জাগ্রত বিবেকের কাছে প্রশ্ন ? ( কষ্ট হলেও দয়া করে পড়ে মন্তব্য করুন ) - মফিকুল ইসলাম
জাগ্রত বিবেকের কাছে প্রশ্ন ? ( কষ্ট হলেও দয়া করে পড়ে মন্তব্য করুন )
---------------------------------------------------------------------------------
তাজকিরাতুল আঊলিয়া কিতাবে লিখিত আছে যে মুজ্জাদেদ আল ফেসানী রাহমতুল্লাহ আলাইহহি একদিন ফজরের নামাজের পর মুরাকাবা থেকে উঠলেন। মুজ্জাদেদ আল ফেসানী রাহমতুল্লাহ আলাইহহি বললেনঃ ''আমার এই চোখ যদি পাহাড়ের উপর রাখি, পাহাড় জ্বলে ছারখার হয়ে যাবে, আমি ইচ্ছা করলে দুনিয়ার প্রত্যেকটি মানুষকে ঈমানদার বানাতে পারি, কিন্ত আখেরী জমানা নিষেধ আছে।''
ইমামে আজম আবু হানিফা রাহমতুল্লাহ আলাইহি কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছিল এজিদবাদী শাসক গোষ্ঠী খলিফা মনসুর ও তার অনুসারীরা। ইমামে আজম আবু হানিফা রাহমতুল্লাহ আলাইহি কি পারতেন না সেটাকে প্রতিহত করতে পারতেন না? বা তিনি কি সেটা জানতেন না? অবশ্যই জানতেন।
১৯৯০ সালে উপসাগরীয় যুদ্দে সাদ্দাম হুসেন কুয়েত দখল করার পর বৃটিশ ও আমেরিকান বাহিনিরা ইরাকের উপর বোমা হামলা শুরু করল। বাগদাদে গাউসে পাক রহমতুল্লাহ আলাইহির মাজার শরিফ অবস্থিত। অনেক ওয়াহাবীরা বলা শুরু করে দিল যে - গাউসে পাক রহমতুল্লাহ আলাইহি যদি আল্লাহর অলিই হয়ে থাকেন, এই বোমা হামলা কেন প্রতিহত করলেন না। আমার এক পড়শী একই মন্তব্য করল। [ নাউজুবিল্লাহ] আমি বললামঃ ভাই আমাকে আগে বলুন, বাগদাদে বোমা হামলা হচ্ছে সেটা কি আল্লাহ তায়ালা দেখেন কিনা ? সে বলল কি বল তুমি ? আল্লাহ দেখবেন না ? তাহলে আল্লাহ কেন প্রতিহত করেন না ? না বলবেন আল্লাহর কোন ক্ষমতা নেই? [নাউজুবিল্লাহ] এ সমস্ত হল শয়তানী যুক্তি। আওলিয়া কিরামের বিদ্বেষী যারা কোন না কোন ভাবেই অলিদের শানের বিপরিত কথা বলবেই।
ইমামে আকবর ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কারবালার ময়দানে ইসলামকে রক্ষা করার জন্য কাফির এজিদের বিরুদ্দে লড়াই করে শাহাদাত বরন করেন। ফুরাত নদীর পানি সবার জন্য ছিল উম্মুক্ত, কিন্ত আহলে বায়িতের জন্য নয় । ইমামে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যদি ইশারা করতেন, ফুরাত নদী কেন সারা বিশ্বের পানি হাতের কাছে চলে আসত।
তার প্রমান হলঃ আমরা জানি, খাজা বাবা রহমাতুল্লাহ আলাইহি যখন ভারত বর্ষে ইসলাম প্রচারের জন্য আসেন, তখন ভারতের পৃথিরাজ অনেক চেষ্টা করেছে খাজা বাবার আগমন প্রতিহত করার জন্য। কিন্ত কোন ভাবেই পারেনি। খাজাবাবা রহমাতুল্লাহ আলাইহির আদর্শে সবাই ইসলাম গ্রহন করছে । তাই যেকোন ভাবেই হউক ইসলামের এই অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতেই হবে। তারই অংশ হিসেবে তারা খাজা বাবা রহমাতুল্লাহ আলাইহির উপর পানির অবরোধ আরোপ করে দিল। খাজাবাবা রহমাতুল্লাহ আলাইহি কিছু বলেন নাই। শুধুমাত্র আদেশ করলেন উনার প্রধান খলিফা খাজা বকতিয়ার কাকী রহমাতুল্লাহ আলাইহিকে আনা সাগরের এক বদনা পানি নিয়া আসার জন্য। ফলশ্রুতিতে দেখা গেল সমস্ত ভারতে কোথায় পানি নেই। তাহলে খাজা বাবা রহমাতুল্লাহ আলাইহির খলিফা যদি এক বদনার ভিতর সমস্ত ভারতের পানি নিয়ে নিতে পারেন তাহলে ইমামে আকবর কি পারতেন না ফুরাত নদীর পানিকে ইশারা করতে? কেন করেন নাই?
কেননা দুনিয়া হল উসিলা ভিত্তিক, উসিলা ছাড়া কোন কাজ হয়না । জিহবা হল কথা বলার উসিলা বা মাধ্যম। ইসলাম কে রক্ষা করার জন্য ইমামে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কাফির এজিদের হাতে বায়াত হন নাই বা এজিদের সাথে জোট করেন নাই। কাফির এজিদ বলেছিলঃ আপনি হলেন ধর্মের ইমাম আর আমি রাষ্ট্রের ইমাম। ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে প্রথম আলাদা করেছিল কাফির এজিদ। ইমামে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেটাকে প্রত্যাখ্যান করে ইসলাম কে সমুন্নত রেখেছেন।
যদিও আজকে অনেকে ইমামে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সৈনিক দাবী করেও আবার সেই এজিদবাদীদের সাথে আবার জোট করেছে ।
আমরা জানি আল্লাহ তায়ালা সমস্ত বিশ্ব জগতকে কুন বলে সৃষ্টি করেছেন। ইন্নামা আম্রুহু ইজা আরাদা শাইয়ান আই ইয়াকুলা লাহু কুন ফাইয়াকুন- তিনি ঐ মহান স্বত্বা যখন তিনি কোন কিছু সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন আর বলেন হয়ে যাও। সাথে সাথে হয়ে যায়। [সুরাহ ইয়াসিন]
আর আমাদের মহান প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম হলেন রাসুলুল্লাহ তথা আল্লাহর রাসুল।
যাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না। তার প্রমান হল হাদিসে কুদুসী শরিফঃ লাও লাকা লামা খালাকতুল আফলাক- হে আমার হাবীব। আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না।
অথচ ইসলাম প্রচারের জন্য মহান প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ওহুদের যুদ্দে দান্দান মোবারক শহীদ করলেন, তাইয়েফের জমিনে পাথরের আঘাত সহ্য করলেন।
তাইয়েফের জমিনে যখন কাফেররা পাথরের দ্বারা মহান প্রিয় নবীকে আঘাত করল, জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এসে বলেছিলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি আদেশ করুন - আমি তাইয়েফের জমিন উল্টিয়ে ফেলি।
তাহলে জিব্রাইল আলাইহিস সালাম তায়েফের জমিন উল্টিয়ে ফেলার ক্ষমতা ছিল। প্রিয়নবীর কি সেই ক্ষমতা ছিল না ? কেন করলেন না ? সেখানে রেসালতের ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়নি। মানুষ কে বুঝানোর জন্য একেবারে সাধারন মানুষের কাতারে এসে ইসলাম প্রচার করেছেন। দুনিয়ার যাবতীয় কাজ কর্ম করেছেন। ফলশ্রুতিতেই ওয়াহাবীরা বলে থাকে নবী তাদের মত [ নাউজুবিল্লাহ]।
আল্লাহ কি পারতেন না কুন ফাইয়াকুনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ইসলাম প্রচার করাতে? কি দরকার ছিল আল্লাহর রাসুলকে এত কষ্ট দিবার? কি প্রয়োজন ছিল দীর্ঘ ২৩ বছর এত যুদ্ধ বিগ্রহ কাফেরদের লাঞ্চনা, অবরোধ ইত্যাদি সহ্য করার? নবী ইশারা করলেই চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়, অস্তমিত সুর্য আবার উঠে আসে। তাহলে মহান প্রিয় নবী কি পারতেন না মুজেজার মাধ্যমে সবাইকে ঈমানদার বানাতে? কি প্রয়োজন ছিল খন্দকের যুদ্দে পরিখা খনন করার যেখানে মহান প্রিয় নবী নিজে কোদাল দিয়ে মাটি খনন করেছেন? এগুলো কি কোনদিন চিন্তা করেছেন কি?
তার কারন হল দুনিয়া আল্লাহর বিধান মোতাবেক চলে। আল্লাহর বিধান হল যারা কাজ করবে তারাই এগিয়ে যাবে। এখানে হক বাতেলের কোন অবকাশ নেই। হক বাতেলের অবকাশ যদি থাকত তাহলে পৃথিবীর এমন কোন শক্তি ছিলনা ইমামে আকবরের গলায় ছুরি দিবার। ইশারা করলেই ছুরি উল্টো দিকে চলে যেত যা আমরা খাজা বাবা রহমতুল্লাহ আলাইহির জীবনী মোবারক থেকে জেনেছি। তিনি তার খরম মোবারক কে ইশারা করলেন আর তাতেই ঐ খড়ম পৃথিরাজের সমস্ত যাদুকর গুলোকে নিজেই নিজেই প্রহার করতে করতে আসমান থেকে জমিনে নামিয়ে আনল।
আর মহান প্রিয় নবীর কি প্রয়োজন ছিল এত কষ্ট করার। মুজেজা দিয়ে সব কিছু করে ফেলতে পারতেন। মহান প্রিয় নবী রেসালতের ক্ষমতা যদি প্রয়োগ করতেন তাহলে ওহুদের যুদ্দে দান্দান মোবারক শহীদ হত না বা তাইয়েফেও কেউ পাথর মারার সাহস পেতনা।
সত্যের ইমামগণও তেমনি ইমামত কে বুকে ধারন করেছেন। কিন্ত ইমামতের ক্ষমতা প্রয়োগ করেন নাই যা আমি আগেই উল্লেখ করেছি। আর ইমাম হায়াত সেই ইমামগনেরই উত্তরসুরী। যার সম্পর্ক সরাসরি মহান প্রিয় নবীর সাথে।
পরিশেষে এত টুকুই বলবঃ এসব শয়তানী যুক্তি বাদ দিয়ে সত্যকে বুঝার চেষ্টা করুন। আপনারা ইমাম হায়াত কে না মানলে ইমাম হায়াতের কোন ক্ষতি হবে না, ক্ষতি নিজেরই হবে। সমস্ত ইমামগনের ধারাবাহিকতা এক ও অভিন্ন। পদ্ধতিগত পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্ত মুল এক। সত্যের প্রচার করা। ইমাম হায়াতের লিখনি মোবারক গুলো কোন দিন পড়ে বুঝার চেষ্টা করেছেন কি? কি লিখা তাতে?
ইন্না আ'তাইনা কাল কাউসার। এটা কুরানের আয়াত সত্য। এই আয়াত নাজিল হবার পর কাফেররা নানান ভাবে ব্যংজ্ঞ করেছিল। তখন প্রিয় নবী বলেছিলেনঃ তোমরা পারলে এরকম একটা আয়াত লিখে আনো। তার উত্তরে কাফেররা বলেছিলঃ লাইসা হাজা কালামুল বাশার- সেটা কোন মানুষের কালাম হতে পারেনা।
ইমাম হায়াতের লিখিত কিতাব গুলো গবেষণা করলেই ইমাম হায়াতের এলেমের সোর্স কোথায় তা বের হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেটধারীও উনার লিখিত কিতাবের মর্মার্থ সহজে বুঝতে সক্ষম হয়না যদিও বাংলাতেই লিখা। আমরা এ পর্যন্ত ইসলামের উপর যতগুলো বাংলা কিতাব লিখা হয়েছে তার সবগুলোই দেখেছি। আবার যারা উপন্যাস লিখে তাদের লিখিত উপন্যাসও পড়েছি।
লেখেছেনঃ সম্মানীত Mafiqul Islam ভাই
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks For You Comment