ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ও মিথ্যা ভিত্তিক অন্যায় সাম্প্রদায়িক রায় -"আল্লামা ইমাম হায়াত"।
ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ও মিথ্যা ভিত্তিক অন্যায় সাম্প্রদায়িক রায়।
===================================
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর কট্টর হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে ফেলে। এতে প্রায় ২ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। প্রায় ১৮ বছর পর এই প্রহসনমূলক রায় দেয়া হয়। ইন্ডিয়ায় এরূপ প্রহসন মূলক বিচারতো এখন মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে নিত্য নৈমিত্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদি হিংস্র অপরাজনীতির ভিত্তিতে সংঘটিত এসব রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মূলে নিহিত বিষয়গুলোর বিশ্লেষণ হিসেবে এই লেখা।
বিশ্বের সমগ্র মানবমন্ডলীকে সত্যের আলো জীবনের দিশা দিয়ে মিথ্যা আঁধার ও বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য, জুলুম-শোষন-পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য, জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দিকে বিকশিত হয়ে এগিয়ে চলার জন্য দয়াময় আল্লাহতাআলা ও প্রাণাধিক প্রিয়নবী রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দান করেছেন মুক্তির পূর্ণাংগ জীবন ব্যবস্থা ইসলাম, যার মূল বিষয় ঈমান। মহান জামে আওলিয়া কেরাম, শোহাদায়ে কেরাম ও মুমিন মুজাহিদ গণ যুগ যুগ ধরে সত্যের সে আলো, জীবনের সে দিশা মুক্তির সে পাথেয়ের ধারক বাহক হিসেবে দুনিয়ার প্রতিটি মানুষকে তা পৌছিয়ে দিয়ে সবাইকে কুফর ও বিনাশ থেকে মুক্ত রাখার এবং সত্যের দলে অন্তর্ভুক্ত করে সবার দোজাহানের জীবন রক্ষা ও সর্বাঙ্গীন সফল করার চেষ্টা করেছেন। মিথ্যা অবিচারের আধিপত্য মুক্ত শান্তিময় মুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু একই সাথে মিথ্যা-অরিচার-বর্বরতার ধারক মানবতার শত্রু মোশরেক কাফের জালেম উৎপীড়ক নরপশু সম্প্রদায় ও বিভিন্ন উপায়ে দুনিয়ার মানুষকে সত্য ও মুক্তির দ্বীন ইসলাম থেকে বঞ্চিত রেখে মানব জীবনকে অন্ধাকারে নিমজ্জিত রেখে দোজাহানে ধ্বংস করার চেষ্টা করে আসছে। সত্য মানবতাকে উৎখাতের জন্য এবং ইসলামের প্রাণ ঈমান আড়াল করে প্রাণাধিক প্রিয়নবী কেন্দ্রিক জীবনচেতনা নস্যাৎ করে আইন আমল মসআলার অপব্যবহার বাড়াবাড়ির প্রদর্শনী করে মানুষকে ধোকা দিয়ে প্রকৃত ইসলামের পরিবর্তে ভুয়া ইসলাম কায়েম করছে। ইসলাম ও মুসলিম মিল্লাতকে বিভিন্ন কায়দায় উৎখাত করে বিশ্ববাসীকে অন্যায় অধিপত্যে মিথ্যায় আবদ্ধ রেখে অধিকার হরণ করে অবিচার ও উৎপীড়নের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে ধ্বংস করার জন্য এরা বহুবিধ পন্থায় বহু শ্রেণীতে বহু রুপে কাজ করে আাসছে যার অন্যতম একটি হলো ইসলামের নিদর্শন ভেঙ্গে ধ্বংস করা, ইতিহাসের চিহ্ন চলার দিকচিহ্ন মুছে ফেলা। বহু পথে বহু পদ্ধতিতে বিভিন্ন বেশে কাজ করলেও এদের সবার উদ্দেশ্য ও স্বার্থ এক এবং মূলেও তারা এক অভিন্ন। মিথ্যা অনাচার বর্বরতার ধারক মানবসভ্যতা ধ্বংসকারী, মুক্তির বাধা, সত্যের শত্রু এই অপশক্তি যুগে যুগে অভিশপ্ত ফেরাউন-নমরুদ-আবু জেহেল-আবু লাহাব-কাফের এজিদ প্রভৃতি বিভিন্নবেশী নাস্তিক্যবাদী বস্তুবাদী পৌত্তলিক পাশবিক শক্তিরই অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা।
এদেরেই এক শ্রেণী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ইসলামের ছদ্ধবেশে পবিত্র আরব ভূমিতে আইয়ামে জাহেলিয়াতের শিরক কুফর গোত্রবাদ প্রতিষ্ঠা করে মিথ্যার রাজত্ব কায়েম করে বিশ্বব্যাপী প্রকৃত ইসলাম উ্যখাতে লিপ্ত হয়েছে এবং এই লক্ষ্যে আল আরবে ইসলামের মহাপবিত্র নিদর্শন সাহাবায়ে কেরামের মাজার শরীফ সমূহ ভেঙ্গেছে। যে মাজার শরীফ সমূহ পরবর্তী সকল মসজিদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, প্রেরণার উৎস ও পবিত্র নিদর্শন। সত্য ও মানবতার শত্রুদের অন্য কতিপয় গোষ্ঠী ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এবং আরেকটি গ্রুপ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বলয়ভূক্ত বিভিন্নদেশে মসজিদ মাদ্রাসা খানকাহ ভেঙ্গেছে। আরেক শ্রেণী ইন্ডিয়াতে মসজিদ ভেঙ্গেছে।
একই অপশক্তির বিভিন্ন গোষ্ঠী একই লক্ষ্যে অন্য বেশে মুসলমানদের জাতীয়তা, বিশ্বভ্রাতৃত্ব মন্ডিত ঈমানী জাতীয়তা ভেঙ্গে মানবতাকে পর্যুদস্ত করার চেষ্টা করছে। একই অপশক্তি একই চক্রান্তের অংশ হিসেবে আরব, ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এই উপমহাদেশেও মুসলিম অধ্যুষিত অনেক দেশ রাষ্ট্র ভেঙ্গে বিভক্ত করে সত্যের শক্তিকে হীনবল করার চেষ্টা করে আসছে। এদেরই অন্য ধারা আরেক রূপে স্বয়ং দ্বীনকে ভেঙ্গে দ্বীনের পূর্ণাংগতা ভেঙ্গে দ্বীনকে অরাজনৈতিক গন্ডীতে আবদ্ব কিংবা দ্বীনের নামে ঈমান পরিপস্থী ভ্রান্ত বস্তুবাদি একক গোষ্ঠীবাদি অপরাজনীতির মাধ্যমে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টার করছে, মুসলমানদের বিভক্ত রাখার ঐক্য ভাঙ্গার চেষ্টা করছে।
মুসলিম সমাজকে অভ্যন্তরীনভাবে হীনবল নিস্তেজ ও পঙ্গু করে দেয়ার হীন লক্ষ্যে স্বাভাবিক পর্দার পরিবর্তে অতিপর্দার সীমালংঘন, নানাবিধ বিকৃত ধারণা ও কুসংস্কারের মাধ্যমে বোনদের মানসিক পঙ্গু ও অসচেতন রেখে ঈমান-এলেম-জীবনের বিকাশ রুদ্ধ করে, মানবসত্তা অস্বীকার করে, ভোটাধিকার আন্দোলন ও রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে ঈমানী দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়ে মুসলিম সমাজকে পর্যুদস্ত করে দেয়া হয়েছে যাতে পরিবারগুলো দ্বীনের কেন্দ্র, শক্তি, প্রেরণা ও চেতনার আধার না হতে পারে বরং বিপরীত হয়। ঈমান তথা সত্যপোলদ্ধি হরণ করা ও মানবতা ধ্বংস করার জন্য এদেরই বিভিন্ন পদ্ধতি হলো ভাষা-গোত্র-অর্থ-বর্ণ-পেশা-লিংগ প্রভৃতির ভিত্তিতে বস্তুবাদী উপসর্গ ভিত্তিক শ্রেণী, বৈষমা, বিভেধ, হিংসা, সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে জাতীয় শক্তি ভেঙ্গে দেয়া । এদেরই পূর্বসূরী আইয়ামে জাহেলিয়াতের একটা ধারা দুনিয়াকে আঁধার ও পশুত্বে নিমজ্জিত করার জন্য ভেঙ্গে ছিল সত্য-মানবতা-অধিকার ও প্রগতির রক্ষাকবচ পবিত্র খেলাফতে ইনসানিয়াত।
আর এভাবে সত্যদ্রোহী, মানবতা পরিপন্থী, মানুষের দুনিয়া আখেরাত বিনষ্টকারী এই অপশক্তি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পন্থায় সত্য দ্বীনকে উৎকাতের লক্ষ্যে ঈমান হরণকরা, দ্বীন বিকৃত করা, অখন্ড জাতীয়তা ভেঙ্গে দেয়া, মুসলিম ঐক্য ভেঙ্গে ফেলা, সত্যের স্মারক প্রেরণার উৎস বিভিন্ন নিদর্শন ও ইতিহাসের সাক্ষ্যচিহ্ন মাজার মসজিদ ভাঙ্গা, মুসলিম অধ্যুষিত দেশ রাষ্ট ভাঙ্গা, মুসলমানদের উপর অবিরত হত্যা অবরোধ নিপীড়ন চালিয়ে যাওয়া প্রভৃতি একই লক্ষ্যে একই ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন অধ্যায় ও অংশ মাত্র।
আর এসব সবই সম্ভব হচ্ছে যার অন্যতম প্রধান কারণ আমার নিজেরা দীর্ঘদিন ধরে ভূল নেতৃত্বে, বিকৃত পথে চলে আসছি, আমাদের নিজেদের ঈমানী দায়িত্বে অবহেলা অনৈক্যবদ্ধ বিশৃংখল থাকা এমনকি ঐ অপশক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগীতা করে তাদের কালোহাত শক্তিশালী করে বিশ্বাসঘাতকতা করা। কারণ যে বস্তুবাদি মতবাদ মসজিদ ভাঙ্গে, যে বাতিল ফেরকা মাজার ভাঙ্গে, যারা দ্বীনকে অপুর্ণাংগ ও জাতিকে পংগু করার চেষ্টা করে, যারা জাতীয়তা ভঙ্গ করে, যারা মুসলিম অধ্যুষিত দেশ রাষ্ট্র ভেঙ্গে টুকরা করে দেয়, যারা মুসলিম ঐক্য ঈমানী ভ্রাতৃত্ব হতে দেয়না বা ভেঙ্গে দিতে বিভক্ত রাখতে চেষ্টা করে তার বাহ্যিক বিভিন্ন রুপ নাম হলেও মূলে একই, উদ্দেশ্যও একই। এদের কারো সহযোগী বা সমর্থক হওয়া মানেই মাজার ভাঙ্গা, মসজিদ ভাঙ্গা তথা দ্বীন উংখাতের সাথে নিজে যুক্ত হওয়া।
পবিত্র মসজিদ ভেঙ্গে রাম মন্দির বানানোর এই জঘন্য দস্যুপনা মূলতঃ দুনিয়ায় তাওহীদ রেসালাতের আলোর বিপরীতে জীবন সত্যের বিপরীতে মিথ্যা নাস্তিকতাবাদ এবং বস্তুবাদেরই অন্ধ কলুষতায় দুনিয়ার মানুষকে আবদ্ধ করার চেষ্টা। নাস্তিকতার অন্ধত্ব থেকেই বস্তুবাদ উদ্ভূত এবং বস্তুবাদ থেকেই উদ্ভূত বিভিন্ন উপসর্গের একটি পৌত্তলিকতাবাদের মাধ্যমে মানব জীবন নোংরা মিথ্যায় ডুবিয়ে ধ্বংস করা। ব্যাক্তি আত্মায় বস্তুবাদ, বস্তুবাদি আত্মাপরিচয় ও বস্তুবাদি দৃষ্টিভঙ্গী নাস্তিকতারই একটা বিশেষ পর্যায় ও অভিব্যাক্তি মাত্র। এভাবে তাওহীদ অভিমুখী জীবন তথা মহান প্রিয়নবীকেন্দ্রিক ঈমানী আত্মপরিচয় ও জীবনচেতনার বিপরীতে বস্তুবাদি উপসর্গ ভিত্তিক আত্মপরিচয় বা জাতীয়তা, মহামহিম নবীরাসুলদের অতুলনীয় উচ্চ মর্যাদা-নিষ্পাপতা-পবিত্রতা-বিশেষত্ব-নির্ভূল ও পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অস্বীকার করে বস্তুবাদি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখানোর মাধ্যমে কৌশলে নবুওয়াত রেসালাত অস্বীকার ব্যাক্তিজীবনে বস্তুবাদি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখানোর মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনে বস্তুবাদি তথা রামদাস বা হৃদয়ে পৌত্তলিকতার মন্ডপ বানানোরই নামান্তর। একইভাবে মসজিদ ভেঙ্গে রামমন্দির, তাওহীদ রেসালাতের পরিবর্তে শিরক কুফর আর মুসলিম অধ্যুষিত দেশ রাষ্ট ভেঙ্গে ন্যায় ও মানবতার পরিবর্তে ভাষা গোত্র প্রভৃতিকে মূখ্য করে মূলতঃ রাম রাজ্যই প্রতিষ্টা করা হয়। বিভিন্ন কায়দায় বস্তুপূজা অগ্নিপূজা প্রভূর পূজা বস্তুবাদি নাস্তিক্যবাদী পৌত্তলিকতারই বিভিন্নমূখী বহিঃপ্রকাশ যাহা শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান সমূহ এবং সমগ্র রাষ্টব্যবস্থা জীবনব্যবস্থা পর্যন্ত গ্রাস করেছে।
তবে মনে রাখতে হবে মসজিদ মাজার নিদর্শন দেশরাষ্ট্র ভাঙ্গা যত গুরুতরই হোক দ্বীন উৎখাতের লক্ষ্যে এগুলো ভেঙ্গে দ্বীনের উপরিকাঠামো ভাঙ্গা হয়। কিন্তু যখন হৃদয় থেকে ঈমান উৎখাত করে কুফরের বীজ বপন করা হয় আত্মায় কুফর কায়েম করা হয় তখনই আসল কাঠামো বা মুলে আঘাত করা হয়। সত্য ও সাম্যের স্মারক মসজিদ ভেঙ্গে যখন কাল্পণিক রামের নামে নাস্তিক্যউদ্ভূত বস্তুবাদি পৌওলিকতার মন্ডপ মন্দির নির্মাণ করে অলীক বিষয়ে মানবাত্মা নিবেদিত করা হয় আর আত্মায় চেতনায় ঈমানের পরিবর্তে শিরক কুফরা বস্তুবাদিতা প্রোথিত হয় তখন একই বিষয়ই হয়ে দাঁড়ায়। তবে পাথর্ক্য এই একটা উপরিকাঠামোগত আরেকটি আত্মিক কাঠামোগত। এই আত্মিক হত্যাকারীরাও বিভিন্ন কায়দায় কাজ করে যাচ্ছে। ইসলামের নামে বেনামে উভয় পন্থায় কাজ করে যাচ্ছে।
দয়াময় আল্লাহাতাআলা থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য এরা আল্লাহতাআলার মহান রাসুল থেকে বিচ্ছিন্ন করে। মহান রাসুল সব নবী রাসুলের মূল রাসুল আমাদের প্রাণাধিক প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে আল্লাহর নূর, সকল সৃষ্টির উৎস, অস্তিত্বের মূল, আল্লাহতাআলার সাথে সম্পর্কিত থাকার একমাত্র অপরিহার্য শর্ত ও কেন্দ্রস্থল, দৃশ্য-অদৃশ্যের সকল তত্ত্বের কেন্দ্র, রহমত ও শাফায়াতের নবী, আল্লাহতাআলার সকল ইসিম ও সিফাতেরও রাসূল এবং অন্যান্যা ঈমানী বিষয় অস্বীকার করে ভুলিয়ে নিছক বস্তুবাদি দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখানোর মাধ্যমে মানুষের আত্মার ধ্বংস মসজিদ ধবংসের চেয়েও মারাত্মক বিষয় যার কূফলও অনেক সুদূর প্রসারী। কারণ প্রাণাধিক প্রিয়নবীর সাথে সম্পর্ক হারালে মানুষের জীবনে আর কিছুই থাকেনা। আত্মিক হত্যা দৈহিক হত্যার চেয়েও মারাত্মক।
প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাজার ও দেশ রাষ্ট্র ভেঙ্গে দ্বীনের উপরি কাঠামোতে আঘাত করা হয়। মুমিনদের হত্যা করে দ্বীনের অভ্যন্তরীন কাঠামোতে আঘাত করা হয় এবং ঈমান নষ্ট করে কলব অন্ধ করে প্রাণাধিক প্রিয়নবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে একেবারে মূল কাঠামো বা আত্মিক কাঠামোতে আঘাত করা হয়। অনেকে উপরি কাঠামোর প্রকাশ্য আঘাত বুঝতে পারলেও আত্মিক কাঠামোতে আঘাত বুঝতে পারে না। যদি আমরা আমাদের প্রাণাধিক প্রিয়নবীর প্রতি সর্বোচ্চ প্রেম ও বিশ্বস্ততায় অটল থাকি তাহলে আমাদের আত্মিক কাঠামো কেউ ধ্বংস করে অস্তিত্ব বিনাশ করতে পারবেনা। প্রাণাধিক প্রিয়নবীর প্রেমের শক্তিই আত্মার সঞ্জীবনী শক্তি এবং জীবনের আলো যা মানুষকে আল্লাহতাআলার নৈকট্যে পৌছায়, সত্য - মিথ্যা বুঝার ক্ষমতা দেয় এবং সকল পতন থেকে বাঁচায়। কারণ প্রাণাধিক প্রিয়নবীই সবার জন্য সত্যের কেন্দ্রস্থল। প্রাণ ছাড়া যেমন দেহ জীবিত থাকে না তেমনি প্রাণাধিক প্রিয়নবী ছাড়া কোন সত্য হয় না, মানবজীবন হয় না। যথার্থভাবে প্রাণাধিক প্রিয়নবীর না হয়ে কেউ কোন ভাবেই আল্লাহতাআলার হতে পারে না। আর এই জন্য অসিলা হিসাবে অবশ্যই সম্পর্কিত থাকা প্রয়োজন আত্মিক আঘাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে যুগের এমন নেতৃত্ব। যে নেতৃত্ব আধ্যাত্মিক রাজনৈতিক সকল দিক থেকে জাতিকে স্পষ্ট দিশা দিয়ে সত্যের মহাকেন্দ্র প্রিয়নবীর দিকে পরিচালিত করতে পারে, মিথ্যার সকল ফাঁদ ও কূটচক্র থেকে মুক্ত রাখতে পারে।
এজন্য দ্বীনের উপরিকাঠামো থেকে শুরু করে আত্মিক কাঠামো তথা মূলে পর্যন্ত আঘাত তথা অস্তিত্বের সর্বদিকে হামলার এই বিপর্যয় অবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়ার অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে ভূল নেতৃত্ব ও ভ্রান্ত দল মত পথ থেকে মুক্ত হয়ে সত্যের দিশারী সঠিক নেতৃত্বে সঠিক পথ ও পন্থায় ঐক্যবদ্ধ ভাবে এগিয়ে যাওয়া। তা না হয় আমরা মসজিদের জন্য শোক দু:খ প্রকাশ করে এবং দুর্বৃত্তদের নিন্দা করে লাভ নেই বরং প্রহসন হবে। ভুল নেতৃত্ব ভুল পথ থেকে মুক্ত না হলে সঠিক নেতৃত্বে যুক্ত হয়ে ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয়ভাবে এগিয়ে না এলে আমরা কখনও মুক্তি পাবো না। অসত্য ও পাশবিকতা থেকে রেহাই পাবো না। আমাদের অসংগঠিত থাকা ও অলসতা নিষ্কৃয়তা উদাসীনতার সুযোগে ইসলামের ছদ্মবেশী বস্তুবাদি প্রতারক বাতিল ফেরকা যারা পবিত্র আরবে ইসলামের মহানিদর্শন মাজার ভেঙ্গেছে, সৌদি গোত্রবাদি ওয়াবি মুলুকিয়ত কায়েম করেছে, দ্বীনবিধ্বংসী সে শয়তানদের এজেন্ট পালিত দাসগণ এখানে মসজিদ ভাঙ্গার প্রতিবাদের নাটক করে নিজেদের মুসিলম দেখানোর প্রহসন করে মানুষকে ধোকা দিয়ে যাচ্ছে।
সত্য ও মানবতার পক্ষশক্তি অনৈক্যবদ্ধ দুর্বল হয়ে সেখানে মিথ্যা ও জালেম শক্তি প্রবল হয় ফলে সবকিছু তাদের শিকার হয়, সভ্যতা আক্রান্ত হয়, মানবতা বিপন্ন হয়। এখনো আমাদের যা কিছু আছে তা যদি রক্ষা করতে হয় এবং মিল্লাত ও মানবতার ভবিষ্যত গড়তে হয় বর্তমানের কাজের উপরই অসিলা হিসেবে নির্ভর করবে এবং এক মূহুর্ত নষ্ট না করে আমাদের তৎপর হতে হবে। অন্ধত্ব ও কুসংস্কারের ধারক সভ্যতাবিধ্বংসী মানবতালুন্ঠকারী ঘৃণ্য অপশক্তি কর্তৃক ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ধ্বংস ও মুসলিম গণহত্যার শোকাবহ এই উপলক্ষে আমরা ঈমান ও দ্বীন পরিপন্থী সকল বাতিল ও তাদের বিভিন্নমূখী অপতৎপরতার সম্পর্কে মুমিন ভাইবোনদের জাগ্রত ও সতর্ক হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
সর্বস্তরের সকল ঈমানদার তথা সুন্নি ভাইবোন সকল পীর-আলেম-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবি-ব্যবসায়ী-শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-ছাত্রী প্রত্যেককে যুগের অপিরহার্য্য ঈমানী দায়ীত্ব হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল বাতিলের আগ্রাসন রুখে দাঁড়াতে, দ্বীনের প্রতিরক্ষা, মিল্লাত ও মানবতার স্বাধীনতা পূনরুদ্ধারে এবং মিথ্যা-অবিচার-জুলুম-শোষনের বর্বর চক্র প্রতিহত করে সত্য-সুবিচার-মানবতা-অধিকার পূনঃ প্রতিষ্ঠিত জন্য খেলাফতে ইনসানিয়াত (authority of life & state & world of universal humanity based on natural justice and divine values) এর লক্ষ্যে একমাত্র ইনসানিয়াত বিপ্লব প্রতিষ্ঠা করতে। যেখানে ১) প্রতিটি মানুষ তার বিশ্বাস ও আদর্শ নিয়ে চলবে, ২) রাষ্ট্র ও সম্পদের মালিক হবে প্রতিটি মানুষ, ৩) সত্য ও জ্ঞান এবং সম্পদের মুক্ত প্রবাহ থাকবে। কোন বর্বর গোষ্ঠীর হামলারও শিকার হবে না, প্রতারিত হয়ে না বুঝে মিথ্যারও শিকার অনুসারী হবে না কোন মানুষ।
এ প্রসঙ্গে আমরা সকলকে এ মর্মেও সজাগ ও সর্তক হওয়ার আহবান জানাচ্ছি যে, সরাসরি মসজিদ ভেঙ্গে যেমন ইসলামকে উৎখাতের অপচেষ্টা চলছে তেমনি মসজিদকে বিভিন্ন কায়দায় জবরদকল অপব্যবহারের মাধ্যম করে ও অত্যন্ত কৌশলে ঈমান হরণ ও দ্বীন ধ্বংসের অপচেষ্টা চলছে । যে অপচেষ্টা সমূহের প্রতিক্রিয়াও মসজিদ ভাঙ্গার চেয়ে কম নয বরং অনেক ক্ষেতে বেশি । ইসলামের ছদ্মবেশে ইসলামের মূল আকিদা সুন্নী আকিদা থেকে বিচ্যুত করে ঈমান হরণ, দ্বীন বিকৃতি ও মুসলিম ঐক্য বিনষ্ট করে দ্বীন ধ্বংসকারী বিভিন্ন বাতিল ফেরকার প্রচারক, মুসলিম দাবী করেও এর বিপরীত দ্বীনদ্রোহী বিজাতীয় মতবাদের সমর্থক কিংবা সত্যদ্রোহী কোন কুফরী সরকার ও রাষ্ট ব্যবস্থার সমর্থক আলেমের বেশধারী বিপরীত এজেন্টেদের মসজিদের ঈমান হিসেবে অনুপ্রবেশ দ্বীনের জন্য এক ভয়াবহ বিষয়। বাতিলফেরকা, বস্তুবাদি মতবাদ ও স্বৈর রাষ্টব্যবস্থার সমর্থকদের এক্তেদায় যেমন নামাজ হতে পারেনা তেমনি এসব অনুপ্রবেশকারী মসজিদকে মাধ্যম করে ঈমান বিধ্বংসী তৎপরতা চালায় ।
নানাবিধ বাতেলের অবৈধ আস্তানা বানিয়ে মসজিদের প্রবিত্রতা বিনষ্ট করে এবং মানুষকে বিপথে পরিচালিত করে । পোষাকে কথায় আমলে ছদ্মবেশ নিয়ে ঈমান হরনকারী দ্বীন বিকৃতীকারী কদযৃ কুসংস্কারাচ্ছন্ন একটা প্রতারক বাতিল ফেরকাতো চিল্লা গাস্ত এস্তেমা ইত্যাদির নামে মসজিদকে মাধ্যম করেই মানুষকে পথভ্রষ্ট দ্বীনচ্যুত করে যাচ্ছে। ঈমান বাদ দিয়ে কতিপয় আমলের প্রদশনীকে মূখ্য করে, আখেরাতের অতিরঞ্জিত আতংক দেখিয়ে, ঘরবাড়ী পারিবারিক রাজনৈতিক ও অন্যান্যা দ্বীনি অপরিহার্য দায়িত্ব থেকে বিছিন্ন করে, একপ্রকার মানসিক অস্বাভাবিকতা ও জীবনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে বাতেল ফেরকা ইতিমধ্যে অনেক মসজিদকে হাড়িপাতিল ব্যগব্যাক্স লাকড়ি ইত্যাদি দিয়ে প্রায় স্থায়ীভাবে তাদের নোংরা বসতবাড়ী বানিয়ে অন্যভাবে মসজিদ ধ্বংস করে যাচ্ছে।
এভাবে বাতিল ঈমাম অনুপ্রবেশ, তফসির ওয়াজ ইত্যাদির নামে মসজিদে বসে কোরআনুল করীম ও হাদিস শরীফের অফব্যাখ্যা, মসজিদে বসে ভ্রান্ত বক্তব্য, বাতিল মতবাদ মাধ্যম করার অপচেষ্টা, অনেক মসজিদে বিভিন্ন বাতেলের লিখিত ঈমানপরিপন্থী অবৈধ খোতবা পড়া, নির্বাচন এলে সাহায্যের নামে দ্বীন পরিপন্থি বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের বিশেষতঃ বাতিল ফেরকার লোকদের মসজিদে গিয়ে বক্তব্য দিয়ে মসজিদের চরম অসম্মান, বিভিন্ন দেশে ঈমান পরিপন্থি বিভিন্ন বাতিল ফেরকা ও বস্তুবাদি মতবাদ অনুসারী কুফরী সরকারের নিয়োজিত আলেমবেশী বিশ্বাসঘাতক শয়তানের ঈমাম হিসেবে তাদের পক্ষে সত্যের বিপক্ষে সত্যকে দাবিয়ে রাখার জন্য এবং সমাজ হাতে রাখার জন্য নিয়োগ, অনেক যায়গায় নিছক ক্ষুদ্র গোষ্ঠীস্বার্থে এমনকি নিদিষ্ট ব্যক্তির স্বার্থে ব্যক্তির প্রচার ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে মসজিদের পবিত্রতা মর্যাদাই শুধু বিনষ্ট করা হচ্ছে না বা মসজিদকে কেবল নিস্কৃয় করছেনা বরং বিপরীত স্বার্থে সত্যের বিপক্ষে মসজিদের ভয়ানক অপব্যবহার করছে ।
কোন মসজিদ বাতিলের দখলে চলে যাওয়া অবর্ণনীয় ধ্বংসাত্মাক মর্মান্তিক বিষয়। মসজিদ ঈমানদারের, কিন্তু খুবই দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় ঈমানদারগণ আজ অনেক মসজিদে বাতিল ঈমাম ও বাতিল খোতবার কারণে নিদিষ্ট জামায়াতে নামাজ পড়তে পারছেনা, অনেক মসজিদে জুমা আদায় করা যাচ্ছেনা। কোন অপশক্তি যেন আমাদেরকে এবং আমাদের মসজিদ বা কোন প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসও করতে না পারে বিপরীতে ব্যবহারও করতে নারে উভয় দিকে আমাদেরকে সজাগ ও সক্রিয় হতে হবে। আমাদের ঈমানী জীবন, আমাদের সমাজব্যবস্থা, রাষ্টব্যবস্থা ও সমগ্র জীবনব্যবস্থা এবং আমাদের মাজার, মসজিদ প্রতিষ্ঠান একই সূত্রে গাঁথা।
দ্বীন-জাতি-জাতীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ থেকে কোন ঈমানদার ভাইবোন আলাদা নয়। মুসলিম এই কারণে হত্যা, নির্যাতন অধিকার হরণ, প্রিয়নবী সর্ম্পকে অন্ধ করে আল্লাহতাআলা থেকে বিচ্ছিন্ন করা, মাজরা মসজিদ প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দেয়া বা জবরদখল, সত্যের সংগঠন আন্দোলন নেতৃতের উপর হামলা, জাতীয়তা হরণ, দেশরাষ্ট ভেঙ্গে দেয়া কিংবা অবৈদ মতপথ চাপিয়ে দেয়া এসব কোন কিছুও বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। পথপদ্ধতি আলাদা হলেও এসব চক্র পরস্পর আলাদা নয়।
দিকে দিকে ভাইবোন শিশু পর্যন্ত হত্যা, অবর্ণনীয় নির্যাতন, সহায়সম্পদ হরণ, আতংকিত নিপিড়ীত মানবাতর ক্রন্দন, মসজিদ মাজার প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসস্তুপ বা বিকৃতরূপ, মসুলিম অধ্যুষিত প্রতিটি দেশরাষ্ট তথা সারা জাতির বিরূদ্ধে ক্রমাগত ভয়ানক, দস্যুতার আস্ফালন, দিশাহারা ভাইবোনদের বাতিলের শিকার হয়ে দলে দলে ঈমানহারা হওয়ার এই চরম দুঃসময়ে জাতির একজন সদস্যেরও জাতীয় মুক্তির কার্যকরী ব্যবস্থা ও বিশ্ব সুন্নী আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে বাতিল চক্রের ইচ্ছা পুরণের অবকাশ নেই। (চলবে)
================
- আল্লামা ইমাম হায়াত
(বস্তু উর্ধ্বে মানবসত্তার প্রবক্তা এবং বিশ্ব সুন্নী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লবের প্রবর্তক)।
===================================
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর কট্টর হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে ফেলে। এতে প্রায় ২ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। প্রায় ১৮ বছর পর এই প্রহসনমূলক রায় দেয়া হয়। ইন্ডিয়ায় এরূপ প্রহসন মূলক বিচারতো এখন মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে নিত্য নৈমিত্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদি হিংস্র অপরাজনীতির ভিত্তিতে সংঘটিত এসব রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মূলে নিহিত বিষয়গুলোর বিশ্লেষণ হিসেবে এই লেখা।
বিশ্বের সমগ্র মানবমন্ডলীকে সত্যের আলো জীবনের দিশা দিয়ে মিথ্যা আঁধার ও বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য, জুলুম-শোষন-পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য, জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দিকে বিকশিত হয়ে এগিয়ে চলার জন্য দয়াময় আল্লাহতাআলা ও প্রাণাধিক প্রিয়নবী রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দান করেছেন মুক্তির পূর্ণাংগ জীবন ব্যবস্থা ইসলাম, যার মূল বিষয় ঈমান। মহান জামে আওলিয়া কেরাম, শোহাদায়ে কেরাম ও মুমিন মুজাহিদ গণ যুগ যুগ ধরে সত্যের সে আলো, জীবনের সে দিশা মুক্তির সে পাথেয়ের ধারক বাহক হিসেবে দুনিয়ার প্রতিটি মানুষকে তা পৌছিয়ে দিয়ে সবাইকে কুফর ও বিনাশ থেকে মুক্ত রাখার এবং সত্যের দলে অন্তর্ভুক্ত করে সবার দোজাহানের জীবন রক্ষা ও সর্বাঙ্গীন সফল করার চেষ্টা করেছেন। মিথ্যা অবিচারের আধিপত্য মুক্ত শান্তিময় মুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু একই সাথে মিথ্যা-অরিচার-বর্বরতার ধারক মানবতার শত্রু মোশরেক কাফের জালেম উৎপীড়ক নরপশু সম্প্রদায় ও বিভিন্ন উপায়ে দুনিয়ার মানুষকে সত্য ও মুক্তির দ্বীন ইসলাম থেকে বঞ্চিত রেখে মানব জীবনকে অন্ধাকারে নিমজ্জিত রেখে দোজাহানে ধ্বংস করার চেষ্টা করে আসছে। সত্য মানবতাকে উৎখাতের জন্য এবং ইসলামের প্রাণ ঈমান আড়াল করে প্রাণাধিক প্রিয়নবী কেন্দ্রিক জীবনচেতনা নস্যাৎ করে আইন আমল মসআলার অপব্যবহার বাড়াবাড়ির প্রদর্শনী করে মানুষকে ধোকা দিয়ে প্রকৃত ইসলামের পরিবর্তে ভুয়া ইসলাম কায়েম করছে। ইসলাম ও মুসলিম মিল্লাতকে বিভিন্ন কায়দায় উৎখাত করে বিশ্ববাসীকে অন্যায় অধিপত্যে মিথ্যায় আবদ্ধ রেখে অধিকার হরণ করে অবিচার ও উৎপীড়নের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে ধ্বংস করার জন্য এরা বহুবিধ পন্থায় বহু শ্রেণীতে বহু রুপে কাজ করে আাসছে যার অন্যতম একটি হলো ইসলামের নিদর্শন ভেঙ্গে ধ্বংস করা, ইতিহাসের চিহ্ন চলার দিকচিহ্ন মুছে ফেলা। বহু পথে বহু পদ্ধতিতে বিভিন্ন বেশে কাজ করলেও এদের সবার উদ্দেশ্য ও স্বার্থ এক এবং মূলেও তারা এক অভিন্ন। মিথ্যা অনাচার বর্বরতার ধারক মানবসভ্যতা ধ্বংসকারী, মুক্তির বাধা, সত্যের শত্রু এই অপশক্তি যুগে যুগে অভিশপ্ত ফেরাউন-নমরুদ-আবু জেহেল-আবু লাহাব-কাফের এজিদ প্রভৃতি বিভিন্নবেশী নাস্তিক্যবাদী বস্তুবাদী পৌত্তলিক পাশবিক শক্তিরই অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা।
এদেরেই এক শ্রেণী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ইসলামের ছদ্ধবেশে পবিত্র আরব ভূমিতে আইয়ামে জাহেলিয়াতের শিরক কুফর গোত্রবাদ প্রতিষ্ঠা করে মিথ্যার রাজত্ব কায়েম করে বিশ্বব্যাপী প্রকৃত ইসলাম উ্যখাতে লিপ্ত হয়েছে এবং এই লক্ষ্যে আল আরবে ইসলামের মহাপবিত্র নিদর্শন সাহাবায়ে কেরামের মাজার শরীফ সমূহ ভেঙ্গেছে। যে মাজার শরীফ সমূহ পরবর্তী সকল মসজিদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, প্রেরণার উৎস ও পবিত্র নিদর্শন। সত্য ও মানবতার শত্রুদের অন্য কতিপয় গোষ্ঠী ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এবং আরেকটি গ্রুপ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বলয়ভূক্ত বিভিন্নদেশে মসজিদ মাদ্রাসা খানকাহ ভেঙ্গেছে। আরেক শ্রেণী ইন্ডিয়াতে মসজিদ ভেঙ্গেছে।
একই অপশক্তির বিভিন্ন গোষ্ঠী একই লক্ষ্যে অন্য বেশে মুসলমানদের জাতীয়তা, বিশ্বভ্রাতৃত্ব মন্ডিত ঈমানী জাতীয়তা ভেঙ্গে মানবতাকে পর্যুদস্ত করার চেষ্টা করছে। একই অপশক্তি একই চক্রান্তের অংশ হিসেবে আরব, ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এই উপমহাদেশেও মুসলিম অধ্যুষিত অনেক দেশ রাষ্ট্র ভেঙ্গে বিভক্ত করে সত্যের শক্তিকে হীনবল করার চেষ্টা করে আসছে। এদেরই অন্য ধারা আরেক রূপে স্বয়ং দ্বীনকে ভেঙ্গে দ্বীনের পূর্ণাংগতা ভেঙ্গে দ্বীনকে অরাজনৈতিক গন্ডীতে আবদ্ব কিংবা দ্বীনের নামে ঈমান পরিপস্থী ভ্রান্ত বস্তুবাদি একক গোষ্ঠীবাদি অপরাজনীতির মাধ্যমে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টার করছে, মুসলমানদের বিভক্ত রাখার ঐক্য ভাঙ্গার চেষ্টা করছে।
মুসলিম সমাজকে অভ্যন্তরীনভাবে হীনবল নিস্তেজ ও পঙ্গু করে দেয়ার হীন লক্ষ্যে স্বাভাবিক পর্দার পরিবর্তে অতিপর্দার সীমালংঘন, নানাবিধ বিকৃত ধারণা ও কুসংস্কারের মাধ্যমে বোনদের মানসিক পঙ্গু ও অসচেতন রেখে ঈমান-এলেম-জীবনের বিকাশ রুদ্ধ করে, মানবসত্তা অস্বীকার করে, ভোটাধিকার আন্দোলন ও রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে ঈমানী দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়ে মুসলিম সমাজকে পর্যুদস্ত করে দেয়া হয়েছে যাতে পরিবারগুলো দ্বীনের কেন্দ্র, শক্তি, প্রেরণা ও চেতনার আধার না হতে পারে বরং বিপরীত হয়। ঈমান তথা সত্যপোলদ্ধি হরণ করা ও মানবতা ধ্বংস করার জন্য এদেরই বিভিন্ন পদ্ধতি হলো ভাষা-গোত্র-অর্থ-বর্ণ-পেশা-লিংগ প্রভৃতির ভিত্তিতে বস্তুবাদী উপসর্গ ভিত্তিক শ্রেণী, বৈষমা, বিভেধ, হিংসা, সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে জাতীয় শক্তি ভেঙ্গে দেয়া । এদেরই পূর্বসূরী আইয়ামে জাহেলিয়াতের একটা ধারা দুনিয়াকে আঁধার ও পশুত্বে নিমজ্জিত করার জন্য ভেঙ্গে ছিল সত্য-মানবতা-অধিকার ও প্রগতির রক্ষাকবচ পবিত্র খেলাফতে ইনসানিয়াত।
আর এভাবে সত্যদ্রোহী, মানবতা পরিপন্থী, মানুষের দুনিয়া আখেরাত বিনষ্টকারী এই অপশক্তি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পন্থায় সত্য দ্বীনকে উৎকাতের লক্ষ্যে ঈমান হরণকরা, দ্বীন বিকৃত করা, অখন্ড জাতীয়তা ভেঙ্গে দেয়া, মুসলিম ঐক্য ভেঙ্গে ফেলা, সত্যের স্মারক প্রেরণার উৎস বিভিন্ন নিদর্শন ও ইতিহাসের সাক্ষ্যচিহ্ন মাজার মসজিদ ভাঙ্গা, মুসলিম অধ্যুষিত দেশ রাষ্ট ভাঙ্গা, মুসলমানদের উপর অবিরত হত্যা অবরোধ নিপীড়ন চালিয়ে যাওয়া প্রভৃতি একই লক্ষ্যে একই ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন অধ্যায় ও অংশ মাত্র।
আর এসব সবই সম্ভব হচ্ছে যার অন্যতম প্রধান কারণ আমার নিজেরা দীর্ঘদিন ধরে ভূল নেতৃত্বে, বিকৃত পথে চলে আসছি, আমাদের নিজেদের ঈমানী দায়িত্বে অবহেলা অনৈক্যবদ্ধ বিশৃংখল থাকা এমনকি ঐ অপশক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগীতা করে তাদের কালোহাত শক্তিশালী করে বিশ্বাসঘাতকতা করা। কারণ যে বস্তুবাদি মতবাদ মসজিদ ভাঙ্গে, যে বাতিল ফেরকা মাজার ভাঙ্গে, যারা দ্বীনকে অপুর্ণাংগ ও জাতিকে পংগু করার চেষ্টা করে, যারা জাতীয়তা ভঙ্গ করে, যারা মুসলিম অধ্যুষিত দেশ রাষ্ট্র ভেঙ্গে টুকরা করে দেয়, যারা মুসলিম ঐক্য ঈমানী ভ্রাতৃত্ব হতে দেয়না বা ভেঙ্গে দিতে বিভক্ত রাখতে চেষ্টা করে তার বাহ্যিক বিভিন্ন রুপ নাম হলেও মূলে একই, উদ্দেশ্যও একই। এদের কারো সহযোগী বা সমর্থক হওয়া মানেই মাজার ভাঙ্গা, মসজিদ ভাঙ্গা তথা দ্বীন উংখাতের সাথে নিজে যুক্ত হওয়া।
পবিত্র মসজিদ ভেঙ্গে রাম মন্দির বানানোর এই জঘন্য দস্যুপনা মূলতঃ দুনিয়ায় তাওহীদ রেসালাতের আলোর বিপরীতে জীবন সত্যের বিপরীতে মিথ্যা নাস্তিকতাবাদ এবং বস্তুবাদেরই অন্ধ কলুষতায় দুনিয়ার মানুষকে আবদ্ধ করার চেষ্টা। নাস্তিকতার অন্ধত্ব থেকেই বস্তুবাদ উদ্ভূত এবং বস্তুবাদ থেকেই উদ্ভূত বিভিন্ন উপসর্গের একটি পৌত্তলিকতাবাদের মাধ্যমে মানব জীবন নোংরা মিথ্যায় ডুবিয়ে ধ্বংস করা। ব্যাক্তি আত্মায় বস্তুবাদ, বস্তুবাদি আত্মাপরিচয় ও বস্তুবাদি দৃষ্টিভঙ্গী নাস্তিকতারই একটা বিশেষ পর্যায় ও অভিব্যাক্তি মাত্র। এভাবে তাওহীদ অভিমুখী জীবন তথা মহান প্রিয়নবীকেন্দ্রিক ঈমানী আত্মপরিচয় ও জীবনচেতনার বিপরীতে বস্তুবাদি উপসর্গ ভিত্তিক আত্মপরিচয় বা জাতীয়তা, মহামহিম নবীরাসুলদের অতুলনীয় উচ্চ মর্যাদা-নিষ্পাপতা-পবিত্রতা-বিশেষত্ব-নির্ভূল ও পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অস্বীকার করে বস্তুবাদি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখানোর মাধ্যমে কৌশলে নবুওয়াত রেসালাত অস্বীকার ব্যাক্তিজীবনে বস্তুবাদি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখানোর মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনে বস্তুবাদি তথা রামদাস বা হৃদয়ে পৌত্তলিকতার মন্ডপ বানানোরই নামান্তর। একইভাবে মসজিদ ভেঙ্গে রামমন্দির, তাওহীদ রেসালাতের পরিবর্তে শিরক কুফর আর মুসলিম অধ্যুষিত দেশ রাষ্ট ভেঙ্গে ন্যায় ও মানবতার পরিবর্তে ভাষা গোত্র প্রভৃতিকে মূখ্য করে মূলতঃ রাম রাজ্যই প্রতিষ্টা করা হয়। বিভিন্ন কায়দায় বস্তুপূজা অগ্নিপূজা প্রভূর পূজা বস্তুবাদি নাস্তিক্যবাদী পৌত্তলিকতারই বিভিন্নমূখী বহিঃপ্রকাশ যাহা শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান সমূহ এবং সমগ্র রাষ্টব্যবস্থা জীবনব্যবস্থা পর্যন্ত গ্রাস করেছে।
তবে মনে রাখতে হবে মসজিদ মাজার নিদর্শন দেশরাষ্ট্র ভাঙ্গা যত গুরুতরই হোক দ্বীন উৎখাতের লক্ষ্যে এগুলো ভেঙ্গে দ্বীনের উপরিকাঠামো ভাঙ্গা হয়। কিন্তু যখন হৃদয় থেকে ঈমান উৎখাত করে কুফরের বীজ বপন করা হয় আত্মায় কুফর কায়েম করা হয় তখনই আসল কাঠামো বা মুলে আঘাত করা হয়। সত্য ও সাম্যের স্মারক মসজিদ ভেঙ্গে যখন কাল্পণিক রামের নামে নাস্তিক্যউদ্ভূত বস্তুবাদি পৌওলিকতার মন্ডপ মন্দির নির্মাণ করে অলীক বিষয়ে মানবাত্মা নিবেদিত করা হয় আর আত্মায় চেতনায় ঈমানের পরিবর্তে শিরক কুফরা বস্তুবাদিতা প্রোথিত হয় তখন একই বিষয়ই হয়ে দাঁড়ায়। তবে পাথর্ক্য এই একটা উপরিকাঠামোগত আরেকটি আত্মিক কাঠামোগত। এই আত্মিক হত্যাকারীরাও বিভিন্ন কায়দায় কাজ করে যাচ্ছে। ইসলামের নামে বেনামে উভয় পন্থায় কাজ করে যাচ্ছে।
দয়াময় আল্লাহাতাআলা থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য এরা আল্লাহতাআলার মহান রাসুল থেকে বিচ্ছিন্ন করে। মহান রাসুল সব নবী রাসুলের মূল রাসুল আমাদের প্রাণাধিক প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে আল্লাহর নূর, সকল সৃষ্টির উৎস, অস্তিত্বের মূল, আল্লাহতাআলার সাথে সম্পর্কিত থাকার একমাত্র অপরিহার্য শর্ত ও কেন্দ্রস্থল, দৃশ্য-অদৃশ্যের সকল তত্ত্বের কেন্দ্র, রহমত ও শাফায়াতের নবী, আল্লাহতাআলার সকল ইসিম ও সিফাতেরও রাসূল এবং অন্যান্যা ঈমানী বিষয় অস্বীকার করে ভুলিয়ে নিছক বস্তুবাদি দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখানোর মাধ্যমে মানুষের আত্মার ধ্বংস মসজিদ ধবংসের চেয়েও মারাত্মক বিষয় যার কূফলও অনেক সুদূর প্রসারী। কারণ প্রাণাধিক প্রিয়নবীর সাথে সম্পর্ক হারালে মানুষের জীবনে আর কিছুই থাকেনা। আত্মিক হত্যা দৈহিক হত্যার চেয়েও মারাত্মক।
প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাজার ও দেশ রাষ্ট্র ভেঙ্গে দ্বীনের উপরি কাঠামোতে আঘাত করা হয়। মুমিনদের হত্যা করে দ্বীনের অভ্যন্তরীন কাঠামোতে আঘাত করা হয় এবং ঈমান নষ্ট করে কলব অন্ধ করে প্রাণাধিক প্রিয়নবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে একেবারে মূল কাঠামো বা আত্মিক কাঠামোতে আঘাত করা হয়। অনেকে উপরি কাঠামোর প্রকাশ্য আঘাত বুঝতে পারলেও আত্মিক কাঠামোতে আঘাত বুঝতে পারে না। যদি আমরা আমাদের প্রাণাধিক প্রিয়নবীর প্রতি সর্বোচ্চ প্রেম ও বিশ্বস্ততায় অটল থাকি তাহলে আমাদের আত্মিক কাঠামো কেউ ধ্বংস করে অস্তিত্ব বিনাশ করতে পারবেনা। প্রাণাধিক প্রিয়নবীর প্রেমের শক্তিই আত্মার সঞ্জীবনী শক্তি এবং জীবনের আলো যা মানুষকে আল্লাহতাআলার নৈকট্যে পৌছায়, সত্য - মিথ্যা বুঝার ক্ষমতা দেয় এবং সকল পতন থেকে বাঁচায়। কারণ প্রাণাধিক প্রিয়নবীই সবার জন্য সত্যের কেন্দ্রস্থল। প্রাণ ছাড়া যেমন দেহ জীবিত থাকে না তেমনি প্রাণাধিক প্রিয়নবী ছাড়া কোন সত্য হয় না, মানবজীবন হয় না। যথার্থভাবে প্রাণাধিক প্রিয়নবীর না হয়ে কেউ কোন ভাবেই আল্লাহতাআলার হতে পারে না। আর এই জন্য অসিলা হিসাবে অবশ্যই সম্পর্কিত থাকা প্রয়োজন আত্মিক আঘাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে যুগের এমন নেতৃত্ব। যে নেতৃত্ব আধ্যাত্মিক রাজনৈতিক সকল দিক থেকে জাতিকে স্পষ্ট দিশা দিয়ে সত্যের মহাকেন্দ্র প্রিয়নবীর দিকে পরিচালিত করতে পারে, মিথ্যার সকল ফাঁদ ও কূটচক্র থেকে মুক্ত রাখতে পারে।
এজন্য দ্বীনের উপরিকাঠামো থেকে শুরু করে আত্মিক কাঠামো তথা মূলে পর্যন্ত আঘাত তথা অস্তিত্বের সর্বদিকে হামলার এই বিপর্যয় অবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়ার অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে ভূল নেতৃত্ব ও ভ্রান্ত দল মত পথ থেকে মুক্ত হয়ে সত্যের দিশারী সঠিক নেতৃত্বে সঠিক পথ ও পন্থায় ঐক্যবদ্ধ ভাবে এগিয়ে যাওয়া। তা না হয় আমরা মসজিদের জন্য শোক দু:খ প্রকাশ করে এবং দুর্বৃত্তদের নিন্দা করে লাভ নেই বরং প্রহসন হবে। ভুল নেতৃত্ব ভুল পথ থেকে মুক্ত না হলে সঠিক নেতৃত্বে যুক্ত হয়ে ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয়ভাবে এগিয়ে না এলে আমরা কখনও মুক্তি পাবো না। অসত্য ও পাশবিকতা থেকে রেহাই পাবো না। আমাদের অসংগঠিত থাকা ও অলসতা নিষ্কৃয়তা উদাসীনতার সুযোগে ইসলামের ছদ্মবেশী বস্তুবাদি প্রতারক বাতিল ফেরকা যারা পবিত্র আরবে ইসলামের মহানিদর্শন মাজার ভেঙ্গেছে, সৌদি গোত্রবাদি ওয়াবি মুলুকিয়ত কায়েম করেছে, দ্বীনবিধ্বংসী সে শয়তানদের এজেন্ট পালিত দাসগণ এখানে মসজিদ ভাঙ্গার প্রতিবাদের নাটক করে নিজেদের মুসিলম দেখানোর প্রহসন করে মানুষকে ধোকা দিয়ে যাচ্ছে।
সত্য ও মানবতার পক্ষশক্তি অনৈক্যবদ্ধ দুর্বল হয়ে সেখানে মিথ্যা ও জালেম শক্তি প্রবল হয় ফলে সবকিছু তাদের শিকার হয়, সভ্যতা আক্রান্ত হয়, মানবতা বিপন্ন হয়। এখনো আমাদের যা কিছু আছে তা যদি রক্ষা করতে হয় এবং মিল্লাত ও মানবতার ভবিষ্যত গড়তে হয় বর্তমানের কাজের উপরই অসিলা হিসেবে নির্ভর করবে এবং এক মূহুর্ত নষ্ট না করে আমাদের তৎপর হতে হবে। অন্ধত্ব ও কুসংস্কারের ধারক সভ্যতাবিধ্বংসী মানবতালুন্ঠকারী ঘৃণ্য অপশক্তি কর্তৃক ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ধ্বংস ও মুসলিম গণহত্যার শোকাবহ এই উপলক্ষে আমরা ঈমান ও দ্বীন পরিপন্থী সকল বাতিল ও তাদের বিভিন্নমূখী অপতৎপরতার সম্পর্কে মুমিন ভাইবোনদের জাগ্রত ও সতর্ক হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
সর্বস্তরের সকল ঈমানদার তথা সুন্নি ভাইবোন সকল পীর-আলেম-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবি-ব্যবসায়ী-শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-ছাত্রী প্রত্যেককে যুগের অপিরহার্য্য ঈমানী দায়ীত্ব হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল বাতিলের আগ্রাসন রুখে দাঁড়াতে, দ্বীনের প্রতিরক্ষা, মিল্লাত ও মানবতার স্বাধীনতা পূনরুদ্ধারে এবং মিথ্যা-অবিচার-জুলুম-শোষনের বর্বর চক্র প্রতিহত করে সত্য-সুবিচার-মানবতা-অধিকার পূনঃ প্রতিষ্ঠিত জন্য খেলাফতে ইনসানিয়াত (authority of life & state & world of universal humanity based on natural justice and divine values) এর লক্ষ্যে একমাত্র ইনসানিয়াত বিপ্লব প্রতিষ্ঠা করতে। যেখানে ১) প্রতিটি মানুষ তার বিশ্বাস ও আদর্শ নিয়ে চলবে, ২) রাষ্ট্র ও সম্পদের মালিক হবে প্রতিটি মানুষ, ৩) সত্য ও জ্ঞান এবং সম্পদের মুক্ত প্রবাহ থাকবে। কোন বর্বর গোষ্ঠীর হামলারও শিকার হবে না, প্রতারিত হয়ে না বুঝে মিথ্যারও শিকার অনুসারী হবে না কোন মানুষ।
এ প্রসঙ্গে আমরা সকলকে এ মর্মেও সজাগ ও সর্তক হওয়ার আহবান জানাচ্ছি যে, সরাসরি মসজিদ ভেঙ্গে যেমন ইসলামকে উৎখাতের অপচেষ্টা চলছে তেমনি মসজিদকে বিভিন্ন কায়দায় জবরদকল অপব্যবহারের মাধ্যম করে ও অত্যন্ত কৌশলে ঈমান হরণ ও দ্বীন ধ্বংসের অপচেষ্টা চলছে । যে অপচেষ্টা সমূহের প্রতিক্রিয়াও মসজিদ ভাঙ্গার চেয়ে কম নয বরং অনেক ক্ষেতে বেশি । ইসলামের ছদ্মবেশে ইসলামের মূল আকিদা সুন্নী আকিদা থেকে বিচ্যুত করে ঈমান হরণ, দ্বীন বিকৃতি ও মুসলিম ঐক্য বিনষ্ট করে দ্বীন ধ্বংসকারী বিভিন্ন বাতিল ফেরকার প্রচারক, মুসলিম দাবী করেও এর বিপরীত দ্বীনদ্রোহী বিজাতীয় মতবাদের সমর্থক কিংবা সত্যদ্রোহী কোন কুফরী সরকার ও রাষ্ট ব্যবস্থার সমর্থক আলেমের বেশধারী বিপরীত এজেন্টেদের মসজিদের ঈমান হিসেবে অনুপ্রবেশ দ্বীনের জন্য এক ভয়াবহ বিষয়। বাতিলফেরকা, বস্তুবাদি মতবাদ ও স্বৈর রাষ্টব্যবস্থার সমর্থকদের এক্তেদায় যেমন নামাজ হতে পারেনা তেমনি এসব অনুপ্রবেশকারী মসজিদকে মাধ্যম করে ঈমান বিধ্বংসী তৎপরতা চালায় ।
নানাবিধ বাতেলের অবৈধ আস্তানা বানিয়ে মসজিদের প্রবিত্রতা বিনষ্ট করে এবং মানুষকে বিপথে পরিচালিত করে । পোষাকে কথায় আমলে ছদ্মবেশ নিয়ে ঈমান হরনকারী দ্বীন বিকৃতীকারী কদযৃ কুসংস্কারাচ্ছন্ন একটা প্রতারক বাতিল ফেরকাতো চিল্লা গাস্ত এস্তেমা ইত্যাদির নামে মসজিদকে মাধ্যম করেই মানুষকে পথভ্রষ্ট দ্বীনচ্যুত করে যাচ্ছে। ঈমান বাদ দিয়ে কতিপয় আমলের প্রদশনীকে মূখ্য করে, আখেরাতের অতিরঞ্জিত আতংক দেখিয়ে, ঘরবাড়ী পারিবারিক রাজনৈতিক ও অন্যান্যা দ্বীনি অপরিহার্য দায়িত্ব থেকে বিছিন্ন করে, একপ্রকার মানসিক অস্বাভাবিকতা ও জীবনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে বাতেল ফেরকা ইতিমধ্যে অনেক মসজিদকে হাড়িপাতিল ব্যগব্যাক্স লাকড়ি ইত্যাদি দিয়ে প্রায় স্থায়ীভাবে তাদের নোংরা বসতবাড়ী বানিয়ে অন্যভাবে মসজিদ ধ্বংস করে যাচ্ছে।
এভাবে বাতিল ঈমাম অনুপ্রবেশ, তফসির ওয়াজ ইত্যাদির নামে মসজিদে বসে কোরআনুল করীম ও হাদিস শরীফের অফব্যাখ্যা, মসজিদে বসে ভ্রান্ত বক্তব্য, বাতিল মতবাদ মাধ্যম করার অপচেষ্টা, অনেক মসজিদে বিভিন্ন বাতেলের লিখিত ঈমানপরিপন্থী অবৈধ খোতবা পড়া, নির্বাচন এলে সাহায্যের নামে দ্বীন পরিপন্থি বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের বিশেষতঃ বাতিল ফেরকার লোকদের মসজিদে গিয়ে বক্তব্য দিয়ে মসজিদের চরম অসম্মান, বিভিন্ন দেশে ঈমান পরিপন্থি বিভিন্ন বাতিল ফেরকা ও বস্তুবাদি মতবাদ অনুসারী কুফরী সরকারের নিয়োজিত আলেমবেশী বিশ্বাসঘাতক শয়তানের ঈমাম হিসেবে তাদের পক্ষে সত্যের বিপক্ষে সত্যকে দাবিয়ে রাখার জন্য এবং সমাজ হাতে রাখার জন্য নিয়োগ, অনেক যায়গায় নিছক ক্ষুদ্র গোষ্ঠীস্বার্থে এমনকি নিদিষ্ট ব্যক্তির স্বার্থে ব্যক্তির প্রচার ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে মসজিদের পবিত্রতা মর্যাদাই শুধু বিনষ্ট করা হচ্ছে না বা মসজিদকে কেবল নিস্কৃয় করছেনা বরং বিপরীত স্বার্থে সত্যের বিপক্ষে মসজিদের ভয়ানক অপব্যবহার করছে ।
কোন মসজিদ বাতিলের দখলে চলে যাওয়া অবর্ণনীয় ধ্বংসাত্মাক মর্মান্তিক বিষয়। মসজিদ ঈমানদারের, কিন্তু খুবই দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় ঈমানদারগণ আজ অনেক মসজিদে বাতিল ঈমাম ও বাতিল খোতবার কারণে নিদিষ্ট জামায়াতে নামাজ পড়তে পারছেনা, অনেক মসজিদে জুমা আদায় করা যাচ্ছেনা। কোন অপশক্তি যেন আমাদেরকে এবং আমাদের মসজিদ বা কোন প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসও করতে না পারে বিপরীতে ব্যবহারও করতে নারে উভয় দিকে আমাদেরকে সজাগ ও সক্রিয় হতে হবে। আমাদের ঈমানী জীবন, আমাদের সমাজব্যবস্থা, রাষ্টব্যবস্থা ও সমগ্র জীবনব্যবস্থা এবং আমাদের মাজার, মসজিদ প্রতিষ্ঠান একই সূত্রে গাঁথা।
দ্বীন-জাতি-জাতীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ থেকে কোন ঈমানদার ভাইবোন আলাদা নয়। মুসলিম এই কারণে হত্যা, নির্যাতন অধিকার হরণ, প্রিয়নবী সর্ম্পকে অন্ধ করে আল্লাহতাআলা থেকে বিচ্ছিন্ন করা, মাজরা মসজিদ প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দেয়া বা জবরদখল, সত্যের সংগঠন আন্দোলন নেতৃতের উপর হামলা, জাতীয়তা হরণ, দেশরাষ্ট ভেঙ্গে দেয়া কিংবা অবৈদ মতপথ চাপিয়ে দেয়া এসব কোন কিছুও বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। পথপদ্ধতি আলাদা হলেও এসব চক্র পরস্পর আলাদা নয়।
দিকে দিকে ভাইবোন শিশু পর্যন্ত হত্যা, অবর্ণনীয় নির্যাতন, সহায়সম্পদ হরণ, আতংকিত নিপিড়ীত মানবাতর ক্রন্দন, মসজিদ মাজার প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসস্তুপ বা বিকৃতরূপ, মসুলিম অধ্যুষিত প্রতিটি দেশরাষ্ট তথা সারা জাতির বিরূদ্ধে ক্রমাগত ভয়ানক, দস্যুতার আস্ফালন, দিশাহারা ভাইবোনদের বাতিলের শিকার হয়ে দলে দলে ঈমানহারা হওয়ার এই চরম দুঃসময়ে জাতির একজন সদস্যেরও জাতীয় মুক্তির কার্যকরী ব্যবস্থা ও বিশ্ব সুন্নী আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে বাতিল চক্রের ইচ্ছা পুরণের অবকাশ নেই। (চলবে)
================
- আল্লামা ইমাম হায়াত
(বস্তু উর্ধ্বে মানবসত্তার প্রবক্তা এবং বিশ্ব সুন্নী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লবের প্রবর্তক)।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks For You Comment