ইনসানিয়াত কারো শত্রু নয় বরং সবার আপন, নিজ জীবনেরই ভাষা -"মারুফ উদ্দিন"


ইনসানিয়াত কারো শত্রু নয় বরং সবার আপন, নিজ জীবনেরই ভাষা ।
▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄

ইনসানিয়াত যেহেতু মৌলিকভাবে সত্তাগত বিষয় সেহেতু ইনসানিয়াত সব মানুষের বিষয়; জীবনগত মর্ম অভিধান। সব মানুষ সত্তাগত দিক থেকে এক মানুষ। তাই মানুষ হিসেবে সবার পরিচয় এক অভিন্ন। অন্যদিকে মানবসত্তা বিবর্জিত ব্যক্তিকে আমরা অমানুষ বলি। এই অমানুষটাই খুন করে ডাকাতি করে অন্যের জীবনের স্বাধীনতাকে হরণ করাসহ সকল অন্যায় অপকর্মে লিপ্ত থাকে৷

মানুষ মানুষের আপন হবে এই কথা কি কেউ অস্বীকার করতে পারে? না, কখনোই তা পারে না। মানুষে মানুষে এই যে সম্পর্ক বন্ধন ভাতৃত্ব সেটিকে অক্ষুণ্ন রাখাই মানুষ হিসেবে মানবিক বৈশিষ্ট্যের অপরিহার্য দিক। আপনি যেই ধর্মেরই অনুসারী হোন না কেন, যেই আদর্শকেই লালন করেন না কেন তা কি আপনাকে মানুষ হিসেবে মানবিক বৈশিষ্ট্য গুনাবলী দৃষ্টি  নিয়ে চলার পথে বাধা সৃষ্টি করে নাকি আপনার মানবিক বিষয়গুলোকে শাণিত করে, বিকশিত করে?
এই প্রশ্নের উত্তর আপনাকেই খুঁজে নিতে হবে এবং অতঃপর তা গ্রহণ বা বর্জনের সিদ্ধান্তও আপনার।

অধর্ম উগ্রবাদ-বিকৃত মতবাদ কিংবা অসৎ আদর্শকে লালন করলে আপনি অমানুষে পরিণত হবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সত্য হল মানুষ প্রকৃতভাবে অমানুষ হওয়ার শিক্ষাকে গ্রহণ করে না, করতে পারে না। এটার পেছনে একটা ম্যাকানিজম কাজ করে যা মানুষকে তার অজান্তেই অমানুষে পরিণত করে।

আপনি যখন গোলাপ ফুলের মালা মানাবেন তখন সেখানে যত ফুল ব্যবহার করবেন সবগুলো গোলাপ ফুল হতে হবে। তদরুপ, আপনি ইনসানিয়াত গড়তে হলে সবাইকে মানুষ হতে হবে। মানুষ অমানুষের মিশ্রণে ইনসানিয়াত হয় না বরং বিকৃত হয়ে যায়। সুতরাং, প্রাথমিকভাবে আপনি যখন মানবতার কথা ভাববেন তখন আপনাকে দুনিয়ার সব মানুষের কথাই ভাবতে হবে। কোন প্রক্রিয়ায় কোন্ রুপরেখায় আপনি অখণ্ড মানবতার কথা ভাববেন সেটা পরবর্তী অধ্যায়।

উপর্যুক্ত আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল এটাই যে, ইনসানিয়াত সবার আপন। হাসপাতাল যেভাবে সবার জন্য চিকিৎসাগত দিক থেকে আশ্রয়স্থল সেভাবে ইনসানিয়াতও সব মানুষের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এখানে ইনসানিয়াতকে শত্রু হিসেবে ভাবার প্রশ্নই আসে না। আলো পানি অক্সিজেনকে কি কেউ শত্রু হিসেবে ভাবতে পারে? কখনোই না। বরং, এসব প্রাকৃতিক উপাদান না থাকলে প্রাণের অস্তিত্ব অসম্ভব। একইভাবে ইনসানিয়াত তথা সব মানুষের মধ্যে মানবিক ভ্রাতৃত্ববোধ মানবিক বৈশিষ্ট্য মানবিক চরিত্র মানবিক দৃষ্টি ইত্যাদি মানবিক গুনাবলী ব্যতীত তো মানবমণ্ডলীর জীবন অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।

আপনি মানুষ হিসেবে বিপদাপন্ন ব্যক্তির পাশে দাড়াচ্ছেন। এটিকে কি আপনি ধর্মবিরোধী আপনার আদর্শবিরোধী বিষয় হিসেবে সাব্যস্ত করতে পারবেন? কখনোই না। তদরুপভাবে, একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় যে সংকট তা হল স্রষ্টাপ্রদত্ত অধিকারবলে প্রত্যেকের নিজ নিজ জীবনের আত্মমালিকানা নিয়ে বিশ্বাস আদর্শ মতপথ নিয়ে স্বাধীনভাবে চলার পথ বাধাপ্রাপ্ত হওয়া কিংবা উৎখাত হওয়া। এই চরম সংকটে চরম মুমূর্ষু অবস্থায় কোন মানুষ কি মানবতার পাশে না দাঁড়িয়ে থাকতে পারে? না, কখনোই পারে না।
তাহলে আমরা বলতে পারি ইনসানিয়াত কারো শত্রু নয়; বরং সবার আপন এবং জীবনেরই ভাষা।

এখন আপনি ইনসানিয়াত অস্বীকার করেন না বা ভালবাসেন৷ তবে আপনি হয়তো জানেন না যে কিভাবে ইনসানিয়াত নিয়ে চলতে হবে। আপনি হয়তো জানেন না কিভাবে এন্টি ইনসানিয়াতের আগ্রাসন থেকে আপনি জীবন মানবতা জগতকে পুনরুদ্ধার করবেন। আপনি হয়তো জানেন না কোন্ বিষক্রিয়ার প্রভাবে ইনসানিয়াতের মৌলিক বিষয় ইনসানি সত্তা তথা মানবসত্তা হরণ হচ্ছে এবং কি করলে এই বিষক্রিয়াকে রোধ করা সম্ভব হবে। এসব কিছুর উত্তর খুঁজে পেতে আপনাকে খেলাফতে ইনসানিয়াতের অধ্যায় জানতে হবে।

কিডন্যাপারদের শিশু কিডন্যাপিং করার একটা অপকৌশল আমাদের সবারই জানা। এরা শিশুদেরকে আদর স্নেহের ধোঁকা দেয় এবং অতঃপর চকলেট দিয়ে তাদেরকে আকৃষ্ট করে শেষপর্যন্ত কিডন্যাপ করে। এন্টি ইনসানিয়াত গ্যাং একইভাবে অপকৌশলের দ্বারস্থ হয়। মানুষকে ধোঁকা দিয়ে মানবতাবিরোধী তথা জীবনের সত্যবিরোধী কোন না কোন মতবাদের অনুসারী করে মানুষের বিবেকবোধকে অচেতন করে এরা এন্টি ইনসানিয়াতের অপরাজনীতির প্রবর্তনা ঘটায়।

আপনি ইনসানিয়াতকে ভালবেসে যদি এন্টি ইনসানিয়াতের ধোঁকায় পড়ে যান তবে নিজের অজান্তেই একটা সময় আপনি ইনসানিয়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবেন। প্রাকৃতিক শক্তির পর সব মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রিত হওয়ার একমাত্র শক্তিশালী ক্ষেত্র হল রাষ্ট্রশক্তি। রাষ্ট্রশক্তিই সব মানুষের জীবনকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ, ইনসানিয়াতের প্রবাহধারা জারি থাকবে নাকি এন্টি ইনসানিয়াতের ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত থাকবে সেটি নির্ধারণ করে দেয় এই রাষ্ট্রশক্তি। কারণ রাষ্ট্রশক্তি কোন না কোন চালিকাশক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়৷ আর এই চালিকাশক্তি রাজনৈতিক দল দ্বারা পরিচালিত। আপনার কাজটা এখানেই, রাজনৈতিক দল কোন্ মতবাদের ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে এবং তা ইনসানিয়াত এর পক্ষশক্তি নাকি এন্টি ইনসানিয়াতের পক্ষশক্তি তা যাচাই করুন।

ইনসানিয়াতের পক্ষশক্তি খেলাফতে ইনসানিয়াত তথা রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের উর্ধে জীবনের কর্তৃত্ব মালিকানা সার্বভৌমত্বকে প্রাকৃতিকভাবেই সমুন্নত রাখবে। এন্টি ইনসানিয়াত এর বিপরীতে গিয়ে জীবনের উর্ধে রাষ্ট্রকে সমুন্নত রাখবে যাতে করে রাষ্ট্রকে গোষ্ঠীবাদি করার মাধ্যমে সব মানুষের জীবনের উপর অন্যায়ভাবে নিজের অবৈধ আধিপত্য বজায় রাখা যায়।

ইনসানিয়াতের পক্ষশক্তি খেলাফতে ইনসানিয়াত তথা প্রত্যেক মানুষকে বস্তুর উর্ধে মানবসত্তার প্রাকৃতিক সত্যকে অক্ষুণ্ন রাখবে এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বে সব মানুষের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করবে। অর্থাৎ, জনগণই হবে রাষ্ট্রের মালিক, প্রাকৃতিক সম্পদসহ রাষ্ট্রের সকল সম্পদের উপর সবার অংশীদারিত্ব মালিকানা খেলাফতে ইনসানিয়াতের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।

অরদিকে, এন্টি ইনসানিয়াত রাষ্ট্রকে জাতীয়তাবাদের অপরাজনীতির প্রক্রিয়ায় গোষ্ঠীবাদি করে ফেলে এবং রাষ্ট্রক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখে। এতে করে জীবনের আসল যে সত্য তথা জীবনের উর্ধে রাষ্ট্র নয় তা উৎখাত হয়। রাষ্ট্র জীবনকে দাস বানিয়ে ফেলে, জীবনের উপর অবৈধ কর্তৃত্ব ফলাতে থাকে এবং সম্পদের উপর জনগণের প্রাপ্য মালিকানা লুণ্ঠিত হয়। এখানে রাষ্ট্র তখন আর জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাকে না বরং রাষ্ট্র ক্ষমতাসীনদের নিকট কুক্ষিগত হয়ে স্বৈরাচারী দস্যুরাষ্ট্রে পরিণত হয়।

খেলাফতে ইনসানিয়াত এর মূল দিক আত্মিকগত। অর্থাৎ, আত্মিকসত্যকে জাগ্রত রাখার মাধ্যমে মানুষ মানবতাকে দুনিয়াব্যাপী জীবিত রাখার প্রক্রিয়া হল খেলাফতে ইনসানিয়াত। আর আত্মিকসত্যকে জাগ্রত করতে হলে জারি রাখতে হলে দুনিয়াব্যাপী সত্য জ্ঞানের অবাধ মুক্ত প্রবাহ অপরিহার্য। আলোর উপস্থিতিই অন্ধকারকে দূর করে। সত্যের জ্ঞানগত চর্চা রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও বিশ্ব ব্যবস্থা দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হলে নিষিদ্ধ হলে মানুষ আত্মিকসত্য থেকে বঞ্চিত হবে। আত্মিকসত্যই মানুষকে তার সত্তা সম্পর্কে সঠিক দিশা দিবে। পানি ছাড়া যেভাবে প্রাণ বাঁচে থাকে না। তদরুপ সত্য ছাড়া মানবাত্মা বাঁচে না অর্থাৎ মানবসত্তার মৃত্যু ঘটে।

বিপরীতে, এন্টি ইনসানিয়াত সত্যকে ভয় পায়। মিথ্যাকে পুঁজি করেই এন্টি ইনসানিয়াতের অবৈধ আধিপত্য টিকে থাকে। তাই সত্যকে রুদ্ধ করতে এন্টি ইনসানিয়াত সর্বত্র স্বৈরদস্যুতা অবৈধভাবে জারি রাখে। অখণ্ড মানবতা যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তশালী আলো হতে পারে তাই মিথ্যা মূর্খতার আঁধার তথা বস্তুবাদ উদ্ভূত জাতীয়তাবাদ কিংবা ধর্মের ছদ্মনামে অধর্ম উগ্রবাদী অপরাজনীতি দিয়ে ইনসানি সত্তাকে খুন করে এবং মানবতাকে করে খণ্ড বিখণ্ড, পরিণত করে একে অপরের শত্রুতে।

জীবনের প্রাথমিক সত্য হল ইনসান ইনসানিয়াত খেলাফতে ইনসানিয়াত এর প্রতিটি অধ্যায়। আর সত্যকে কেউ কি শত্রু ভাবতে পারে? কেবলমাত্র মিথ্যার ধারক বাহকরাই সত্যকে শত্রু ভাবতে পারে। কিন্তু আমরা সত্যের অনুসারীরা বিশ্বাস করি যে সত্য মিথ্যার অনুসারীদের জন্যও প্রয়োজন, যেমনটা সূর্যালোক সকলের জন্যই কল্যাণের, তা কেউ স্বীকার করুক অথবা নাইবা করুক।

মানবজীবনের সত্যের এই রুপরেখা পথ দিশা যিনি সমগ্র মানবমন্ডলীর নিকট উপস্থাপন করেছেন তিনি হলেন আমাদের সকলের জীবনের অপরিহার্য বন্ধু, বস্তুর উর্ধে মানবসত্তার পুনরুজ্জীবিতকারী, মানবতা ভিত্তিক জীবনের দিশা ও রাজনৈতিক দর্শন দল বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লবের প্রবর্তক আল্লামা ইমাম হায়াত।

সত্যের আপন সত্যের সাথে একাকার হবেন। যিনি জীবনের সত্যের সাথে যুক্ত করার জন্য সব মানুষকে ইনসানিয়াতের বন্ধনে আবদ্ধ করে খেলাফতে ইনসানিয়াত(Sovereignty of life & state & world of humanity) প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন আমরা ইনসানিয়াত প্রিয় মানুষেরা আল্লামা ইমাম হায়াত এর সেই দিশায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব কে শক্তশালী করে যাব।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাহাবী একটি বৈশিষ্ট্য, সাহাবী একটি চরিত্র, সাহাবী একটি আদর্শ, সাহাবী মানে উৎসর্গ, সাহাবী মানে সর্বোচ্চ বিশ্বস্ত! লেখক- আল্লামা ইমাম হায়াত এর দিশার আলোকে- আল্লামা মুফতি রেজাউল মোস্তফা কায়সার

প্রিয়নবীর সম্পর্কের চেয়ে জরুরী গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবান অপরিহার্য্য অন্য কোন সম্পর্কই নয় -"আল্লামা ইমাম হায়াত আলাইহি রাহমা"

(দলিল) নবী রাসূল আলাইহিস সাল্লাম গন সহ আল্লাহর ওলী গন চিরন্তন জীবিত ।