১০ই মহররমকে মুসলিম মিল্লাতের জাতীয় শহীদ দিবস কে নিয়ে আকাশ মোকাররমের লেখনি

      আশুরা নয় ১০ই মহররমকে মুসলিম মিল্লাতের জাতীয় শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে 
মিল্লাত মানবতার মুক্তির দিশায় ঐক্যবদ্ধ হউন। 




১০ই মহররম আসলেই পত্র পত্রিকায় মিডিয়ায় এমন কি বেশীরভাগ মানুষ এই দিনটিকে "আশুরা" বলে প্রচার করে অথবা আশুরা নামে অভিহিত করে থাকে। কিন্তু যদি একটু চিন্তা করি দেখব আশারা থেকে আশুরা বা দশ তারিখতো প্রত্যেকটি আরবি মাসেই আছে। তাহলে ১০ই মহররমকে শুধু আশুরা বলার কারণ কি ? এর পিছনে অনেক কারণ আছে। মূলত কারবালার প্রকৃত শিক্ষাকে আড়াল ও নস্যাৎ করার জন্যই ১০ই মহররমকে আশুরা নামে সম্বোধন করা হয়। ১০ই মহররমকে আশুরা শব্দ দিয়ে সম্বোধন করলে না পাওয়া যায় শাহাদাতে কারবালার শিক্ষা চেতনা, না পাওয়া যায় কোন ঈমানী দিশা বরং কারবালার শাহাদাতের শিক্ষা চেতনা লক্ষ্য উদ্দেশ্য আড়াল হয়।

ঐতিহাসিকভাবে ১০ই মহররম অনেকগুলো কারণেই গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে ও ঘটবে এই দিনে যা অনেকেই জানেন বা বর্ণনা করে থাকেন এই দিনে। কিন্তু ঐ ঘটনাগুলোকে ম্লান করে দেয় যে ঘটনা তা হলো কারবালা প্রান্তরে সত্য ও মানবতা রক্ষায় ইমামে আকবর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আহলে বায়েত রাদিআল্লাহু আনহুমার অতুলনীয় শাহাদাত। এই কারণে ৬১ হিজরির পূর্বের যে ১০ই মহররমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আর ৬১ হিজরির পরের ১০ই মহররমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য কোনভাবেই এক নয় বরং পরের ১০ই মহররমই আমাদের সবার জন্য কলেমা দ্বীনকে বুঝার প্রত্যক্ষ দিশা ও চেতনা।

১০ই মহররমে কারবালার প্রান্তরে ইমামে আকবর রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত সমগ্র মুসলিম মিল্লাতের জন্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য যা ব্যতীত মিল্লাতকে কল্পনা করা যায়না যেহেতু মুসলিম জাতির আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক সবদিক থেকে পূর্ণাংগ শিক্ষা চেতনা ও দিশা ও অস্তিত্বের স্মারক এই শাহাদাতের সাথে জড়িত। কারবালার প্রান্তরে ঈমান দ্বীন মানবতা তথা কলেমাকে সমুন্নত রাখার জন্য ইমামে আকবর ও মহান আহলে বায়েত রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সর্বোচ্চ কুরবানি তথা শাহাদাত সৃষ্টির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ও অতুলনীয় অদ্বিতীয়।

কেননা এই শাহাদাতের সাথে পৃথিবীর আর কোন শাহাদাতের তুলনা হয় না, এই শাহাদাতের সাথে জড়িয়ে আছে আদি অন্তের সকল শহীদানের ত্যাগ ও শাহাদাতের শিক্ষা এবং কেয়ামত পর্যন্ত সকলের জন্য আলো মুক্তির দিশা, এই শাহাদাতের সাথে জড়িয়ে আছে মুসলিম জাতির পূর্ণাংগ দিশা দিকদর্শন ও জাতীয় জীবন চেতনা কেমন হবে তার পূর্ণাংগ রুপরেখা, এই শাহাদাতের সাথে জড়িয়ে আছে মুসলিম জাতির গৌরবময় ইতিহাস, এই শাহাদাতের সাথে জড়িয়ে আছে বদর ওহোদের মাধ্যমে অর্জিত সকল কিছুকে সমুন্নত রাখার সুমহান শিক্ষা।

এই শাহাদাতের কারণে আজ হক বাতেল কেয়ামত পর্যন্ত চির পৃথক, এই শাহাদাতের কারণে সত্য তার আপন মহিমায় চির উজ্জ্বল, এই শাহাদাতের কারণেই একজন মুমিনের আত্মা ক্রয়-বিক্রয়ের উর্দ্ধে, এই শাহাদাতের সাথে জড়িত আছে আল্লাহ-রাসুলের প্রেম ও আল্লাহ- রাসুলের প্রতি সর্বোচ্চ উৎসর্গতা ও আত্মত্যাগের অসীম শিক্ষা চেতনা এবং জীবনের বিনিময়ে হলেও বাতেলের বিরুদ্ধে প্রাণপণে রুখে দাঁড়ানো এবং জীবন ও রাষ্ট্রকে জুলুম শোষণ অবিচারের ধারকদের হাতে তুলে না দেওয়ার অসীম সাহস শিক্ষা ও ঈমানি রুদ্র চেতনা এবং খেলাফতেরই পূনর্জীবনের দিশা, এক কথায় কলেমাভিত্তিক জীবন চেতনার পূর্ণাঙ্গ দিশা ১০ই মহররম শাহাদাতে কারবালা দিবস যাকে মুসলিম মিল্লাতের মহান ইমাম ইমাম হায়াত আলাইহি রাহমা সমগ্র মুসলিম মিল্লাত ও মানবিতার জন্য জাতীয় শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

যে শাহাদাতের মধ্যে মুসলিম মিল্লাতের সকল শিক্ষা চেতনা ও কলেমার প্রকৃত মর্ম নিহিত, অথচ সেই শাহাদাতে কারবালাকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য কতিপয় মুসলিম ছদ্মবেশধারীরা ১০ই মহররমকে আশুরা নামে অভিহিত করে কারবালার শিক্ষাকে আড়াল করছে অত্যন্ত সুকৌশলে। কারবালার শিক্ষা ভুলে যাওয়া মানে কলেমার প্রকৃত শিক্ষাই ভুলে যাওয়া অর্থাৎ অন্ধকারে পতিত হওয়া। কারবালার শাহাদাতের প্রকৃত মর্ম বুঝতে না দিয়ে নিজেদের মনগড়া কুফরি মতবাদ ছড়িয়ে দিয়ে মুসলিম মিল্লাতকে অন্ধকার ও কুফরিতে ডুবিয়ে রাখার ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে কারবালার শিক্ষা চেতনার বিপরীত বিভিন্ন অপশক্তি।

তাই এই সকল অপশক্তির ঘৃণ্য প্রতারণা উৎখাত করতে ও এই দিবসের প্রকৃত শিক্ষা, তাৎপর্য, দিশা-দিকদর্শন তুলে ধরতে, সত্য মানবতা প্রতিষ্ঠা করতে ১০ই মহররমকে আশুরা নয় মুসলিম জাতির শহিদ হিসেবে পালন করতে হবে। একমাত্র শহিদ দিবস হিসেবে পালন করলেই এই দিবসের প্রকৃত শিক্ষা, দিশা-দিকদর্শন পাওয়া ও তুলে ধরা সম্ভব এবং জাতির মুক্তি সম্ভব অন্যথায় জাতির পক্ষে এই দিবস থেকে শাহাদাতের আলোক রশ্মি পাওয়া সম্ভব নয়। বিশ্ব সুন্নী আন্দোলন মূলত কারবালার সেই শিক্ষা চেতনা ও আলোক ধারার সংগঠন। তাই বিশ্ব সুন্নী আন্দোলনে যোগ দিন এবং ১০ই মহররমকে জাতীয় শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে মিল্লাতের হারানো সবকিছুকে আবার ফিরে পাওয়ার জন্য খেলাফতে ইনসানিয়াত গড়ে তুলুন।

মুসলিম জাতির শহিদ দিবস
১০ই মহররম শাহাদাতে কারবালা দিবস।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাহাবী একটি বৈশিষ্ট্য, সাহাবী একটি চরিত্র, সাহাবী একটি আদর্শ, সাহাবী মানে উৎসর্গ, সাহাবী মানে সর্বোচ্চ বিশ্বস্ত! লেখক- আল্লামা ইমাম হায়াত এর দিশার আলোকে- আল্লামা মুফতি রেজাউল মোস্তফা কায়সার

প্রিয়নবীর সম্পর্কের চেয়ে জরুরী গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবান অপরিহার্য্য অন্য কোন সম্পর্কই নয় -"আল্লামা ইমাম হায়াত আলাইহি রাহমা"

(দলিল) নবী রাসূল আলাইহিস সাল্লাম গন সহ আল্লাহর ওলী গন চিরন্তন জীবিত ।