কাফের এজিদ বাহিনী নির্মম ভাবে শহিদ করেছে মাওলা আব্বাস ইবনে আলি রাদ্বীয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে



ইমাম জয়নুল আবেদীন কে বন্দী অবস্থায় এক লোক জিজ্ঞেস করলো  “মাওলা! শুনলাম মাওলা হুসাইন নাকি শহীদ হয়ে গেছেন?
” ইমাম জবাব দিলেন “সত্য”
এবার লোকটা কন্ঠস্বর নিচু করে জিজ্ঞেস করলো 
“শুনলাম মা জয়নাবকে নাকি বেপর্দা বাজারে ঘুড়িয়েছে?
” ইমাম বললেন “সত্য” 
এবার লোকটি জিজ্ঞেস করলো “মাওলা! আলি আকবরও নাকি শহীদ হয়ে গেছে!?
” ইমাম বললেন “সত্য”। 
লোকটি এবার বললো “এতো কিছু হয়ে গেলো আব্বাস আপনাদের সাহায্য করেনি!?
”ইমাম বসেছিলেন, হাতে পায়ে বেড়ি। অনেক কস্টে উঠে দাঁড়ালেন, আবার বসে পড়লেন, কোন উত্তর দিলেন না।
লোকটি ভাবলো ইমাম হয়তো তার প্রশ্ন শুনতে পারেননি। তাই সে আবার প্রশ্ন করলো 
“মাওলা! আব্বাস আপনাদের সাহায্য করেননি”। 
ইমাম আবার উঠে দাড়ান, আবার বসে পরেন। এভাবে নয়বার প্রশ্ন করলো নয়বারই মাওলা জয়নুল আবেদীন, উঠে দাড়ান। 
এবার লোকটা বুঝলো যে ইমাম গাজী আব্বাসের নাম শুনে উঠে দাঁড়াচ্ছেন। 

লোকটি বললো “মাওলা এই প্রশ্নের উত্তর পরে শুনবো আগে বলেন, আপনি তো এখন ইমাম? মাওলা বললেন “হ্যা”। লোকটি বললো “তাহলে আপনি আব্বাসের নাম শুনে এতোবার উঠে দাঁড়ালেন কেন?
” ইমাম মওলা জয়নুল আবেদীন বললেন “আল্লাহর কসম! আল্লাহ্‌ যদি তোমাকে কেয়ামত পর্যন্ত হায়াত দেন, আর তুমি যদি আমাকে এই একটা প্রশ্নই কেয়ামত পর্যন্ত করতে থাকো, তুমি যতোবার উনার নাম নিবে আমি জয়নুল আবেদীন ততোবার উঠে দাঁড়াবো। লোকটি এবার বললো মাওলা যদি সাথে থাকতো তাহলে সবার মাথার সাথে আব্বাসের মাথাও থাকতো।সামনে সবার মাথা দেখলাম, এমনকি ছোট্ট আলি আসগরেরও। কিন্তু আব্বাসের মাথা তো দেখিনি! 
ইমাম জয়নুল আবেদিন এমন ভাবে কাঁদা শুরু করলেন যে তার চোখ দিয়ে রক্ত বেড় হতে লাগলো, 
ইমাম বললেন “বল্লমের মাথায় খুজোনা, সামনে দেখো, ঘোড়ার গর্দানে চাচা আব্বাসের মাথা! 
হায় হায় জালিমের দল মাওলা আব্বাসের দুই কানের সাথে মাথা ঘোড়ার গর্দানে হারের মতো ঝুলিয়ে দিয়েছিলো।

নারকীয় হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আমরা শুধু শুনি, সিভিলাইজড হওয়ার কারনে নারকীয়তা আসলে কি তাই আমরা জানিনা। মাওলা হজরত আব্বাসের সাথে এজিদের লোকেরা কি করেছে তা যদি জানতেন মুসলিম তাহলে আপনাদের ইসলাম অন্য রকম হতো। আপনাদের বিশ্বাস, আপনাদের চেতনা অন্যরকম হতো। শুনবেন নারকীয়তা কাকে বলে? শুনুন তবে,

 মাওলার পরিবারের অসহায় পিপাসার্ত শিশুদের জন্য পানি আনতে গিয়ে মাওলা আব্বাস শত্রুর তীর বৃষ্টি উপেক্ষা করছেন। সিংহের মতো এগিয়ে যাচ্ছেন পানির দিকে, নিজেও পিপাসার্ত। তবু হামলাকারীরা একা আসতে সাহস পাচ্ছেনা। পিতা আলী যেন ভর করেছে আব্বাসের মধ্যে, একের পর এক শত্রুকে জাহান্নামে পাঠিয়ে ফোরাতের সুপেয় পানির কাছে পৌঁছে যান তিনি। মশকে পানি ভরলেন।নিজেও কয়েকদিন থেকে পানি পান করেন না, মশক ভরার পরে, নিজে হাতে আজলা ভরে পানি তুললেন, পান করবেন। হঠাত তার চোখে ভেসে উঠলো তৃষনার্ত সকিনার শুকনো মুখ! আলী আসগরের মুখ! তিনি পানি ফেলে দিলেন, তাদেরকে পান না করিয়ে পান করবেন না! হায় হায়! পানিও যেন লজ্জা পেয়ে গেলো। এমন সবর আলীর সন্তান ছাড়া আর কার হতে পারে।

পানি ভরা শেষ, এবার শিবিরে ফেরার পালা, মাওলা আব্বাসের চোখে নিশ্চয়ই তখন ভাসছে, সকিনা পান করার পর তার চেহারার রঙ ফিরবে, তার শুকনো মুখ দেখে তিনি সইতে পারেন না। হজরত আব্বাস রওনা দিলেন পানির মশক নিয়ে শিবিরের দিকে। ততক্ষনে সেখানে আগের চেয়ে কয়েকগুন শত্রু একত্রিত হয়ে গেছে। তারা প্রবল বাধা সৃস্টি করলো। যে যেদিক থেকে যা দিয়ে পারলো, আক্রমন করলো, হজরত আব্বাস আগেই তীরবিদ্ধ, চারদিক থেকে ঘিরে থাকা শত্রুরা কেউ তলোয়ার দিয়ে কেউ বল্লম দিয়ে আঘাত করলো, কেউ কেউ দূর থেকেই পাথর দিয়ে ঢিল মারতে শুরু করলো। একজন পিছন থেকে কোপ দিয়ে তার এক হাত কেটে ফেলে।কিন্তু তাতেও মাওলা আব্বাস্ কে থামাতে পারছলো না,তিনি অন্য হাত দিয়ে পানির মশক ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, এবার শত্রুর দল তাকে পেয়ে বসেছে, আবারও পিছন থেকে কোপ দিয়ে তার অন্য হাতটিও কেটে ফেলে নরপশুরা।পরে যান এবার তিনি, কিন্তু দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, দাত দিয়ে কামড়ে ধরে মশক নিয়ে যাচ্ছেন।কিন্তু হায় পশুর দল তীর মেরে ওই মশক ফুটো করে দিলো। আব্বাস আবার রওনা দিলো নদীর দিকে। কিন্তু তাকে হত্যা করে ওরা। হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। তার লাশের সাথে যা করেছে তা লিখার মতো নয়।

মুসলিম ভেবে দেখুন তো নিজের প্রিয় কারো সাথে যদি এমন হয় তো কেমন লাগবে?আর যদি এমনটা হয়, যে আপনার প্রানের চেয়ে প্রিয় কাউকে হত্যা করে পশুর মতো কয়েক টুকরা করে ফেলে, তারপর মাথা কেটে আলাদা করে ফেলে? তারপর তার এক কান দিয়ে তীর ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বেড় করে? তারপর তীরের দুই মাথায় রশি বেধে মালার মতো করে ঘোড়ার গলায় ঝুলায়? তারপর ঘোড়ার চলার তালে যখন কাটা মাথা দুলে তখন আপনাকে দেখিয়ে বলে "ওই দ্যাখ তোর চাচা মওলা আব্বাস তোকে কি যেন বলে, ওই দ্যাখ তোর চাচা নাচে। এগুলি যদি শুধু মওলা জয়নুল আবেদীন কে দেখানো হতো, তাও বুঝতাম, এগুলি ছোট্ট মা সকিনাকেও বলা হয়েছে। বলা হয়েছে মা-জান জয়নব কেও তাকে বলেছে ডাক তোর হিজাব কে, ওই দ্যাখ তোর হিজাব কি বলে!! 

লানতুল্লাহে আলা কওমে জ্বালেমিন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাহাবী একটি বৈশিষ্ট্য, সাহাবী একটি চরিত্র, সাহাবী একটি আদর্শ, সাহাবী মানে উৎসর্গ, সাহাবী মানে সর্বোচ্চ বিশ্বস্ত! লেখক- আল্লামা ইমাম হায়াত এর দিশার আলোকে- আল্লামা মুফতি রেজাউল মোস্তফা কায়সার

প্রিয়নবীর সম্পর্কের চেয়ে জরুরী গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবান অপরিহার্য্য অন্য কোন সম্পর্কই নয় -"আল্লামা ইমাম হায়াত আলাইহি রাহমা"

(দলিল) নবী রাসূল আলাইহিস সাল্লাম গন সহ আল্লাহর ওলী গন চিরন্তন জীবিত ।