ইসলামের বিরুদ্ধে মুনাফিক মুয়াবিয়ার ষড়যন্ত্রের ইতিহাস তুলে ধরা হল
ইসলামের বিরুদ্ধে মুনাফিক মুয়াবিয়ার ষড়যন্ত্রের ইতিহাসঃ
আবু জাহেল, আবু লাহাব, আবু সুফিয়ান প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামের জঘন্যতম শত্রু ছিল। মুয়াবিয়ার বাবা আবু সুফিয়ান ছিল ইসলামের ও প্রিয়নবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামের কঠোরতম শত্রু। পাপিস্ট রাক্ষসী হিন্দা উহুদ যুদ্ধে প্রিয়নবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামের চাচা হামজা রাদিআল্লাহু আনহুর পেট চিরে কলিজা বের করে চিবিয়ে খায় এবং হাত ও নাক কেটে নেয়। প্রিয়নবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এই রাক্ষসীর মুখ দর্শন করতে অস্বীকার করেছেন। এই কলিজা ভক্ষন কারীর ছেলে মুয়াবিয়া।
মক্কা বিজয়ের পর (অষ্টম হিজরিতে) অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুয়াবিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। কিন্তু প্রিয়নবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামের পবিত্র মহামহিম আহলে বাইতের সঙ্গে তার শত্রুতা অব্যাহত থাকে। হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে এক মিথ্যা অজুহাতে সে সিরিয়া থেকে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। সিফফিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এই বিদ্রোহের কারণে। এই যুদ্ধে মুয়াবিয়ার পক্ষে ৪৫ হাজার নিহত এবং মাওলায়ে আলা হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহুর পক্ষে শহীদ হন পঁচিশ হাজার মুজাহিদ। মাওলায়ে আলা হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে সিরিয়ায় বিদ্রোহ শুরু করার পেছনে মুয়াবিয়ার অজুহাত ছিল তৃতীয় খলিফার হত্যাকাণ্ডের বিচার। এটা যে নিছক অজুহাতই ছিল তার প্রমাণ হল মাওলায়ে আলা হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহুর শাহাদতের পর মুসলিম বিশ্বের সব অঞ্চল ছলে বলে কৌশলে করায়ত্ত করা সত্ত্বেও মুয়াবিয়া আর কখনও তৃতীয় খলিফার হত্যাকারীদের বিচারের কথা মুখেও উচ্চারণ করেনি।
কুরআন এর আলোকেঃঃ
১ আল্লাহ্ কুরআন এ বলেন- হে নবী আপনি বলে দিন শোন মুনাফিকগন, তোমরা এ কথা বল না যে , আমরা ইমান এনেছি বরং বল যে আমরা আনুগত্য স্বীকার করেছি, আর এখনও পর্যন্ত তোমাদের অন্তর এ ইমান প্রবেশ করে নি। (সুরা হুজরাত ১৪-১৫)
২ আল্লাহ্ অন্য স্থানে বলেন-তোমাদের মধ্যে যারা মক্কা বিজয় আর আগে ইসলামের জন্য অর্থ ব্যয় করেছ এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছ তারা এবং মক্কা বিজয় আর পর যারা এই কাজ করেছ তারা উভয়ে সমান নও, নিশ্চয় প্রথম দল দ্বিতীয় দল অপেক্ষা উত্তম। (সুরা হাদিদ ১০)
৩ আমরা তোমাকে স্বপ্নে সেই অভিসপ্ত বৃক্ষটি দেখিয়েছি যা মানুষকে ঝগড়া বিবাদে নিক্ষেপ করে পথ ভ্রষ্ট ও ইসলাম বিদ্বেষী করেছে ,। (সুরা বনি ইসরাইল ৬০)
উক্ত আয়াত এর ব্যখায় সহল ইবনে সাইদ বলেন -একদা রাসুল সাঃ স্বপ্ন দেখলেন বনু উমাইয়ারা তার মর্যাদা ময় মিম্বরে বানর আকৃতিতে নৃত্য করছে এই স্বপ্ন দেখার পর রাসুল সাঃ কে আর কোন দিন হাসতে দেখা যায় নি। সহল ইবনে সাইদ আরও বলেন- উক্ত আয়াতে এই স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে (শাওয়াহেদুন নবুয়ত, আল্লামা আব্দুর রহমান জামি ) সুতরাং কুরআন এর আয়াত থেকে আমরা জানতে পারলাম মক্কা বিজয় এর পর যারা স্বীয় স্বার্থ হাসিল এর জন্য মুসলমান সেজেছে তারা আল্লাহর ভাষায় মুনাফিক। আবু সুফিয়ান ও মুয়াবিয়া ইসলাম পরবর্তী জীবন এ গনিমত এর মাল ভক্ষন ও ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার করা ব্যতিত ইসলামের প্রতি ত্যাগ ও রাসুলের প্রতি ভালবাসার একটি উদাহারন ও পাওয়া যায় না। বরং ইসলাম গ্রহন এর পর ও তারা বাপ ছেলে ইসলামের ধ্বংসের চেষ্টায় লিপ্ত ছিল।
আবু সুফিয়ান যুদ্ধের উস্কানিদাতাঃঃ
ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর সিদ্দিক যখন খেলাফতে অধিষ্ঠিত হলেন তখন আবু সুফিয়ান মওলা আলী আঃ কে বললেন কি ব্যপার , কুরাইশ এর এক ব্যক্তি আপনার উপর জয়ী হয়ে গেল? হাত বারিয়ে দিন, আপনার বায়াত নিই, খোদার কসম , আপনি রাজী হলে মদিনার জমিন ঘোড় সাওয়ার ও পদাতিক বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলি। মওলা আলী আঃ আবু সুফিয়ান এর উস্কানি বুঝতে পেরে বললেন- হে আবু সুফিয়ান তোমার ফেতনা ফাসাদ এর অভ্যাস টা বুঝি এখনও গেল না? খবরদার এখান থেকে চলে যাও আর কোন দিন এই রকম প্রস্তাব নিয়ে আসবে না। (ইবনে আসীর, রাউফল হেজাব)
হযরত আলী আঃ খলিফা হবার পর একমাত্র মুয়াবিয়ার শাসনাধীন শ্যাম প্রদেশ ব্যতিত সকলেই মওলা আলী আঃ কে খলিফা হিসেবে মেনে নেন। মওলা আলীর হাতে বাইয়াত করা তো দুরের কথা পুনঃ পুনঃ দূত পাঠিয়েও মুয়াবিয়াকে সৎ পথে আনতে ব্যর্থ হয়ে মওলা আলী মুয়াবিয়ার পরিবর্তে সালাহ ইবনে হানিফ কে গভর্নর করে পাঠালেন । কিন্তু মুয়াবিয়া তাকে দামেস্কে ঢুকতে দেন নি। দীর্ঘ দিন পর ৩৬ হিজরি তে সফর মাসে মুয়াবিয়া দূতের মাধ্যমে মওলা আলীর কাছে একটা খাম পাঠালেন। খলিফা খাম টা খুলে দেখলেন তাতে কিছুই নেই। এই রকম বেয়াদবি ও ঠাট্টা করার মানে কি জিজ্ঞেস করা হলে দূত বলেন ষাট হাজার সৈন্য আপনার ঘাড়ের রগ হতে ওসমান রাঃ হত্তার প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত। (আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া ৭ম খণ্ড। ইবনুল আসীর ৩য় খণ্ড)
পঁচিশজন সাহাবীর সূত্রে প্রায় সকল হাদিস গ্রন্থে বর্নিত হয়েছে, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন- হায় ! হায় ! সত্যত্যাগী একদল বিদ্রোহী আম্মারকে হত্যা করবে । আম্মার তাদেরকে জান্নাতের দিকে আহবান করবে তারা আম্মারকে জাহান্নামের দিকে ডাকবে । তার হত্যাকারী এবং যারা তার অস্ত্র ও পরিচ্ছেদ খুলে ফেলবে তারা জাহান্নামের অধিবাসী । (১. বুখারী, ৮খন্ড, পৃষ্ঠা-১৮৫-১৮৬ । ২. তিরমিজি, ৫ খন্ড, পৃ. ৬৬৯ । ৩. মুসনাদে হাম্বল, ২খন্ড, পৃ. ১৬১,১৬৪,২৬৪; ৩খন্ড, পৃ. ৫,২২,২৮; ৪খন্ড, পৃ. ১৯৭,১৯৯; ৫খন্ড, পৃ. ২১৫,৩০৬; ৬খন্ড, পৃ. ২৮৯,৩০০) এই হাদিসটির সততা ও সঠিকতা সম্পর্কে প্রায় সকল হাদিসবেত্তা ও ঐতিহাসিকগণ একমত পোষণ করেন । আসকালানী, ইবনে হাজর, আল্লামা সূয়্যূতি লিখেছেন যে, এই হাদিসটির বর্ননা অত্যন্ত মুতাওয়াছির (অর্থাত হাদিসটি এত বেশি লোক দ্বারা বর্ণিত যে, এতে কোন প্রকার সন্দেহ থাকার অবকাশ নাই ) সিফফিনের যুদ্ধে মুয়াবিয়ার নেতৃত্বাধিন বাহিনী হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির(রা.)কে শহীদ করে দেন ।
হযরত ওমর রাঃ এর সময় মুয়াবিয়া তেমন কোন ব্যতিক্রম কাজ করার সাহস পান নি। কারন খলিফা ওমর কে ভয় পেতেন মুয়াবিয়া। হযরত ওমর এর পর হযরত ওসমান রাঃ এর সময় থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠে মুয়াবিয়া। কারন মুয়াবিয়া হযরত ওসমান রাঃ এর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও কোমল প্রকৃতির শাসক ছিলেন। সেই সুযোগ এ মুয়াবিয়া কেন্দ্রীয় সরকারের তোয়াক্কা না করে নিজস্ব ধনভাণ্ডার গড়ে তুললেন। তিনি এই সময় ব্যপক সৈন্য ও জনমত সংগ্রহ করেন। হযরত ওসমান রাঃ এর রক্তের প্রতিশোধ গ্রহন কল্পে বৈধ ইসলামী খেলাফত এর বিরুদ্ধে মুয়াবিয়ার অস্ত্র ধারন ছিল একটি রাজনৈতিক কৌশল। হযরত আলী আঃ ছিলেন ইসলামের বৈধ খলিফা। তাই মুয়াবিয়া কেন্দ্রীয় সরকারের আদেশ নিষেধ মেনে চলতে বাধ্য। মওলা আলীর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারন ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ছাড়া আর কিছুই নয়।
সিফফিন এর যুদ্ধঃ
মুয়াবিয়া যখন কিছুতেই ইসলামী খেলাফতের আনুগত্য স্বীকার করলেন না , তখন মওলা আলীর জন্য মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা রইল না। উভয় পক্ষ ফোরাত নদীর তীরে সিফফিন নামক স্থান এ মুখোমুখি হলেন। মুয়াবিয়া বাহিনী ফোরাত নদীর উপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করলেন। সৈন্য দের নির্দেশ দেয়া হল আলী আঃ এর বাহিনী কে যেন এক ফোঁটা পানিও দেয়া না হয়। ইয়াজিদ কারবালায় তার বাবার এই সুন্নত পালন করেছেন। হযরত আলী আঃ মুয়াবিয়ার নিকট দূত পাঠিয়ে বলল, আল্লাহর নেয়ামত পানি থেকে বঞ্চিত করার অধিকার মুয়াবিয়ার নেই। উত্তরে মুয়াবিয়া বললেন যুদ্ধে সব কিছু জায়েজ আছে। অতঃপর মওলা আলী আঃ ইমাম হুসাইন আঃ কে নির্দেশ দিলেন ফোরাত মুখে অভিযান পরিচালনা করার জন্য। ইমাম হুসাইন আঃ যুদ্ধ করে মুয়াবিয়ার সৈন্য দের হটিয়ে দিয়ে ফোরাত মুক্ত করলেন। অতঃপর মুয়াবিয়া শিবির এ পানির সমস্যা দেখা গেল। মুয়াবিয়া পানি চেয়ে আলীর কাছে লোক পাঠাল। আলীর পক্ষের অনেকে মওলা আলীকে অনুরোধ করলেন। উত্তরে হযরত আলী আঃ বললেন, সে অন্যায় কাজ করেছে বলে আমরা তো অন্যায় কাজ করতে পারি না। অতঃপর মুয়াবিয়ার সৈন্যদের যত প্রয়োজন পানি নেয়ার অনুমতি দান করলেন।
হযরত আম্মার বিন ইয়াসির রাঃ এর হত্যাঃ
সিফফিন এর যুদ্ধে অন্যতম ঘটনা হচ্ছে মহানবীর প্রিয় সাহাবা আম্মার বিন ইয়াসির এর হত্তা কাণ্ড। সুন্নিদের বিখ্যাত আলেম হযরত আল্লামা আব্দুর রহমান জামি রাঃ তার বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব "শাওয়াহেদুন নবুয়ত " কিতাব এ আম্মার হত্তা কাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া আছে। মহানবী রাসুল সাঃ হযরত আম্মার এর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছেন "আম্মার তোমাকে বিদ্রোহীরা শহীদ করবে।" ( বুখারী, ৮খন্ড, ২. তিরমিজি, ৫ খন্ড, . মুসনাদে হাম্বল, ২খন্ড, ৩খন্ড,৪খন্ড ৫খন্ড, পৃ. ; ৬খন্ড, নাসায়ী, তাবারানি, বায়হাকি, আবু দাউদ, ইত্যাদি হাদিস গ্রন্থে হযরত আবু সাইদ খুদরি, আবু কাতাদা আনসারি, উম্মে সালমা, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবু হুরাইরা, আমর ইবনুল আস, ওসমান ইবনে আফফান, হুজায়ফা, আবু আইয়ুব আনসারী , খোজাইফা ইবনে সাবেত, আমর ইবনুল আস, আবুল ইউসর, আম্মার ইবনে ইয়াসির সহ আরও অনেক সাহাবা এই হাদিস বর্ণনা করেন। হাদিস গ্রন্থ ছাড়া ও বিখ্যাত কিতাব শাওয়াহেদুন নবুয়ত, আহকামুল কুরআন, শ্রেষ্ঠ ইতিহাস গ্রন্থ আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া) সিফফিন এর যুদ্ধে মুয়াবিয়া কতৃক জলিল উল কদর বদরী সাহাবা হযরত আম্মার রাঃ কে হত্তা করা হয়। আম্মার যুদ্ধ করতে করতে পিপাসিত অবস্থায় শহীদ হন। মুয়াবিয়ার সৈন্য দের কাছে এক ফোঁটা পানি চেয়েও পান নি। আম্মার রাঃ এর কাঁটা মস্তক ২ জন সৈন্য মুয়াবিয়ার সামনে পেশ করা হয় পুরস্কার এর আশায়। রাসুল সাঃ এর কথায় প্রমানিত হয় যে আলী আঃ হকের উপর ছিল এবং মুয়াবিয়া বিদ্রোহী ছিল। আম্মার এর মাথা মুয়াবিয়ার সামনে রাখার পর আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস মুয়াবিয়াকে উক্ত হাদিস এর কথা বললে মুয়াবিয়াও এই হাদিস অস্বীকার করতে পারেন নি। তাই অপব্যখা করে বলেছেন- আম্মার কে তারাই হত্তা করেছে যারা বর্শার মুখে থেলে দিয়েছে। বিস্তারিত জানতে দেখুন "শাওয়াহেদুন নবুয়ত , আহকামুল কুরআন ৩য় খণ্ড, আল এসাবা ২য় খণ্ড, আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া। মুয়াবিয়ার ব্যাখ্যা আল্লামা ইবনে আসির ও মোল্লা আলী কারী, হাফেয ইবনে হাজার বাতিল করে দিয়েছেন। মোল্লা আলী কারী তার ফিকহে আকবর এ লিখেন মুয়াবিয়ার ব্যখ্যা শুনে মওলা আলী বলেন- এই ধরনের ব্যখ্যা থেকে এই কথা বলা চলে নবী নিজেই এই হযরত হামজা রাঃ এর হত্তা কারী ছিলেন।
কুরআন নিয়ে প্রতারনাঃ
সুন্নি আলেমদের মধ্যে তাবারী, ইবনে আসীর, ইবনে কাসির, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, আবুল ফিদা, শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতী, হাসান বসরি, মওলানা আব্দুর রহমান জামি, আরও অনেক অলি, ওলামায়ে কেরাম এর মতে মুয়াবিয়া মওলা আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য, সিফফিন এর যুদ্ধে মুয়াবিয়া যখন অপ্রতিরোধ্য আক্রমনের আক্রমনের মুখে খড় কুটার মত ভেসে যাচ্ছিল তখন কতিপয় সৈন্য কে বর্শার আগায় পবিত্র কুরআন ঝুলিয়ে চিৎকার করে বলতে বললেন –বিশ্বাসীদের রক্তপাত বন্ধ করা হোক, কুরআন আমাদের বিবাদ এর মীমাংসা করে দিবে। ইসলামের শত্রুদের এই কৌশল মওলা আলী আঃ বুঝতে পেরেছেন। তাই তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাবার নির্দেশ দেন। এবং বলেন আমি হলাম সবাক কুরআন। কিন্তু হযরত আলীর পক্ষের কিছু সৈন্য কুরআন এর বিপক্ষে যুদ্ধ করতে আপত্তি জানাল। মওলা আলী আঃ শেষ পর্যন্ত মুয়াবিয়ার সাথে তাহকিম চুক্তি করতে বাধ্য হল। (বিস্তারিত জানতে দেখুন- তাবারী ৪র্থ খণ্ড, ইবনুল আসির ৩য় খণ্ড, আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৭ম খণ্ড, ইবনে খালদুন ২য় খণ্ড)
রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও খেলাফত উচ্ছেদঃ
ক্ষমতা মুয়াবিয়ার হস্তগত হলে ইসলামী খেলাফত এর অবসান ঘটে এবং রাজতন্ত্রের সুত্রপাত ঘটে। মুয়াবিয়ার বায়াত এর পর সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস মুয়াবিয়ার উদ্দেশে বলেন- হে রাজা আপনার প্রতি সালাম। (ইবনুল আসির ৩য় খণ্ড) মুয়াবিয়া নিজেও বলেছেন আমি মুসলমান দের মধ্যে সর্বপ্রথম রাজা। (আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড) হাফেজ ইবনে আসীর বলেন- মুয়াবিয়া কে খলিফা না বলে রাজা বলা সুন্নত। কারন মহানবী সাঃ বলেন আমার পর ত্রিশ বছর খেলাফত থাকবে অতঃপর বাদশাহির আগমন ঘটবে। হিজরি ৪১ সালে ইমাম হোসেন আঃ এর খেলাফত ত্যাগের মাধ্যমে সে মেয়াদ পূর্ণ হয়। ( দেখুন আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড মুয়াবিয়া ইমাম হাসান এর হত্যাকারী আল্লামা আব্দুর রহমান জামি রাঃ তার বিখ্যাত কিতাব শাওয়াহেদূন নবুয়ত কিতাব এ লিখেন –হযরত ইমাম হাসান আঃ কে মুয়াবিয়ার আদেশেই তার ইস্ত্রির মাধ্যমে বিষ দেয়া হয়েছিল। বিশিষ্ট সাহাবা হাজর ইবনে আদি রাঃ কে জীবিত দাফনঃ মুয়াবিয়ার নির্দেশে ৭০ হাজার এর অধিক মসজিদ এ যখন মওলা আলী আঃ ও তার পবিত্র বংশধর দের গালিগালাজ ও অভিসম্পত দেয়া হচ্ছিল তখন হযরত হাজর ইবনে আদি কুরআন ও হাদিস থেকে শেরে খোদা মওলা আলীর শানে বর্ণিত তা পাঠ করতে লাগলেন। অতঃপর মুয়াবিয়ার নির্দেশে হাজর বিন আদি রাঃ ও তার সাত জন সঙ্গিকে হত্যা করা হয় অত্যন্ত নির্মম ভাবে। মুয়াবিয়ার নির্দেশে তাদের কে জীবিত মাটিতে পুতে মারা হয় যাতে কেও মুয়াবিয়ার আদেশ অমান্য করার সাহস না পান।( এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরন তাবারী ৪র্থ খন্ড,ইবনুল আসীর ৩য় খণ্ড,আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খন্দ,ইবনে খালদুন ৩য় খণ্ড) এই নির্মম হত্যা কাণ্ডের পর আবুল আওলিয়া হযরত হাসান বসরি রাঃ অভিমত প্রকাশ করেন যে, এ অহেতুক হত্যাকাণ্ডের কারনে মুয়াবিয়ার নিষ্কৃতি নেই। ( ইবনুল আসীর ৩য় খণ্ড, আল বেদায়া ৮ম খণ্ড) এই ঘটনা থেকে বিরত থাকার জন্য হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ আগেই পত্রের মাধ্যমে নিষেধ করেছিলেন কিন্তু মুয়াবিয়া হযরত আয়েশার এই কথা শুনেন নি। পরে হযরত আয়েশা রাঃ মুয়াবিয়ার সাক্ষাতে আসলে বলেন –হে মুয়াবিয়া তুমি হাজর কে হত্যা করতে গিয়ে আল্লাহকে একটুকুও ভয় করলা না? (বিস্তারিত দেখুন আল ইস্তিয়াব ১ম খণ্ড, তাবারী ৪র্থ খণ্ড) এই সব মুনাফিক হত্যাকারী দের সম্পর্কে আল্লাহ্ কুরআন এ বলেন- কোন মুসলমান কে যে স্বেচ্ছায় হত্যা করবে তার শাস্তি দোজখে এবং সেথায় সে চিরস্থায়ী হবে, তার উপর আল্লাহর লানত (সুরা নেছা ৯৩)
বায়তুল মালের অপব্যবহারঃ
বায়তুল মাল হচ্ছে খলিফা বা সরকারের নিকট আল্লাহ্ ও জনগনের আমানত। অথচ মুয়াবিয়া রাজা হবার পর বায়তুল মাল কে নিজের মালে পরিনত করেছেন। বায়তুল মালে জনগনের অধিকার বলতে কিছু ছিল না। তিনি তার ইচ্ছা মোতাবেক ভোগ ও বণ্টন করতেন। বায়তুল মালের হিসাব চাওয়ার অধিকার কারো থাকল না। জনগণ কে নির্ভর করতে হত বাদসার দান দাক্ষিণ্যর উপর। (ইবনুল আসীর ৪র্থ খণ্ড,আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৯ম খণ্ড) নও মুসলিম দের উপর জিজিয়া করঃ ইসলামের বিস্তার এর ফলে মুসলমান বেড়ে যায় ফলে জিজিয়া কর কমে যায়। তাই বায়তুল মাল এর আয় হ্রাস পায় যা মুয়াবিয়ার ভোগ বিলাস এ ব্যঘাত সৃষ্টি হয়। তাই মুয়াবিয়া নও মুসলিম দের মধ্যে জিজিয়া কর আরোপ করা হয়। যা সম্পূর্ণ কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী। সাধারন মানুষের ইসলাম গ্রহন এর চাইতে ও মুয়াবিয়ার ধন সম্পদ বৃদ্ধি করাই ছিল তার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। (ইবনুল আসীর ৪র্থ খণ্ড) মুয়াবিয়া কুরআন এর আদেশ লঙ্ঘন করে গনিমত এর মালের মূল্যবান সোনা চাঁদি নিজেই রেখে দিতেন। (আত তাবারী, আল ইস্তিয়াব ১ম খণ্ড, আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড,
মুয়াবিয়া মুসলিম ইতিহাসের সর্বপ্রথম বাদশাহ বা রাজা ‘তারিখুল খোলাফা’ নামক বইয়ে মুয়াবিয়াকে ‘সর্বপ্রথম বাদশাহ’ বলা হয়েছে। (এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন ভারতবর্ষের বিখ্যাত সুন্নি আলেম শাহ আবদুল আজিজ দেহলাভি।) একই বইয়ে মুয়াবিয়ার মাধ্যমে প্রচলিত নানা বিদাআত হিসেবে মসজিদে লোকজনের সামনে বসে খুতবা দেয়া, ঈদের জামাতে বিদাআতী পন্থায় খুতবা দেয়া, ঈদের জামাতের জন্য আযান চালুর বিদাআত ও ঈদের নামাজের তাকবিরের সংখ্যা কমিয়ে দেয়াকে মুয়াবিয়ার অপকীর্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মুয়াবিয়া সম্পর্কে শাহ আবদুল আজিজ দেহলাভির উদ্ধৃত তথ্য:
শাহ আবদুল আজিজ দেহলাভি তার বিখ্যাত বই তোহফায়ে ইসনা আশারিয়া বইয়ে লিখেছেন: ইমাম তিরমিজি বলেছেন, বনু উমাইয়াদের খলিফা হওয়ার দাবি মিথ্যা। তারাতো বাদশাহ মাত্র এবং তাও জঘন্য ধরনের বাদশাহ।
মিশকাত শরিফের হাদিসে সাহাবি আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হয়েছে: রাসূল (সা.) বলেছেন, খিলাফত মদিনায় আর রাজতন্ত্র সিরিয়ায়। (মিশকাতুল মাসাবিহ, ৫৮৩, দিল্লি থেকে প্রকাশিত) অর্থাত রাসূল (সা.) সিরিয়া থেকে রাজতন্ত্র শুরু হবে বলে উল্লেখ করে গেছেন। মাওলায়ে আলা হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু মদিনাতেই খলিফা হয়েছিলেন এবং সেখানেই জনগণ তার প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেছেন। অবশ্য পরে তিনি তার রাজধানী মদীনা থেকে কুফায় স্থানান্তর করেন। অন্যদিকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মুয়াবিয়ার রাজধানী ছিল সিরিয়ায়।
আল্লামা বুরহানুদ্দিন সুন্নি হানাফি ফিকাহর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হিদায়ায় আল্লামা বুরহানুদ্দিন মুয়াবিয়াকে ‘জালিম বাদশাহদের সারিতে’ স্থান দিয়েছেন এবং মাওলায়ে আলা হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহুর ন্যায় বা হকের পক্ষে ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন। (হিদায়া, খণ্ড-৩, পৃ-১৩৩, বিচারকার্য অধ্যায়)
সুন্নি মাজহাবের ফাতহুল কাদির গ্রন্থে এসেছে: “সত্য সেযুগে আলীর সঙ্গেই ছিল। কারণ, তাঁর (নেতৃত্বের প্রতি জনগণের) বায়আত (আনুগত্যের শপথ) বিশুদ্ধ ছিল ও তা গৃহীত হয়। তাই তিনি জামাল যুদ্ধে ন্যায়ের পথে ছিলেন ও মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে সিফফিনের যুদ্ধের সময়ও ন্যায়ের পথে ছিলেন।
এ ছাড়াও মাওলায়ে আলা হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহুর ন্যায় পথে থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় আম্মারের প্রতি রাসূলের (সা.) উক্তির আলোকে। রাসূল (সা.) আম্মারকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, তোমাকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হত্যা করবে। আর তাঁকে হত্যা করেছিল মুয়াবিয়ার সঙ্গীরা। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে মুয়াবিয়ার ও তার সঙ্গীরা (আমর ইবনে আসসহ) বিদ্রোহী ছিল। ”
এমন স্পষ্ট হাদিসের পরও মুয়াবিয়া ইজতিহাদি (বা ইসলামী মূল নীতির ভিত্তিতে নতুন বা স্বতন্ত্র ব্যাখ্যা আবিষ্কার) ভুল করেছেন বলে সাফাই দেয়ার কোনো উপায় নেই।
অন্যদিকে বুখারির হাদিসে (আম্মারের মানাকিব বা মর্যাদা অধ্যায়ে, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠ-৫৩০) এসেছে, (রাসুল-সা. বলেছেন,) ‘শয়তান কখনও আম্মারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারবে না।’ আম্মার আগাগোড়াই ছিলেন আলীর (আ. পক্ষে। মুয়াবিয়া ও আমর ইবনে আস তা জানা সত্ত্বেও মাওলায়ে আলা হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ অব্যাহত রেখেছিল এবং তারা আম্মারকে হত্যা করার পরও সঠিক পথ ধরেননি।
আল্লামা সুয়ুতি বলেন- ইয়াজিদের পিতা (মুয়াবিয়া) ইয়াজিদকে যুবরাজ নিযুক্ত করেন, আর তা মেনে নেয়ার জন্য জনগণের ওপর বলপ্রয়োগ করেন।
আলী আঃ কে গালি দেয়ার প্রথা চালু মুয়াবিয়ার আদেশ ছিল এরূপ- খোদার কসম , কখনো আলী আঃ কে গালি দেয়া ও অভিসম্পত দেয়া বন্ধ হবে না যতদিন শিশুরা যুবকে এবং যুবকরা বৃদ্ধে পরিনত হবে না। তামাম দুনিয়ায় আলীর ফজিলত বর্ণনা কারী আর কেও থাকবে না। (রাউফল হেজাব, আত তাবারী ৪র্থ খণ্ড, ইবনুল আসীর ৩য় খণ্ড, আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড। ) মুসলিম শরীফের ফাজায়েল এ আলী ইবনে আবু তালিব অধ্যায় এ লিখা আছে যে- মুয়াবিয়া তার সমস্ত প্রদেশের গভর্নর এর উপর এ আদেশ জারী করেন যে , সকল মসজিদের খতিব গণ মিম্বর থেকে আলীর উপর অভিসম্পত করাকে যেন তাদের দায়িত্ব মনে করেন। (মুসলিম শরীফ) কারো মৃত্যুর পর তাকে গালি দেয়া ইসলামী শরিয়তের পরিপন্থী।
সাহাবী ও তাদের আদর্শঃ
সাহাবা কাকে বলে? সাহাবার সংজ্ঞা কি? যে মুনাফিক ইসলামের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জবর দখল করে, ইসলামের আদর্শ ধ্বংস করে, ইসলামে রাজতন্ত্রের প্রবেশ ঘটান, ইমাম হাসান আঃ কে বিষ প্রয়োগ এ হত্যা করান, তাকে মুয়াবিয়া পন্থী পেট পূজারী ভাড়াটে মোল্লারা সাহাবার সম্মান প্রদান করে তার মুনাফেকিকে “ইজতিহাদ” বলে চালিয়ে দেন। কিন্তু আল্লাহ্ কুরআন এ বলেছেন- মানুষ মনে করে যে আমরা ইমান এনেছি এই কথা বললেই তাকে পরীক্ষা না করেই অব্যহতি দেয়া হবে? আমি তাদের পূর্ববর্তী দের পরীক্ষা করেছিলাম। (সুরা আনকাবুত ২-৩) পবিত্র কুরআন এর আলোকে বলা যায় – প্রকৃত পক্ষে সাহাবা বলতে বুঝায় যারা ইসলামের আদর্শে উজ্জীবিত ও মহানবীর সাঃ এর প্রতি ভালবেসে ইমান এনেছেন এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করেছেন। মক্কা বিজয় এর পর যারা জীবন বাঁচানোর তাগিদে ইসলাম কে ধ্বংস করার জন্য মুসলমান হয়েছে তারা মুনাফিক। গোলামী ছাড়া উম্মত হওয়া যায় না। বেতন খোর ,পেট পূজারী , মুনাফিক মুয়াবিয়ার অনুসারিদের কাছে প্রশ্ন যার মধ্যে মহান প্রিয়নবীর আদর্শ ছিল না তাকে আমরা কি ভাবে সাহাবা বলি? প্রিয়নবী বলেন- আমি তোমাদের সবার আগে হাউজে কাওসার এ তোমাদের সামনে থাকব, যে আমার নিকট যাবে তাকে আমি তৃপ্তি সহকারে পানি পান করাব। কিছু লোক আমার কাছে আসবে তাদের আমি চিনি এবং তারাও আমাকে ভালভাবে চিনে, অতঃপর আমার ও তাদের মাঝে দেয়াল সৃষ্টি হবে। আমি বলব এঁরা তো আমার সাহাবা। তখন উত্তর আসবে এঁরা আপনার পর পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে ফিরে গিয়েছিল , তখন আমি বলব আফসোস তাদের জন্য যারা আমার পর দ্বীনের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেছে। ( বুখারি ৪র্থ খণ্ড, মুসলিম ৭ম খণ্ড ) কুরআন এবং হাদিস মোতাবেক মুয়াবিয়া সাহাবা নন। তাছাড়া তিনি যে একজন মুনাফিক তা পূর্বে কুরআন দ্বারা প্রমান করা হয়েছে।
সাহাবাদের সম্পর্কে আওলিয়ায়ে কেরাম গনের মতামতঃ
আল্লামা সাখাবী রাঃ তার “ফথহুস মুগীস” কিতাব এ লিখেন-সাহাবা তিনিই যিনি দীর্ঘদিন নবীজি সাঃ এর সোহবত অর্জন করেছেন এবং মহান প্রিয়নবীর আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। যিনি এর বিপরীত তিনি কিছুতেই সাহাবা হতে পারেন না। আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতি বলেন- সাহাবা শব্দটি তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ যারা কুরানুল করিমে সাহাবা এ কেবার সাবেকুন এর মধ্যে গণ্য হয়েছেন। (আল খাসায়েস এ কুবরা ১ম খণ্ড) তাকিব উদ্দিন সাবেকি লাতাসুব লিখেছেন- সাহাবা তারাই যারা মক্কা বিজয় এর পূর্বে ঈমান এনেছেন। (দরজাত এ মিরকাত) আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতি এই মত সমর্থন করেন। হাদিস শরীফ এ (হাদিস এ নজুমে) তাদের কে বুঝানো হয়েছে যারা ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমান হয়েছেন। (দরজাত এ মিরকাত) মক্কা বিজয় এর পর অনেকেই উপায় না দেখে জান বাঁচানোর জন্য ও বায়তুল মাল ভক্ষন এর জন্য অনেকে ঈমান এনেছে। মুয়াবিয়া তাদের মধ্যে একজন।
কাতেব এ ওহী নামে অপপ্রচারঃ
যারা মুয়াবিয়াকে সাহাবীর সম্মান দিয়েও খুশি হতে পারেন নি তারাই তার নামের আগে “কাতেব এ অহি” জুড়ে দেন। মক্কা বিজয় এর আরও পরে মুয়াবিয়া ইসলাম গ্রহন করেন। কুরআন এর প্রায় সব আয়াত তখন নাজিল হয়ে গেছে। কুরআন সম্পূর্ণ হতে তখন মাত্র আর কয়েকটি আয়াত বাকি ছিল। অহি লিখার সৌভাগ্য হল তার কি ভাবে? তাছাড়া কুরআন এর কোন আয়াত মুয়াবিয়া লিখলেও তাতে কি হয়েছে? কখনও কখনও মুনাফিক দের সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে কে দিয়েও অহি লিখিয়েছেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। অথচ এই উবাইকে মুনাফিক হিসেবে চিহ্নিত করে সুরা মুনাফেকুন নাজিল হয়েছে। মারওয়ানকেও অনেকে কাতেব এ অহি বলে থাকেন কিন্তু তাকে তো সাহাবার মর্যাদা দেয়া হয় না। মুয়াবিয়ার অসংখ্য মুনাফেকি থাকা সত্ত্বেও যারা মুয়াবিয়ার সমালোচনা করলে ঈমান চলে যাবে বলে ফতোয়া দেন তাদের আগে নিজের ঈমান কতটুকু আছে তা ভেবে দেখা উচিত।
মুয়াবিয়ার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসঃ
কিয়ামতের ময়দানে কিছু সাহাবা নামধারী ও মহান প্রিয়নবীর মধ্যে যে দেয়াল থাকবে তা পূর্বে সহিহ হাদিস হতে বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ইমাম শাফেয়ী রাঃ এর প্রধান শিস্য আল্লামা মজনী বলেন – প্রত্যেক সাহাবার সব ধরনের কার্যকলাপ , প্রত্যেক এর জন্য হেদায়াত স্বরূপ হতে পারে। যে সমস্ত সাহাবা কতৃক গুণা সংগঠিত হয়েছে তাদের ওই সমস্ত কার্যকলাপ কে যদি হেদায়েত এর শিখা হিসেবে উল্লেখ করা হয় হয় তবে তা হবে মারাত্মক ভুল। ( জামে বয়ান আল ইলম) মহান প্রিয়নবীর বিপরীত চরিত্রের কোন লোক সাহাবা হতে পারে না। তাছাড়া কুরআন মতে সাহাবাদের চরিত্র আমাদের জন্য অনুসরণ যোগ্য না। আল্লাহ্ বলেন- সুতরাং অনুসরনীয় আদর্শ হচ্ছে মহানবী সাঃ এর চরিত্র , অতঃপর আল্লাহ্ পাক যাদের কে পবিত্র কুরআন এ পাক পবিত্র ঘোষণা করেছেন। (সুরা আহজাব আয়াত-২১) এই খানে পাক পবিত্র বলতে আহলে বায়াত বা নবী বংশ কে বলা হয়েছে। তাই প্রিয়নবী ও আহলে বায়াত ইসলামের জন্য দলিল ও আদর্শ ।
আল্লামা ইবনে জওযী রাঃ বর্ণনা করেন- আহমদ ইবনে হাম্বল তার পুত্রের প্রশ্নের জবাব এ বলেন –মাওলায়ে আলা হজরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু এর মর্যাদা সম্পর্কে যে সমস্ত হাদিস মহানবী বলে গেছেন আর কোন সাহাবা সম্পর্কে এত হাদিস বর্ণিত হয় নি। কিন্তু মাওলায়ে আলা হজরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু এর শত্রুরা এই সব হাদিস বিকৃত করে ওই সব হাদিস এ মুয়াবিয়ার নাম ঢুকিয়ে দেন। অতঃপর মুয়াবিয়ার নামে নতুন হাদিস রচনা শুরু হয়ে গেল। ( আলে রাসুল ও মুয়াবিয়া)
সাওয়াইক এ মুহারিকা নামক কিতাব এ বর্ণিত আছে যে- মাওলায়ে আলা হজরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু এর নামের স্থলে মুয়াবিয়ার নাম জুড়ে দিয়ে উপস্থিত লোকদের সামনে হাদিস বর্ণনা করা হত। (রওফল হেজাব) ইমাম ইসহাক বিন ইব্রাহিম হানাজালী রাঃ বলেন- ফজিলতে মুয়াবিয়ার কোন হাদিস ই সহিহ না। (রওফল হেজাব)
আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতি রাঃ বলেন- মুয়াবিয়ার ফজিলতের প্রচলিত হাদিস গুলা মওজু (তাজকেরাতুল মওজুয়াত, সরহে সাফারুস সআদ)
হজরত আবদুল হোক মুহাদ্দিসে দেহলভি রাঃ বলেন- বনু উমাইয়ার কর্মচারী বৃন্দ ও মসাহেব গণ যে সমস্ত হাদিস রচনা করতেন তাহাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মহালিব বিন আবি সাফরাহ, (সরহে সাফারুস সআদ)
মুয়াবিয়া সম্পর্কে বিশিষ্ট সাহাবা ও আওলিয়া দের মতামত:
১ মাওলায়ে আলা হজরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু বলেন-আমার ও মুয়াবিয়ার মহব্বত এক সাথে কোন ব্যক্তির হৃদয় আঃ থাকতে পারে না। (নাসাঈ এ কাফিয়া)
২ হজরত ওমর রাঃ বলেন – সে (মুয়াবিয়া) তোলাকাদের মধ্যে গণ্য। তার জন্য খেলাফত জায়েজ নহে। ( রওফল হেজাব,ইস্তিয়াব ইবনে আব্দুর রব)
৩ হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাঃ বলেন- আল্লাহর কসম যে অবস্থায় মুয়াবিয়া ক্ষমতা নিয়েছে , আমি হলে তা কখনো গ্রহন করতাম না। (ইবনুল আসীর)
৪ আবুল আওলিয়া হজরত হাসান বসরি রাঃ বলেন- মুয়াবিয়ার পরকাল ধ্বংস হবার জন্য শুধু এইটাই যথেষ্ট যে , সে ইয়াজিদ কে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করে তার বায়াত গ্রহন করে।( আবুল ফেদা, ইবনুল আসীর)
৫ আবুল আওলিয়া হজরত হাসান বসরি রাঃ আরও বলেন-মুয়াবিয়ার চারটি কাজের যে কোন একটি তার আখেরাত ধ্বংস হবার জন্য যথেষ্ট। ক, মুসলিম উম্মাহ ও বৈধ ইসলামী খেলাফতের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারন করা ও শূরার পরামর্শ ব্যতীত ক্ষমতা গ্রহন করা খ, শরাবি ও লম্পট পুত্র ইয়াজিদ কে স্থলাভিষিক্ত করা। গ, যিয়াদ (তার পিতার জারজ সন্তান) কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আপন ভাই হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। ঘ, মহানবীর বিশিষ্ট সাহাবা হাজর বিন আদি রাঃ ও তার সঙ্গিদের বিনা দোষে হত্যা করা। ( ইবনুল আসীর ৩য় খণ্ড, আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৯ম খণ্ড)
উল্লেখ্য যে মুয়াবিয়ার বাবা আবু সুফিয়ান তায়েফ এ এক ঘরে রাত্রি যাপন করেন। সেখানে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে সামিয়া নামক এক গ্রীক দাসীর সাথে সহবাস করেন। কিছুদিন পর তার ঔরস এ এক ছেলে জন্ম গ্রহন করেন । আবু সুফিয়ান লজ্জায় পিতৃত্ত অস্বীকার করে । এই জন্য এই ছেলের নাম হয় জিয়াদ ইবনে আবিহ অর্থাৎ জিয়াদ কারো পুত্র নয় । মুয়াবিয়া ও তাকে ভাই বলে স্বীকার করে নি। কিন্তু আমীর হবার পর ও মাওলায়ে আলা হজরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু এর বিরুদ্ধে যখন মাঠে নামল তখন জিয়াদ কে ভাই বলে স্বীকৃতি দিয়ে নিজ দলে টেনে নিল।
ইমাম যুহরী রাঃ বলেন –মুয়াবিয়ার এই কাজটি নিঃসন্দেহে শরিয়ত বিরোধী। ( আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড)
যে সব সাহাবা ও অলিরা মুয়াবিয়া কে পথ ভ্রষ্ট মানতেন তাদের তালিকা- ১ উম্মুল মুমেনিন হজরত আয়েশা রাঃ ২ উম্মুল মুমেনিন হজরত উম্মে সালমাহ রাঃ ৩ হজরত আবু দারদা রাঃ ৪ হজরত আম্মার বিন ইয়াসির রাঃ ৫ কায়েস বিন সাদ রাঃ ৬ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ ৭ আবু জর গিফারি রাঃ ৮ হাজর বিন আদী রাঃ ৯ আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ ১০ হজরত ওয়াইস করণী রাঃ ১১ হজরত হাসান বসরী রাঃ ১২ মুয়াবিয়া বিন ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া (মুয়াবিয়ার পৌত্র) ১৩ আল্লামা ইবনে আসির ১৪ শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভি ১৫ শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি
হাদিসের নামে জাল হাদিসঃ
প্রিয়নবী বলে গেছেন –আমার নামে প্রচলিত হাদিস যদি কোরানের ভাব ধারার বিরোধী হয় তাহলে জানবে তা হাদিস নয়। (তাফসীরে আহমদিয়ার মুকাদ্দামার) সুরা আস শুরার ২৩ নং আয়াত নাজিল হবার পর সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন –ইয়া রাসুলাল্লাহ্ কারা আপনার নিকটবর্তী যাদের ভালবাসা আল্লাহ্ আমাদের জন্য ওয়াজিব করেছেন? উত্তরে মহান প্রিয়নবী বললেন আলী, ফাতেমা, হাসান, হুসাইন (ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী)
মুয়াবিয়ার উপর লানত জায়েজঃ
১ মুয়াবিয়ার উপর লানত জায়েজ এই বিষয় এ কিতাব রচনা করেছেন হজরত আল্লামা বাবা খলিল আহমদ চিশতী, সাবেরী রাঃ এর কিতাব “মুয়াবিয়া পর জওয়াজে লানত কি শরিয়া দলিল” “মওলা আউর মুয়াবিয়া” এবং “কাওলে ফয়সল” এই সমস্ত কিতাব এ তিনি পবিত্র কুরআন হাদিস এর আলোকে ইজমা, কিয়াস ভিত্তিক মুয়াবিয়াকে মুনাফিক প্রমান করেছেন। ২ মুয়াবিয়ার মত শাসক দের জন্য আল্লাহ্ নিজে কুরআন এ লানত বর্ষণ করেছেন- আমি তাদের কে নেতৃত্ব দান করেছিলাম । তারা মানুষকে দোজখ এর পথে আহবান করত। কিয়ামতের দিন তারা কোন সাহায্য পাবে না। আমি তাদের প্রতি লানত বর্ষণ করি। (সুরা কাছাছ- ৪১-৪২) ৩ মুয়াবিয়ার প্রতি মহান প্রিয়নবী নিজে লানত বর্ষণ করেছেন- হে আল্লাহ্ মুয়াবিয়া ও আমর ইবনে আস কে ফিতনার মধ্যে ফেলে দাও এবং তাদের কে দোজখে নিক্ষেপ কর। (মসনদে আবু ইয়ালা) ৪ একদিন প্রিয় নবী সাঃ মুয়াবিয়া কে ডেকে পাঠান, এ সময় মুয়াবিয়া আহার রত ছিল। তাই তিনি আসতে পারবে না বলে জবাব দেন। তখন মহান প্রিয়নবী বলেন- হে আল্লাহ্ মুয়াবিয়ার পেট যেন কখনো না ভরে। ( মুসলিম শরীফ, নেসায়ি শরীফ) ৫ যখন মুয়াবিয়াকে তোমরা আমার মিম্বরে দেখবে তখন অবশ্যয় কতল করবে। ( শরহে নাহাজ আল বালাঘা, তারিখ এ বাগদাদ, ইবনে হাজার আসকালানির- তাহজিব আত তাহজিব, সিফফিন প্রভৃতি) ৬ যে আলীর সাথে শত্রুতা করে সে কাফের, তার আবাস দোজখ (মুয়াদ্দাতুল কোবরা –সৈয়দ আলী বিন সাহাবুদ্দিন মুহাম্মাদ হামাদানি রাঃ) ৭ যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম আমার সুন্নত কে পরিবর্তন করবে সে বনু উমাইয়ার একজন ( নেসায়ি, ইবনে মাজা, আবু দাউদ) ৮ মওলা আ?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks For You Comment