কথাবার্তা আচার আচরণ আমল আখলাকে তেমন কোনও তফাৎ বাহ্যত পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের অনেক ‘সুন্নি’ মতাদর্শর পীর সাহেবের খলিফারা আস্তে আস্তে শিয়া মতাদর্শর পীর সাহেব হয়ে গেছেন। তাঁরা আবার বিদ্যুৎ গতিতে খেলাফত দিচ্ছেন। সেই খলিফারা হচ্ছে পীরের চেয়েও কঠোর শিয়া। তারা মিলাদ করে, কিয়াম করে, ওয়াজদ করে, সামা মাহফিল করে, বিভিন্ন অগুণতি ওরশ করে, ঈদে মিলাদুন্নবী দ. করে, খাজা বাবা র.’র মাহফিল করে, গাউসে পাক রা.’র ১১ শরীফ করে, অর্থাৎ আচরণগতভাবে যা যা করার সবই করে। আর মৌলিক দিক দিয়ে ভয়ানক কারণ তারা সুন্নি আকাবের আছেন এমন সিলসিলায় ‘বায়াত’ করায়। আমি এমন সিলসিলা দেখেছি, যাদের পূর্বতন পীর সাহেবরা চার খলিফাতে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন, মৌলিক আক্বিদাতেও তেমন কোন তফাত ছিল না। অথচ তাদের বর্তমান খলিফারা আবু বকর রা., উমার রা., উসমান রা.’র বিষয়ে প্রকাশ্যে ঘৃণা পোষণ করে ও এখানেই থামে না, এসব কথা প্রচার করে শিক্ষা দিয়ে বেড়ায়। তাদের বড় বড় গুরুরা এখনো ছদ্মবেশ ধরে আছে। পীর এখনো মুখে বলে ‘উমার রা.’ আর তার খলিফারা (তারাও ততদিনে পীর হয়ে মুরিদ করানো শুরু করেছে) তার সামনেই হেসে ভেঙে পড়ে রাদ্বিআল্লাহু আনহু শুনে। এমন দৃশ্য আমি নিজের চোখে দেখেছি সামনা সামনি। বড় গুরু আবার বলে, ‘না, আমি রাদ্বিআল্লাহু আনহুই বললাম সম্মান দিয়ে বললাম।
ছদ্মশিয়া মতবাদের প্রবল উত্থান ঘটছে - (আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতি)ঃ
বাংলাদেশে শিয়া স্রোতের পেছনে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতি অন্যতম মূল কারণ।
অবাক লাগে না? আজকে বাংলাদেশে কোনও মাযারে বসে কোনও আশিক দেখা যায় এমন লোক শিয়া মতবাদ প্রচার করছে তার কারণ হোয়াইট হাউসে বসে ওবামা কোনও ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল!
শিয়া নিয়ে কিছু অত্যন্ত সহজ সরল কথা বলব। স্বাভাবিকভাবেই ধারাবাহিক কয়েক পর্বতে বলব। প্রথমেই একটা কথা: কেউ শিয়া, সালাফি, কাদিয়ানি হলে বা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান হলে বা নাস্তিক হলে আমার কোনও সমস্যা নেই। একজন মানুষ শিয়া হোক বা নাস্তিক হোক, তাকে শিয়া বা নাস্তিক হওয়ার কারণে আমি ঘৃণা করি না। তাকে দুর্বল/অজ্ঞানী/খারাপ মনে করি না। এই মনে করা বা না করা আমার ইচ্ছার অধীন নয়। যার যা মতাদর্শ থাক, মানুষের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলা, মানুষের সাথে সহজ সামাজিক হৃদ্যতার সম্পর্ক বজায় রাখা এবং মানুষকে মানুষ হিসাবে মূল্যায়ন করা উচিত। অচ্ছেদ্য, অলঙ্ঘ্য সীমা। পাশাপাশি, মতবাদের দিকগুলোও স্পষ্ট করা উচিত। আমরা কাউকে মতবাদ বা ধর্ম দিয়ে বিচার করব না, তার মানে তো এই না, যে আমি আমার মতাদর্শ জানি না বা আমার মতাদর্শকে গুরুত্ব দেই না বা সব মতাদর্শকেই পিওর ও সঠিক মনে করি। কোনও ব্যক্তি যদি মতবাদের কারণে ঘৃণ্য আচরণ করে, সে ব্যক্তি অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে ঘৃণ্য হতে পারে।
শিয়া বলতে কী বুঝি? শিয়া বলতে খুব সহজ ও সরলভাবেই বুঝি এটা: ঘৃণার দৃষ্টিকোণ থেকে:
১. যারা আবু বকর-উমার-উসমান রা. কে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে ঘৃণা করে।
২. যারা উম্মাহাতুল মু’মিনীন রা. তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণকে অথবা স্ত্রীদের মধ্যে কাউকে ঘৃণা করে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে।
৩. যারা মনে করে বেশিরভাগ সাহাবী রা. পথভ্রষ্ট ছিলেন/ মাত্র তিনজন ছাড়া সব সাহাবী পথভ্রষ্ট ছিলেন/ শত শত সাহাবী পথভ্রষ্ট ছিলেন।
আক্বিদার দৃষ্টিকোণ থেকে:
১. যারা মনে করে আলী রা.’র নবী হওয়ার কথা ছিল, জিব্রাঈল আ. ভুলে রাসূল দ. কে নবী করে দিয়েছেন।
২. যারা মনে করে, আহলে বাইত রা. গণের ইমামগণ নবী। অথবা, তাঁদের কাছে কুরআনের মত করে কিতাব আসতো। অথবা, তাঁরা রাসূল।
৩. যারা সুস্থ মস্তিষ্কে মনে করে আলী রা. ইলাহ্। (আল্লাহ্ শিরক থেকে আমাদের মুক্ত রাখুন, কেননা শিরক ও ঈমান একত্রে থাকতে পারে না)
৪. যারা মনে করে কুরআন অপূর্ণ অথবা বিকৃত অথবা কাটছাটকৃত।
সাধারণত এটাই শিয়া।
আমরা কাদের ভুলভাবে শিয়া বলি:
* কেউ যদি ভালবেসে তাজিয়া মিছিলে যায় সে শিয়া হয়ে যায় না।
* ক্ষণিক উন্মাদনায় বুকপিঠ চাপড়ায় সেও শিয়া হয়ে যায় না।
* কেউ যদি পাগলের মত আহলে বাইতকে ভালবাসে সেও শিয়া হয়ে যায় না। বরং আমরা আহলে সুন্নাহ্ তো আহলে বাইত রা. কে পাগলের মতই ভালবাসাকে সঠিক মনে করি।
* কেউ যদি ভালবেসে আহলে বাইত রা. গণকে আ. লেখে সেও শিয়া হয়ে যায় না।
* কেউ যদি শিয়াদের সাথে আন্তরিকতার সাথে মেশে, সেও শিয়া হয়ে যায় না। আমি নাস্তিকদের সাথেও আন্তরিকতার সাথে মিশি, একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া কেউ আমাকে নাস্তিক বানানোর ক্ষমতা কিয়ামাতের ময়দানেও রাখে না।
* কেউ যদি আহলে বাইত রা. গণকে বিশেষ সম্মান দান করেন, তাদের বিশেষ অবস্থান বলেন/ ধারণা করেন (ইলাহ্ বলা, নবী বলা ও রাসূল বলা ব্যতীত) তাও সে শিয়া হয়ে যায় না।
* মূলধারার আহলে সুন্নাতের বাইরে কিছু সংখ্যক সাহাবী রা.’র কর্মধারা ও নীতিধারার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে, তাও সে শিয়া হয়ে যায় না। কেননা, এটাও সাহাবীগণ রা.’র সময় থেকেই সঠিকদের মধ্যেও আছে।
সত্যের ধারকদের মূল লক্ষণ হল, তারা নিরাবেগভাবে সত্যকে ধারণ করবে। যে মতাদর্শ শিয়া, সেটাকে শিয়া হিসাবে চিনতে পারা সত্যের লক্ষণ। তেমনি যে মতাদর্শ শিয়া না, শুধু দলবাজির কারণে সেটাকে শিয়া হিসাবে চিহ্নিত করা মিথ্যা-প্রীতি ও ব্যক্তিগত ঘৃণার লক্ষণ।
অনেক বেশি মানুষের সাথে খোলামেলা মেশার কারণে আল্লাহর করুণায় আমার ফার্স্ট হ্যান্ড কিছু দুর্লভ অভিজ্ঞতা আছে।সেই দুর্লভ অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, বাংলাদেশে ছদ্মশিয়া মতবাদের উত্থান গত ২০ বছর ধরে বেশ জোরেশোরে হচ্ছে। বিশেষ করে গত ১০ বছর ধরে তা শেকড় গেঁড়ে বসেছে। সালাফি মতবাদের মানুষরা একদিক দিয়ে পরিষ্কার। তারা সালাফি/জামাতি হয়ে গেলে খোলামেলা তা প্রকাশ করে। শিয়া মতবাদ ভয়ানক। মানুষ শিয়া মতবাদ ধারণ করলে নিজের কাছেও স্বীকার করতে চায় না। এটা ভয়ানক কেন? কারণ আগে তারা যেমন ছিল তেমনি থাকে। সূফিপন্থীদের জন্য ভয়ানক কেন?
কারণ, বাংলাদেশে যারা ছদ্মশিয়া হয়েছেন, তাঁদের প্রায় সবাই ছিলেন সুন্নি। যেন তেন সুন্নি না, সূফিপন্থী সুন্নি। তাঁরা মাজারে যেতেন, ওরশ করতেন, মিলাদ কিয়াম করতেন, সবই করতেন। তাঁরা শিয়া মতবাদী হয়ে যাবার পরও এসব কিছুই করেন এবং জোরেশোরেই করেন। তাঁদের চেনা যায় না, জানা যায় না, বোঝা যায় না। কেউ শিয়া মতবাদী হয়ে গেছে কিনা তা জানার উপায় মাত্র একটা, আবু বকর রা., আয়িশা রা., উমার রা., উসমান রা., আবু হুরাইরা রা, এঁদের নিয়ে কথা বলুন। আন্তরিক পরিবেশে হঠাৎ করে বেরিয়ে আসবে। বোঝা যাবে যে ভিতরে শিয়ায়িজম আছে।
শিয়ায়িজম কোমল মনের মানুষদের জন্য ফাঁদ। সালাফিজম কঠোর মনের মানুষদের জন্য ফাঁদ। ছদ্মশিয়া মতবাদ ভয়ানক, কারণ সূফিপন্থী মানুষ এম্নিতেই আহলে বাইতে আতহার রা. গণকে অসম্ভব ভালবাসে।
কেউ যখনি আহলে বাইত রা. গণের পক্ষে খুব মূল্যবান কোনও কথা বলে, মানুষ ভঙ্গুর হয়ে যায়। এভাবে আস্তে আস্তে বাংলাদেশের প্রচুর মাযার ও দরবার শরীফ শিয়া প্রভাবাণ্বিত হয়েছে। অনেক দরবার ও মাযার পুরোপুরি শিয়া হয়ে গেছে। আহলে বাইতের ভালবাসা কোনও অদ্ভুত বিষয় নয় সূফিপন্থীদের কাছে, তাই আহলে বাইতের ভালবাসার কথা বলে আমাদের শিয়া করে ফেলা সহজ, বিদআতের কথা বলে সালাফি করে ফেলার চেয়ে। রাসূল দ. বলেছেন, (ঠিক এভাবেই নয়) স্বভাবগতভাবে কিছু মানুষ কঠোর এবং কিছু মানুষ কোমল। এটা তাদের দোষ নয়।কষ্টের বিষয় হল, আন্তরিক সরল মানুষগুলোই শিয়া হয়ে যাচ্ছে। আদব সম্পণ্ণ কোমল মানসিকতার মানুষগুলোই শিয়া হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে সন্দেহপ্রবণ আদব বিমুখী মানুষগুলো হয়ে যাচ্ছে সালাফি।তাই সালাফিজম ও শিয়ায়িজম হল যথাযক্রমে কঠোর মন ও কোমল মনের মানুষের জন্য ফাঁদ।
খোদ্ কথিত ‘পীর সাহেব’দের দ্বারাও শিয়া মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়ছে । শিয়া মতাদর্শ ভয়ানক, কারণ শিয়া মতাদর্শ এখনো বাংলাদেশে মাযার ও দরবার ভিত্তিক। শিয়া মতাদর্শ নতুনভাবে ধারণ করা মানুষ এবং প্রচলিত সূফিপন্থী সুন্নিদের কথাবার্তা আচার আচরণ আমল আখলাকে তেমন কোনও তফাৎ বাহ্যত পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের অনেক ‘সুন্নি’ মতাদর্শর পীর সাহেবের খলিফারা আস্তে আস্তে শিয়া মতাদর্শর পীর সাহেব হয়ে গেছেন। তাঁরা আবার বিদ্যুৎ গতিতে খেলাফত দিচ্ছেন। সেই খলিফারা হচ্ছে পীরের চেয়েও কঠোর শিয়া। তারা মিলাদ করে, কিয়াম করে, ওয়াজদ করে, সামা মাহফিল করে, বিভিন্ন অগুণতি ওরশ করে, ঈদে মিলাদুন্নবী দ. করে, খাজা বাবা র.’র মাহফিল করে, গাউসে পাক রা.’র ১১ শরীফ করে, অর্থাৎ আচরণগতভাবে যা যা করার সবই করে। আর মৌলিক দিক দিয়ে ভয়ানক কারণ তারা সুন্নি আকাবের আছেন এমন সিলসিলায় ‘বায়াত’ করায়। আমি এমন সিলসিলা দেখেছি, যাদের পূর্বতন পীর সাহেবরা চার খলিফাতে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন, মৌলিক আক্বিদাতেও তেমন কোন তফাত ছিল না। অথচ তাদের বর্তমান খলিফারা আবু বকর রা., উমার রা., উসমান রা.’র বিষয়ে প্রকাশ্যে ঘৃণা পোষণ করে ও এখানেই থামে না, এসব কথা প্রচার করে শিক্ষা দিয়ে বেড়ায়। তাদের বড় বড় গুরুরা এখনো ছদ্মবেশ ধরে আছে। পীর এখনো মুখে বলে ‘উমার রা.’ আর তার খলিফারা (তারাও ততদিনে পীর হয়ে মুরিদ করানো শুরু করেছে) তার সামনেই হেসে ভেঙে পড়ে রাদ্বিআল্লাহু আনহু শুনে। এমন দৃশ্য আমি নিজের চোখে দেখেছি সামনা সামনি। বড় গুরু আবার বলে, ‘না, আমি রাদ্বিআল্লাহু আনহুই বললাম সম্মান দিয়ে বললাম।
ছদ্মশিয়া মতবাদের প্রবল উত্থান ঘটছে - (আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতি)ঃ
বাংলাদেশে শিয়া স্রোতের পেছনে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতি অন্যতম মূল কারণ।
অবাক লাগে না? আজকে বাংলাদেশে কোনও মাযারে বসে কোনও আশিক দেখা যায় এমন লোক শিয়া মতবাদ প্রচার করছে তার কারণ হোয়াইট হাউসে বসে ওবামা কোনও ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল!
না, ওবামা-ইজরায়েল তাকে টাকা পয়সা সম্মান কিছুই দেয়নি। তার সাথে তাদের সম্পর্কও নেই, যোগাযোগও নেই।
প্রথম পয়েন্ট:
পৃথিবীতে সবচে বেশি তেল আছে এমন প্রমাণিত ‘মুসলিম’ দেশ কোন দুইটা? উঁহু।
জাজিরাতুল আরব (মক্কা-মদীনার দেশ) এক নম্বরে। কিন্তু দুই নম্বরে ইরাক, কুয়েত, আরব আমিরাত বা লিবিয়াও নয় ইরান। ইরান হচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম আবিষ্কৃত (প্রমাণিত) তেলের ভান্ডার।
দ্বিতীয় পয়েন্ট:
পৃথিবীতে টাকার মূল্যমান নির্ধারণ ও ওঠানামা হয় কী দিয়ে? উঁহু।
জিডিপি নয়, স্বর্ণ নয় আয়তন/জনসংখ্যা/খাদ্য উৎপাদন/শিক্ষা/প্রযুক্তি/ আবিষ্কার/অবকাঠামো/রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নয় তেল দিয়ে। বাদশাহ্ ফয়সালের সময় আমেরিকার হাত ধরে আন্তর্জাতিক অর্থ’র পরিমাপক স্বর্ণ থেকে পরিবর্তন করে তেলে নিয়ে আসা হয়। একবার ভাবুন, সৌদদের দখলদারিত্বে থাকা আরব অঞ্চলে তেলের মাধ্যমে আমেরিকা দাঁড়িয়ে আছে। আমেরিকার অর্থনীতি পুরোপুরি দাঁড়িয়ে আছে। এমনকি তাদের অর্থনীতির ১২% সরাসরি সৌদদের মালিকানাধীন টাকা। এই সবকিছুই হয়েছে শুধু সৌদদের তোলা তৈলের মাধ্যমে।বলতে গেলে কাছাকাছি পরিমাণ তেল আছে ইরানের। সৌদরা যদি আমেরিকাকে আমেরিকা বানিয়ে ফেলে থাকে, ইরানের তেলের মূল্যমান শিয়ায়িজম প্রচারে কী পরিমাণ অবদান রাখতে পারে? ১০ বছর আগ পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্ব ইরানকে খুব চেপে রেখেছিল। কিছুতেই কোনও ক্ষেত্রেই ছাড় দিচ্ছিল না।
আহমাদিনেজাদের সময়কাল পর্যন্ত ইরানও খুব উগ্রভাবে অগ্রসর হচ্ছিল এখন আমেরিকা-ইজরায়েল অক্ষশক্তি ইরানকে তাদের স্বার্থেই ছাড় দিচ্ছে। এই ছাড় ইরানের তেল বিক্রি ও অর্থনীতির শক্তি শালীকরণে অবদান রাখছে। ইরান এই তেল বিক্রির টাকা ঢালছে সারা পৃথিবীতে শিয়ায়িজম প্রচারের কাজে এরই ছিঁটেফোটা এসে বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দিচ্ছে।
এখন আমেরিকা-ইজরায়েল বলয় ইরানতে ততটা চাপ দিচ্ছে না, বরং আড়ালে আবডালে ছাড় দিচ্ছে দারুণভাবে।
বিভিন্ন কারণে:
১. তাদের সালাফি বন্ধুত্বের বয়স অনেক হয়েছে। সালাফিজম এবং সালাফিজমের সব ধরনের উপ ও সহমতকে টেরোরিজমের নামান্তর করার পর তারা নতুন বন্ধু খুঁজছে।
২. তারা সৌদ বলয়কে চাপে রাখতে চায়। এজন্য ইরানকে শক্তিশালী করতে চায়।
৩. তারা মধ্যপ্রাচ্যকে বিনষ্ট করতে চায়। এজন্য ইরানের শক্তিবৃদ্ধি হতে হবে। তাই হচ্ছে। সর্বদক্ষিণ আরবের ইয়েমেনে হুতিরা বিদ্রোহ করে সালাফি-দয়া নির্ভর প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে বহিষ্কার করতে পারত না, যদি ইরান তাদের সহায়তা না করত। ইরান তাদের সহায়তা করতে পারত না, যদি ইরানের তেল-অর্থনীতি ছাড় না পেতো।
৪. তারা মধ্যপ্রাচ্যে আরো অস্ত্র বিক্রি করতে চায়। ইরান ইয়েমেনের হুতিদের সহায়তা করতে পেরেছ দেখেই সৌদরা সেখানে বোমা বর্ষণ করতে পারছে। সৌদরা আরো বেশি অস্ত্র কিনছে, পশ্চিমা বলয়ের আরসেনাল ইন্ডাস্ট্রি ফুলে ফেঁপে উঠছে।
৫. ইরাক ও শাম দেশে মোসাদ-শায়েরেত মাতকাল-সিআইএ বলয় আইসিস সৃষ্টি করেছে। কিন্তু শুধু এক পক্ষ তো আর সব বিনষ্ট করতে পারে না। আইসিসের ধ্বংসলীলাকে আরো তীব্রতা দানের জন্য আইসিসের যোগ্য শত্রুও সৃষ্টি করতে হবে। আইসিসের সবচে যোগ্য শত্রু শিয়া। আর শিয়ার সবচে বড় বন্ধু ইরান। সুতরাং আইসিসের শত্রুকে শক্তিমত্তা দিয়ে ওই অঞ্চল ধ্বংস করতে হলে ইরানকে শক্তিবৃদ্ধির সুযোগ দিতে হবে।
৬. মুসলিম টেরোরিস্ট বলতে শুধু সালাফি ও সালাফিমনা মতাদর্শগুলোই বোঝায়। একদিকের শক্তিকে টেরোরিস্ট বানিয়ে পুরো মুসলিম জনসংখ্যাকে আক্রান্ত করা যাচ্ছে না। কারণ বছরের পর বছর কেটে গেছে। এখন মানুষ সুস্পষ্টভাবে উগ্রপন্থী মতাদর্শকে চেনে। মুসলিম বিশ্বে আরো অন্তত একটা ‘টেরোরিস্ট’ মতাদর্শ চিহ্নিত করতে চায় ওয়াশিংটন-তেল আবিব বলয়। এজন্য সবচে রাইপ পক্ষ হচ্ছে ইরান। টেরোরিস্ট তো আর এম্নি এম্নি হবে না, টেরোরিস্টের চাই তেলের সাপোর্ট। ঠিক আল কায়েদা-তালেবান যুগে যেভাবে তেলবাদীরা তেলের টাকা ও অস্ত্র দিয়ে টেরোরিজমকে বিশ্বায়ন করেছে, এবার ঠিক সেভাবে ইরান-সিরিয়া বলয়ের তেলের টাকা দিয়ে শিয়া টেরোরিজম তৈরির চেষ্টা। শিয়া টেরোরিজম তৈরি করা খুব কঠিন কিছু হবে না তাদের জন্য। কেননা, আইসিস-মনারা শিয়াদের কচুকাটা করছে এবং সেটা হিজবুল্লাহ্ ও হুতিদের মত অসংখ্য শিয়া গ্রুপকে উগ্রপন্থী করে তুলছে।
৭. পশ্চিমা বিশ্ব বিশ্বের শাসন কেন্দ্রকে ইউরোপ থেকে নিয়ে গিয়েছিল আমেরিকায়। সেটা সফল ছিল। এবার আমেরিকা থেকে বিশ্বের কেন্দ্রকে ইসরায়েলে নিয়ে যাবে। এজন্য গুগল, এইচপি, ডেল, মাইক্রোসফট সহ অসংখ্য করপোরেশনের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট ব্র্যাঞ্চ চলে গেছে দখলদৃত ফিলিস্তিনে। যেখানে রিসার্চ ব্রাঞ্চ সেখানেই রিসার্চার। ইতোমধ্যে ইজরায়েল বৃহত্তর ইজরায়েল গঠনের পথে এগিয়ে গেছে। বৃহত্তর ইজরায়েল গঠন করতে হলে প্রতিটা মুসলিম জনবহুল রাষ্ট্রের শক্তিকে বিনষ্ট করতে হবে। ইরাক-লিবিয়া-সিরিয়া-ইয়েমেনের কাজ শেষ। ইরানকে নাহয় নিজেরা ধ্বংস করতে পারবে, সৌদদের তো আর পারবে না। তাই প্ল্যান হল, ইরানকে দিয়ে সৌদদের এবং সৌদদের দিয়ে ইরানকে ধ্বংস করা। কিন্তু ইরান শক্তিশালী না হলে সৌদদের কীভাবে ধ্বংস করবে? সুতরাং ইরানকে শক্তিশালী হতে দাও।
৮. সারা পৃথিবীতে মুসলিম উম্মাহ্ তে বিভক্তিকে বৈশ্বিকভাবে স্থানীয় স্থানীয় হত্যাযজ্ঞে রূপ দেয়া। এজন্য কট্টর সালাফিবাদীদের মোকাবিলায় কট্টর শিয়াবাদী মতবাদের উত্থান দরকার। সাধারণ মুসলিমরা তো আর সালাফি জঙ্গীদের পিটিয়ে মেরে ফেলছে না বা সালাফি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জঙ্গী গ্রুপ তৈরি করছে না। এটা করতে হলে শিয়া মতবাদের উত্থান দরকার। এমনকি সালাফি মতবাদকে তীব্রভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমালোচনা করতে হলেও শিয়া মতবাদের উত্থান দরকার কেননা শিয়া ও সালাফি মতবাদ ছাড়া আর কোনও মতবাদের তেলের টাকা নাই। সুতরাং কোনও মতবাদ বিশাল আকৃতিতে প্রাতিষ্ঠানিক ও স্কলারলি ওয়েতে আধুনিক পন্থায় সালাফিজমকে আটকাতে পারছে না। সুতরাং সারা পৃথিবীতে শিয়া মতাদর্শীদের উত্থানে সহায়তা করো।
৯. মুসলিম উম্মাহর বর্তমান যে ভারসাম্যময় স্ট্রাকচার, সেটাকে বিনষ্ট করা। স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে অরাজকতা তৈরি করা কঠিন। অরাজকতা করতে হলে আগে ডিভাইড করতে হবে। ধর্মভিত্তিক ডিভিশন তৈরি করতে হলে বর্তমানে যে গড়ন আছে সেটাকে আগে বদলাতে হবে। যারা স্থিতিশীল মতাদর্শগুলোতে শান্তিতে আছে, তাদের নেতৃত্ব ও কথার গুরুত্বকে অসক্রিয় করতে হবে।
ইরানের টাকা ছড়ানোর (বা বিনিয়োগের) ধরণ
আসলেই কি তেলের টাকা এতটাই পাওয়ারফুল, যে তা মানুষের মন বদলে দিবে? আমরা জানি বিশ্ব অর্থনীতি প্রবলভাবে মূলত তেলনির্ভর এবং ইরান বিশ্বের চতুর্থ তেল রিজার্ভ। তেলের টাকা আমেরিকার মত দেশকেও কিনে ফেলতে পারে এবং তাই করেছে। দেখা যাক ইরান কীভাবে ইনভেস্ট করছে তেলের টাকা:
প্রথম পয়েন্ট:
পৃথিবীতে সবচে বেশি তেল আছে এমন প্রমাণিত ‘মুসলিম’ দেশ কোন দুইটা? উঁহু।
জাজিরাতুল আরব (মক্কা-মদীনার দেশ) এক নম্বরে। কিন্তু দুই নম্বরে ইরাক, কুয়েত, আরব আমিরাত বা লিবিয়াও নয় ইরান। ইরান হচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম আবিষ্কৃত (প্রমাণিত) তেলের ভান্ডার।
দ্বিতীয় পয়েন্ট:
পৃথিবীতে টাকার মূল্যমান নির্ধারণ ও ওঠানামা হয় কী দিয়ে? উঁহু।
জিডিপি নয়, স্বর্ণ নয় আয়তন/জনসংখ্যা/খাদ্য উৎপাদন/শিক্ষা/প্রযুক্তি/ আবিষ্কার/অবকাঠামো/রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নয় তেল দিয়ে। বাদশাহ্ ফয়সালের সময় আমেরিকার হাত ধরে আন্তর্জাতিক অর্থ’র পরিমাপক স্বর্ণ থেকে পরিবর্তন করে তেলে নিয়ে আসা হয়। একবার ভাবুন, সৌদদের দখলদারিত্বে থাকা আরব অঞ্চলে তেলের মাধ্যমে আমেরিকা দাঁড়িয়ে আছে। আমেরিকার অর্থনীতি পুরোপুরি দাঁড়িয়ে আছে। এমনকি তাদের অর্থনীতির ১২% সরাসরি সৌদদের মালিকানাধীন টাকা। এই সবকিছুই হয়েছে শুধু সৌদদের তোলা তৈলের মাধ্যমে।বলতে গেলে কাছাকাছি পরিমাণ তেল আছে ইরানের। সৌদরা যদি আমেরিকাকে আমেরিকা বানিয়ে ফেলে থাকে, ইরানের তেলের মূল্যমান শিয়ায়িজম প্রচারে কী পরিমাণ অবদান রাখতে পারে? ১০ বছর আগ পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্ব ইরানকে খুব চেপে রেখেছিল। কিছুতেই কোনও ক্ষেত্রেই ছাড় দিচ্ছিল না।
আহমাদিনেজাদের সময়কাল পর্যন্ত ইরানও খুব উগ্রভাবে অগ্রসর হচ্ছিল এখন আমেরিকা-ইজরায়েল অক্ষশক্তি ইরানকে তাদের স্বার্থেই ছাড় দিচ্ছে। এই ছাড় ইরানের তেল বিক্রি ও অর্থনীতির শক্তি শালীকরণে অবদান রাখছে। ইরান এই তেল বিক্রির টাকা ঢালছে সারা পৃথিবীতে শিয়ায়িজম প্রচারের কাজে এরই ছিঁটেফোটা এসে বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দিচ্ছে।
এখন আমেরিকা-ইজরায়েল বলয় ইরানতে ততটা চাপ দিচ্ছে না, বরং আড়ালে আবডালে ছাড় দিচ্ছে দারুণভাবে।
বিভিন্ন কারণে:
১. তাদের সালাফি বন্ধুত্বের বয়স অনেক হয়েছে। সালাফিজম এবং সালাফিজমের সব ধরনের উপ ও সহমতকে টেরোরিজমের নামান্তর করার পর তারা নতুন বন্ধু খুঁজছে।
২. তারা সৌদ বলয়কে চাপে রাখতে চায়। এজন্য ইরানকে শক্তিশালী করতে চায়।
৩. তারা মধ্যপ্রাচ্যকে বিনষ্ট করতে চায়। এজন্য ইরানের শক্তিবৃদ্ধি হতে হবে। তাই হচ্ছে। সর্বদক্ষিণ আরবের ইয়েমেনে হুতিরা বিদ্রোহ করে সালাফি-দয়া নির্ভর প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে বহিষ্কার করতে পারত না, যদি ইরান তাদের সহায়তা না করত। ইরান তাদের সহায়তা করতে পারত না, যদি ইরানের তেল-অর্থনীতি ছাড় না পেতো।
৪. তারা মধ্যপ্রাচ্যে আরো অস্ত্র বিক্রি করতে চায়। ইরান ইয়েমেনের হুতিদের সহায়তা করতে পেরেছ দেখেই সৌদরা সেখানে বোমা বর্ষণ করতে পারছে। সৌদরা আরো বেশি অস্ত্র কিনছে, পশ্চিমা বলয়ের আরসেনাল ইন্ডাস্ট্রি ফুলে ফেঁপে উঠছে।
৫. ইরাক ও শাম দেশে মোসাদ-শায়েরেত মাতকাল-সিআইএ বলয় আইসিস সৃষ্টি করেছে। কিন্তু শুধু এক পক্ষ তো আর সব বিনষ্ট করতে পারে না। আইসিসের ধ্বংসলীলাকে আরো তীব্রতা দানের জন্য আইসিসের যোগ্য শত্রুও সৃষ্টি করতে হবে। আইসিসের সবচে যোগ্য শত্রু শিয়া। আর শিয়ার সবচে বড় বন্ধু ইরান। সুতরাং আইসিসের শত্রুকে শক্তিমত্তা দিয়ে ওই অঞ্চল ধ্বংস করতে হলে ইরানকে শক্তিবৃদ্ধির সুযোগ দিতে হবে।
৬. মুসলিম টেরোরিস্ট বলতে শুধু সালাফি ও সালাফিমনা মতাদর্শগুলোই বোঝায়। একদিকের শক্তিকে টেরোরিস্ট বানিয়ে পুরো মুসলিম জনসংখ্যাকে আক্রান্ত করা যাচ্ছে না। কারণ বছরের পর বছর কেটে গেছে। এখন মানুষ সুস্পষ্টভাবে উগ্রপন্থী মতাদর্শকে চেনে। মুসলিম বিশ্বে আরো অন্তত একটা ‘টেরোরিস্ট’ মতাদর্শ চিহ্নিত করতে চায় ওয়াশিংটন-তেল আবিব বলয়। এজন্য সবচে রাইপ পক্ষ হচ্ছে ইরান। টেরোরিস্ট তো আর এম্নি এম্নি হবে না, টেরোরিস্টের চাই তেলের সাপোর্ট। ঠিক আল কায়েদা-তালেবান যুগে যেভাবে তেলবাদীরা তেলের টাকা ও অস্ত্র দিয়ে টেরোরিজমকে বিশ্বায়ন করেছে, এবার ঠিক সেভাবে ইরান-সিরিয়া বলয়ের তেলের টাকা দিয়ে শিয়া টেরোরিজম তৈরির চেষ্টা। শিয়া টেরোরিজম তৈরি করা খুব কঠিন কিছু হবে না তাদের জন্য। কেননা, আইসিস-মনারা শিয়াদের কচুকাটা করছে এবং সেটা হিজবুল্লাহ্ ও হুতিদের মত অসংখ্য শিয়া গ্রুপকে উগ্রপন্থী করে তুলছে।
৭. পশ্চিমা বিশ্ব বিশ্বের শাসন কেন্দ্রকে ইউরোপ থেকে নিয়ে গিয়েছিল আমেরিকায়। সেটা সফল ছিল। এবার আমেরিকা থেকে বিশ্বের কেন্দ্রকে ইসরায়েলে নিয়ে যাবে। এজন্য গুগল, এইচপি, ডেল, মাইক্রোসফট সহ অসংখ্য করপোরেশনের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট ব্র্যাঞ্চ চলে গেছে দখলদৃত ফিলিস্তিনে। যেখানে রিসার্চ ব্রাঞ্চ সেখানেই রিসার্চার। ইতোমধ্যে ইজরায়েল বৃহত্তর ইজরায়েল গঠনের পথে এগিয়ে গেছে। বৃহত্তর ইজরায়েল গঠন করতে হলে প্রতিটা মুসলিম জনবহুল রাষ্ট্রের শক্তিকে বিনষ্ট করতে হবে। ইরাক-লিবিয়া-সিরিয়া-ইয়েমেনের কাজ শেষ। ইরানকে নাহয় নিজেরা ধ্বংস করতে পারবে, সৌদদের তো আর পারবে না। তাই প্ল্যান হল, ইরানকে দিয়ে সৌদদের এবং সৌদদের দিয়ে ইরানকে ধ্বংস করা। কিন্তু ইরান শক্তিশালী না হলে সৌদদের কীভাবে ধ্বংস করবে? সুতরাং ইরানকে শক্তিশালী হতে দাও।
৮. সারা পৃথিবীতে মুসলিম উম্মাহ্ তে বিভক্তিকে বৈশ্বিকভাবে স্থানীয় স্থানীয় হত্যাযজ্ঞে রূপ দেয়া। এজন্য কট্টর সালাফিবাদীদের মোকাবিলায় কট্টর শিয়াবাদী মতবাদের উত্থান দরকার। সাধারণ মুসলিমরা তো আর সালাফি জঙ্গীদের পিটিয়ে মেরে ফেলছে না বা সালাফি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জঙ্গী গ্রুপ তৈরি করছে না। এটা করতে হলে শিয়া মতবাদের উত্থান দরকার। এমনকি সালাফি মতবাদকে তীব্রভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমালোচনা করতে হলেও শিয়া মতবাদের উত্থান দরকার কেননা শিয়া ও সালাফি মতবাদ ছাড়া আর কোনও মতবাদের তেলের টাকা নাই। সুতরাং কোনও মতবাদ বিশাল আকৃতিতে প্রাতিষ্ঠানিক ও স্কলারলি ওয়েতে আধুনিক পন্থায় সালাফিজমকে আটকাতে পারছে না। সুতরাং সারা পৃথিবীতে শিয়া মতাদর্শীদের উত্থানে সহায়তা করো।
৯. মুসলিম উম্মাহর বর্তমান যে ভারসাম্যময় স্ট্রাকচার, সেটাকে বিনষ্ট করা। স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে অরাজকতা তৈরি করা কঠিন। অরাজকতা করতে হলে আগে ডিভাইড করতে হবে। ধর্মভিত্তিক ডিভিশন তৈরি করতে হলে বর্তমানে যে গড়ন আছে সেটাকে আগে বদলাতে হবে। যারা স্থিতিশীল মতাদর্শগুলোতে শান্তিতে আছে, তাদের নেতৃত্ব ও কথার গুরুত্বকে অসক্রিয় করতে হবে।
ইরানের টাকা ছড়ানোর (বা বিনিয়োগের) ধরণ
আসলেই কি তেলের টাকা এতটাই পাওয়ারফুল, যে তা মানুষের মন বদলে দিবে? আমরা জানি বিশ্ব অর্থনীতি প্রবলভাবে মূলত তেলনির্ভর এবং ইরান বিশ্বের চতুর্থ তেল রিজার্ভ। তেলের টাকা আমেরিকার মত দেশকেও কিনে ফেলতে পারে এবং তাই করেছে। দেখা যাক ইরান কীভাবে ইনভেস্ট করছে তেলের টাকা:
১. অনলাইন মিডিয়া:
একবার কল্পনা করুন, ইরানি মতাদর্শ (বাংলা কথা, শিয়া মতাদর্শ) প্রচারের জন্য ২০ লক্ষ ব্লগ, ১৫ হাজার তথ্যনির্ভর সাইট, ২০০ টি সংবাদপত্র এবং ১০০ টি ম্যাগাজিন কাজ করছে! বিভিন্ন মুসলিম জনপ্রধান দেশে তাদের মাতৃভাষায় মূলধারার মিডিয়া তৈরি করা ইরানের একটা মূল এজেন্ডা। বাংলা ভাষায় ইরানি মিডিয়া প্রবল পরাক্রমে গর্জন করছে। বাংলাদেশে ফেসবুক সহ সব সামাজিক মাধ্যমে দারুণভাবে শেয়ার হয় ইরানি ইনভেস্টমেন্টের পত্রিকাগুলোর খবর। কেন হবে না? খবরগুলো/ প্রবন্ধগুলো ভাল মানের ভাষাতে লেখা। গবেষণামূলক লেখা। সেগুলো পশ্চিমা মিডিয়ার ছাপ নয়। আমেরিকা-ইজরায়েলের অক্ষ থেকে যে ধরনের খবর আমরা পাই, সব একই ধরনের। সিএনএন, বিবিসি, ফক্স, রয়টার- সব। আল জাজিরা একটু ভিন্নধারার হলেও আজ কয়েক বছর ধরে তা জায়নিস্ট কন্ট্রোলে চলে গেছে। যত দেশের যত সংবাদপত্র সব এই পশ্চিমা মিডিয়ার এডিটেড কপি পেস্ট। ফলে, ইরানি মিডিয়ার লেখা স্বাভাবিকভাবেই ভাল লাগবে। কারণ তারা বুদ্ধিমান। তারা গ্যাপগুলো তুলে ধরছে। মানুষ সত্য জানতে চায়, তারা সত্যের অন্যদিক তুলে ধরছে। কাজটা কি এম্নি এম্নি সম্ভব হতো? কখনো না। তেলের টাকা দামি এডিটর এবং সাংবাদিকদের বেতনের নিশ্চয়তা দেয়। ওয়েব হোস্টিং ডিজাইন এবং মারকেটিঙের নিশ্চয়তা দেয়। এবং যখনি সংবাদটা মূল্যবান ও ভাবানোর মত হবে, তা এম্নিতেই ওয়েবে ভাইরাল হবে।
২. অফলাইন মিডিয়া:
ইরানের টাকায়/সহায়তায় অসংখ্য বই, পত্র-পত্রিকা ছাপা হচ্ছে সারা বিশ্বে। এর মধ্যে একটা বড় সংখ্যক বই ও পত্রপত্রিকা সরাসরি ইরানিদের হাত দিয়ে আসে না। তা সরাসরি শিয়াবাদের কথাও বলে না। বরং তা ছদ্ম শিয়াদের নিয়ে কাজ করে।
৩. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অ্যাক্টিভিটি:
কলেজ জীবনে আমার এক শিয়া বন্ধু ছিল। তারা অ্যাক্টিভ। সে আমাকে সেই ২০০১ সালের দিকেই ইরানি টাকায় ছাপানো পত্র পত্রিকা দেখতো এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত করতো। এই অনুষ্ঠানগুলো অ্যারেঞ্জ করা, সেখানে মূল্যবান ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়া, যারা মতবাদে বিশ্বাস করে তাদের সঠিকভাবে ট্রেইনআপ করা এবং মনোবল চাঙা রাখার কাজে টাকার কোন বিকল্প নেই। ইরানিয়ান কালচারাল সেন্টারে আমিও গিয়েছি। যেতে আমার কোন সমস্যা নেই। তাদের কর্মযজ্ঞের বিশালতা আমাকে অবাক করে দিয়েছে। তারা ‘ইসলামী সংস্কৃতি’ চালু করছে, যা যুগের পর যুগ ধরে তাদের গ্রহণযোগ্যতাকে তৈরি করছে।
৪. ধর্মীয় অ্যাক্টিভিটি:
আমার চেনা একটা শিয়া মসজিদেই ইরান থেকে ‘সহায়তা’ এসেছিল এক ধাক্কায় ত্রিশ কোটি টাকা। মাদ্রাসা নয়, অন্য কোন প্রতিষ্ঠান নয়, একটা মসজিদে যদি ত্রিশ কোটি টাকা আসে, এবং সেটাকে যদি ঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, অবস্থাটা কী হবে? বাংলাদেশে শিয়া মতাবলম্বীদের মসজিদগুলো এখন একেকটা বিশাল গ্রন্থাগারে এবং গবেষণাগারে রূপান্তরিত হয়েছে। এমন একটা মসজিদ ১০০ গবেষককে সারা জীবন লালন পালন করতে পারবে আর্থিক দিক দিয়ে। বাংলা ভাষায় তাদের বইয়ের সমৃদ্ধতা দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নাও হতে পারে। টাকা ব্যবহৃত হচ্ছে ধর্মমনস্কদের সুবিধা দেয়ার কাজে। ফলাফল আমরা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি।
ছদ্মশিয়া মতবাদের প্রবল উত্থান ঘটছে - ২ তাকিয়াঃ
তাকিয়া করে সুন্নি হয়ে থাকা শিয়াদের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসা সিরিয়াসলি! বিষয় এটাই।
শত শত বছর ধরে তাকিয়া করে থাকতে পারেন ঐতিহ্যবাহী শিয়া কিছু পরিবার। তাকিয়া বা নিজের প্রকৃত সত্যকে যে কোন মূল্যে গোপন রাখা হল শিয়া মতবাদের একটা কোর বিষয়। এই কাজটা করা হয় মূলত আদর্শিক স্যাবোটাজের জন্য।
একবার কল্পনা করুন, ইরানি মতাদর্শ (বাংলা কথা, শিয়া মতাদর্শ) প্রচারের জন্য ২০ লক্ষ ব্লগ, ১৫ হাজার তথ্যনির্ভর সাইট, ২০০ টি সংবাদপত্র এবং ১০০ টি ম্যাগাজিন কাজ করছে! বিভিন্ন মুসলিম জনপ্রধান দেশে তাদের মাতৃভাষায় মূলধারার মিডিয়া তৈরি করা ইরানের একটা মূল এজেন্ডা। বাংলা ভাষায় ইরানি মিডিয়া প্রবল পরাক্রমে গর্জন করছে। বাংলাদেশে ফেসবুক সহ সব সামাজিক মাধ্যমে দারুণভাবে শেয়ার হয় ইরানি ইনভেস্টমেন্টের পত্রিকাগুলোর খবর। কেন হবে না? খবরগুলো/ প্রবন্ধগুলো ভাল মানের ভাষাতে লেখা। গবেষণামূলক লেখা। সেগুলো পশ্চিমা মিডিয়ার ছাপ নয়। আমেরিকা-ইজরায়েলের অক্ষ থেকে যে ধরনের খবর আমরা পাই, সব একই ধরনের। সিএনএন, বিবিসি, ফক্স, রয়টার- সব। আল জাজিরা একটু ভিন্নধারার হলেও আজ কয়েক বছর ধরে তা জায়নিস্ট কন্ট্রোলে চলে গেছে। যত দেশের যত সংবাদপত্র সব এই পশ্চিমা মিডিয়ার এডিটেড কপি পেস্ট। ফলে, ইরানি মিডিয়ার লেখা স্বাভাবিকভাবেই ভাল লাগবে। কারণ তারা বুদ্ধিমান। তারা গ্যাপগুলো তুলে ধরছে। মানুষ সত্য জানতে চায়, তারা সত্যের অন্যদিক তুলে ধরছে। কাজটা কি এম্নি এম্নি সম্ভব হতো? কখনো না। তেলের টাকা দামি এডিটর এবং সাংবাদিকদের বেতনের নিশ্চয়তা দেয়। ওয়েব হোস্টিং ডিজাইন এবং মারকেটিঙের নিশ্চয়তা দেয়। এবং যখনি সংবাদটা মূল্যবান ও ভাবানোর মত হবে, তা এম্নিতেই ওয়েবে ভাইরাল হবে।
২. অফলাইন মিডিয়া:
ইরানের টাকায়/সহায়তায় অসংখ্য বই, পত্র-পত্রিকা ছাপা হচ্ছে সারা বিশ্বে। এর মধ্যে একটা বড় সংখ্যক বই ও পত্রপত্রিকা সরাসরি ইরানিদের হাত দিয়ে আসে না। তা সরাসরি শিয়াবাদের কথাও বলে না। বরং তা ছদ্ম শিয়াদের নিয়ে কাজ করে।
৩. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অ্যাক্টিভিটি:
কলেজ জীবনে আমার এক শিয়া বন্ধু ছিল। তারা অ্যাক্টিভ। সে আমাকে সেই ২০০১ সালের দিকেই ইরানি টাকায় ছাপানো পত্র পত্রিকা দেখতো এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত করতো। এই অনুষ্ঠানগুলো অ্যারেঞ্জ করা, সেখানে মূল্যবান ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়া, যারা মতবাদে বিশ্বাস করে তাদের সঠিকভাবে ট্রেইনআপ করা এবং মনোবল চাঙা রাখার কাজে টাকার কোন বিকল্প নেই। ইরানিয়ান কালচারাল সেন্টারে আমিও গিয়েছি। যেতে আমার কোন সমস্যা নেই। তাদের কর্মযজ্ঞের বিশালতা আমাকে অবাক করে দিয়েছে। তারা ‘ইসলামী সংস্কৃতি’ চালু করছে, যা যুগের পর যুগ ধরে তাদের গ্রহণযোগ্যতাকে তৈরি করছে।
৪. ধর্মীয় অ্যাক্টিভিটি:
আমার চেনা একটা শিয়া মসজিদেই ইরান থেকে ‘সহায়তা’ এসেছিল এক ধাক্কায় ত্রিশ কোটি টাকা। মাদ্রাসা নয়, অন্য কোন প্রতিষ্ঠান নয়, একটা মসজিদে যদি ত্রিশ কোটি টাকা আসে, এবং সেটাকে যদি ঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, অবস্থাটা কী হবে? বাংলাদেশে শিয়া মতাবলম্বীদের মসজিদগুলো এখন একেকটা বিশাল গ্রন্থাগারে এবং গবেষণাগারে রূপান্তরিত হয়েছে। এমন একটা মসজিদ ১০০ গবেষককে সারা জীবন লালন পালন করতে পারবে আর্থিক দিক দিয়ে। বাংলা ভাষায় তাদের বইয়ের সমৃদ্ধতা দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নাও হতে পারে। টাকা ব্যবহৃত হচ্ছে ধর্মমনস্কদের সুবিধা দেয়ার কাজে। ফলাফল আমরা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি।
ছদ্মশিয়া মতবাদের প্রবল উত্থান ঘটছে - ২ তাকিয়াঃ
তাকিয়া করে সুন্নি হয়ে থাকা শিয়াদের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসা সিরিয়াসলি! বিষয় এটাই।
শত শত বছর ধরে তাকিয়া করে থাকতে পারেন ঐতিহ্যবাহী শিয়া কিছু পরিবার। তাকিয়া বা নিজের প্রকৃত সত্যকে যে কোন মূল্যে গোপন রাখা হল শিয়া মতবাদের একটা কোর বিষয়। এই কাজটা করা হয় মূলত আদর্শিক স্যাবোটাজের জন্য।
আমার কয়েকটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি:
১. এক এলাকায় আল্লাহর একজন ওয়ালীর ওরশে গেছি।
সেখানে একজন ছদ্মশিয়া দক্ষ ব্যক্তির সাথে দেখা হয়। সে ব্যক্তি একই সাথে (তার কথা অনুযায়ী, আমি ভুল পাইনি):
ক. একজন পীর বা পীর হতে যাচ্ছে। পীর পরিবারের ছেলে, তার বাবা পীর।
খ. ফাজিল অথবা কামিল পাশ করা একজন আলিম।
গ. দর্শন বা এ জাতীয় কোনও বিষয়ে অনার্স বা মাস্টার্স করা একজন কলেজ শিক্ষক।
ঘ. ফারসি ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ (আমি তার ফারসি দক্ষতা দেখেছি)। অত্যন্ত দক্ষ আরবি, বাংলা ও ইংরেজিতেও।
সে নিজেকে প্রথমে সুন্নি দাবি করে। হানাফি দাবি করে। পরে তার খোলস বেরুতে থাকে এভাবে:
‘আবু বকর রা. কে শ্রদ্ধা করি। শ্রদ্ধা না করে উপায় কী?’
‘আমরা ৫০০ বছর আগে সপরিবারে বাংলাদেশে এসেছি। যিঁনি এসেছিলেন তিনি নিজের মেয়ের নাম রেখেছিলেন ‘আয়েশা’। এটা তাকিয়া করে করা হয়েছে। আমরা আসলে মৌলিকভাবে শিয়া। আমরা নিজেদের এভাবে বাঁচিয়ে রাখি। কাউকে বুঝতে দেই না। কিন্তু সময় হলে ঠিকই বলি।’
‘যত যাই হোক আমি বলে যাব আমি হানাফি, আমি সুন্নি। কিন্তু আহলে বাইত ছাড়া গতি নাই। মূল রহস্য আহলে বাইতে।’
‘আলা হযরত আহমাদ রেজা খান অত্যন্ত বড় মাপের আশেকে রাসূল দ.। আলা হযরতকে আল্লামা ইকবাল বলেছেন এ যুগের ইমাম আবু হানিফা। তিনি ইমাম আবু হানিফার মত হতে পারতেন, কিন্তু তাঁর রাগ অনেক বেশি। তিনি শিয়াদের বাতিল বলেন।’
২. ওরশে আমি গেছি আরেকজনও গেছেন অনেক দূরের এক শহর থেকে। মুরুব্বি মানুষ। পঁচাত্তরের উপরে বয়স। গাউসে পাক রা.’র বিরাট আশেক মনে হল কথা বার্তা শুনে। প্রচন্ড অ্যাক্টিভ এবং অনেক তথ্য জানেন। কথা বলছি। বললেন, ‘রেযাখান? উনিতো ইসলামকে বিভক্ত করেছেন ইসলামে ফেরকা এনেছেন।’ বললাম, ‘কীভাবে?’ যেখানে ইমাম খোমেনি বলেই দিয়েছেন মুসলিম মুসলিম ভাই ভাই সেখানে উনি শিয়াদের বাতিল বলেছেন।’
১. এক এলাকায় আল্লাহর একজন ওয়ালীর ওরশে গেছি।
সেখানে একজন ছদ্মশিয়া দক্ষ ব্যক্তির সাথে দেখা হয়। সে ব্যক্তি একই সাথে (তার কথা অনুযায়ী, আমি ভুল পাইনি):
ক. একজন পীর বা পীর হতে যাচ্ছে। পীর পরিবারের ছেলে, তার বাবা পীর।
খ. ফাজিল অথবা কামিল পাশ করা একজন আলিম।
গ. দর্শন বা এ জাতীয় কোনও বিষয়ে অনার্স বা মাস্টার্স করা একজন কলেজ শিক্ষক।
ঘ. ফারসি ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ (আমি তার ফারসি দক্ষতা দেখেছি)। অত্যন্ত দক্ষ আরবি, বাংলা ও ইংরেজিতেও।
সে নিজেকে প্রথমে সুন্নি দাবি করে। হানাফি দাবি করে। পরে তার খোলস বেরুতে থাকে এভাবে:
‘আবু বকর রা. কে শ্রদ্ধা করি। শ্রদ্ধা না করে উপায় কী?’
‘আমরা ৫০০ বছর আগে সপরিবারে বাংলাদেশে এসেছি। যিঁনি এসেছিলেন তিনি নিজের মেয়ের নাম রেখেছিলেন ‘আয়েশা’। এটা তাকিয়া করে করা হয়েছে। আমরা আসলে মৌলিকভাবে শিয়া। আমরা নিজেদের এভাবে বাঁচিয়ে রাখি। কাউকে বুঝতে দেই না। কিন্তু সময় হলে ঠিকই বলি।’
‘যত যাই হোক আমি বলে যাব আমি হানাফি, আমি সুন্নি। কিন্তু আহলে বাইত ছাড়া গতি নাই। মূল রহস্য আহলে বাইতে।’
‘আলা হযরত আহমাদ রেজা খান অত্যন্ত বড় মাপের আশেকে রাসূল দ.। আলা হযরতকে আল্লামা ইকবাল বলেছেন এ যুগের ইমাম আবু হানিফা। তিনি ইমাম আবু হানিফার মত হতে পারতেন, কিন্তু তাঁর রাগ অনেক বেশি। তিনি শিয়াদের বাতিল বলেন।’
২. ওরশে আমি গেছি আরেকজনও গেছেন অনেক দূরের এক শহর থেকে। মুরুব্বি মানুষ। পঁচাত্তরের উপরে বয়স। গাউসে পাক রা.’র বিরাট আশেক মনে হল কথা বার্তা শুনে। প্রচন্ড অ্যাক্টিভ এবং অনেক তথ্য জানেন। কথা বলছি। বললেন, ‘রেযাখান? উনিতো ইসলামকে বিভক্ত করেছেন ইসলামে ফেরকা এনেছেন।’ বললাম, ‘কীভাবে?’ যেখানে ইমাম খোমেনি বলেই দিয়েছেন মুসলিম মুসলিম ভাই ভাই সেখানে উনি শিয়াদের বাতিল বলেছেন।’
৩. বাংলাদেশের এক অত্যন্ত প্রভাবশালী (মেইনস্ট্রিম নয়) পীরের পরিবারের সদস্য, তিনিও ‘পীর’, এমনকি তাঁর অনেক খলিফাও আছে, তারাও ‘পীর’। সেই ‘পীর সাহেব’ প্রচন্ড অ্যাক্টিভ। সারা দেশের মাজার ওরশ খানকায় আসা যাওয়া করেন দরবার পার্থক্য না করেই।
‘ওইযে নাম শুনেছেন না, আবু হোরায়রা (রা.) ? আবু হোরায়রা হল ইসলাম ধর্মে পিটারের মতন। সেইন্ট পিটার যেমন যিশুর সাথে ছিল অল্প সময়, কিন্তু সে উল্টা খ্রিস্টধর্মকে বিকৃত করে ফেলল? তেমনি ইসলাম ধর্মে আবু হোরায়রা। রাসূলের (দ.) সাথে ছিল মাত্র ২ বছরও না। সে কীভাবে সবচে বেশি হাদিস বলে? আহলে বাইতের সদস্যরা নবীর (দ.) সাথে সবচে বেশি ছিল, সবচে বেশি হাদিস তো তারা জানে।’
‘উমাইয়াদের হাত দিয়ে হাদিস এসেছে। জাল হাদিসে ভরে গেছে। হাদিসের বড় বড় পন্ডিতরা জাল হাদিস লিখেছে।’ ‘ইমাম বোখারি ইমাম মুসলিম এরা অনেক ভুল হাদিস লিখেছে।’
‘যারা কাওয়ালী গায় তাদের কখনো দেখেছেন আবু বকর আর ওমরের (রা.) কথা গাইতে? আবু বকর আর ওমরের শান তারা গায় না তারা জানে।’ ( চলবে )
‘ওইযে নাম শুনেছেন না, আবু হোরায়রা (রা.) ? আবু হোরায়রা হল ইসলাম ধর্মে পিটারের মতন। সেইন্ট পিটার যেমন যিশুর সাথে ছিল অল্প সময়, কিন্তু সে উল্টা খ্রিস্টধর্মকে বিকৃত করে ফেলল? তেমনি ইসলাম ধর্মে আবু হোরায়রা। রাসূলের (দ.) সাথে ছিল মাত্র ২ বছরও না। সে কীভাবে সবচে বেশি হাদিস বলে? আহলে বাইতের সদস্যরা নবীর (দ.) সাথে সবচে বেশি ছিল, সবচে বেশি হাদিস তো তারা জানে।’
‘উমাইয়াদের হাত দিয়ে হাদিস এসেছে। জাল হাদিসে ভরে গেছে। হাদিসের বড় বড় পন্ডিতরা জাল হাদিস লিখেছে।’ ‘ইমাম বোখারি ইমাম মুসলিম এরা অনেক ভুল হাদিস লিখেছে।’
‘যারা কাওয়ালী গায় তাদের কখনো দেখেছেন আবু বকর আর ওমরের (রা.) কথা গাইতে? আবু বকর আর ওমরের শান তারা গায় না তারা জানে।’ ( চলবে )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks For You Comment